শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ১৫ মার্চ, ২০১৮, ০৫:৫৪ সকাল
আপডেট : ১৫ মার্চ, ২০১৮, ০৫:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আ.লীগে ক্ষোভ, বিএনপি নির্ভার

দাউদকান্দি প্রতিনিধি : দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের কুমিল্লা-১ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব আসনের মতোই এ আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের দ্বন্দ্ব, দলীয় কোন্দল ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নের কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ কারণে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চলছে মনোনয়ন দৌড়ের প্রতিযোগিতা। এমপি মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়াসহ দলটি থেকে এ পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী নবীন-প্রবীণ ডজনখানেক নেতা। মনোনয়ন নিয়ে গ্রুপিং থাকায় আগামী নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখা দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

বিএনপির একক সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী দলটির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জাতীয় পার্টির দুই নেতা মাঠে সক্রিয় আছেন। কোন্দল থাকা সত্ত্বেও আগামী নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। আসন পুনরুদ্ধারে বিএনপি এবার নির্ভার।

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ ইঞ্জিনিয়ারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। পরে তিনি ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন। এ আসনে মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া ২০০৮ সালে নবম ও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এ আসনে উপনির্বাচনসহ বিএনপি পাঁচবার, আওয়ামী লীগ তিনবার এবং জাসদ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একবার করে বিজয়ী হন।

মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এ আসনে ২০০১ সালে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দাউদকান্দি উপজেলার জুরানপুরে এক বিশাল জনসভায় জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তার। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে পরাজিত করে আসনটি প্রায় ৩৫ বছর পর পুনরুদ্ধার করেন। বর্তমানে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।

মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ তদারকির পাশাপাশি নিয়মিত সভা-সমাবেশ, জনসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ : মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি হলেও তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের দা-কুমড়া সম্পর্ক। দশম সংসদ নির্বাচন থেকেই এ অন্তর্কলহ শুরু। নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশের অভিযোগ, দলের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, আত্মীয়করণ, স্বজনপ্রীতি করেন এমপি। এ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের নবাগত সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, কুমিল্লা (উত্তর) জেলা সভাপতি আবদুল আউয়াল সরকার, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও জেলা সহসভাপতি ড. আবদুল মান্নান জয়, কুমিল্লা (উত্তর) জেলা সম্পাদকম-লীর সদস্য ব্যারিস্টার নাঈম হাসান, মেঘনা উপজেলা সভাপতি মো. শফিকুল আলম। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সেনাবাহিনীপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া, দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া (সুমন), কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক বশিরুল আলম মিয়াজী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শফিউল বশর ভা-ারী, দাউদকান্দির প্রবীণ সাংবাদিক শাহজাহান।
মনোনয়নের ব্যাপারে মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া আমাদের সময়কে বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় দাউদকান্দি-মেঘনা উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ও আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেছি। আসনটি ধরে রাখার কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি আমাকেই করবেন বলে আমার বিশ্বাস।

দাউদকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব চৌধুরী (লিল মিয়া) আমাদের সময়কে বলেন, দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলায় আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেছেন সাংসদ মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এ আসনে বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তার বিকল্প এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগে কেউ নেই। শেষ পর্যন্ত সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেন এ নেতা।
মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ মিয়া রতন সিকদার বলেন, মেঘনাবাসী দলমত নির্বিশেষে গণমানুষের নেতা শফিকুল আলমকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে চায়। তবে সভানেত্রী যাকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে আমরা কাজ করব।

বিএনপি : বিএনপির একক সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে গ্রুপিং না থাকায় সাংগঠনিকভাবে দলটি অনেক শক্তিশালী।

ড. মোশাররফ হোসেন প্রায়ই ঢাকা থেকে এলাকায় এসে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার, বিভিন্ন সামাজিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন ও গণসংযোগ করেন। তিনি একক প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। অবশ্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অন্য কোনো আসনে প্রার্থী হলে তার ছেলে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলেও জানিয়েছে বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র নেতাদের জেলে রেখে এ দেশে নির্বাচন হবে না। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সব মিথ্যা-বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে এবং দেশে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে।

দাউদকান্দি উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম সামছুল হক বলেন, ইনশাআল্লাহ ভোট সুষ্ঠু হলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীই আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।

কুমিল্লা (উত্তর) জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) : এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মো. ইফতেকার আহসান (হাসান) এবং জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আবু জায়েদ আল মাহমুদ মাখন সরকার।

জামায়াত : এ আসনে জামায়াতের কাউকে প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। আগের মতো সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, এ আসনে আমাদের কোনো প্রার্থী নেই। জোটগত নির্বাচন হলে আমরা বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব।
ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব ও বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়