শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১৪ মার্চ, ২০১৮, ০৮:০২ সকাল
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০১৮, ০৮:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ন্যায়দণ্ড হাতে নারীর অগ্রযাত্রা

ডেস্ক রিপোর্ট : ১৯৭৫ সালে দেশে নারী বিচারক ছিলেন একজন। আর এখন সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৫ জনে। কালের পরিক্রমায় পিছিয়ে নেই নারী বিচারকরা। অধস্তন থেকে সর্বোচ্চ আদালত সব জায়গায় নারী বিচারকদের এখন সফল পদচারণা। বিচারপ্রার্থী জনগণকে ন্যায়বিচার প্রদানে একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তারা। সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে ন্যায়দণ্ড হাতে এগিয়ে চলছেন সামনের দিকে।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটিতে পুরুষের পাশাপাশি নারী বিচারকরাও তাদের কর্মের মধ্য দিয়ে একেকজন পরিপূর্ণ বিচারক হয়ে উঠছেন। আর এর প্রথম বীজটি ৪০ বছর পূর্বে বপন করেছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। যিনি দেশের প্রথম নারী বিচারক। তিনি ব্যর্থ হননি, লিখেছেন সফলতার গল্প। আর তার দেখানো পথেই এখন হাঁটছেন প্রায় সাড়ে চারশ নারী বিচারক। যাদের ওপর অর্পিত রয়েছে বিচারের গুরুদায়িত্ব। শুধু বিচারের দায়িত্বই নয়, বিচার বিভাগ থেকে প্রেষণে আসা অনেক নারী বিচারকই প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পন্ন করছেন সাফল্যের সঙ্গে। যাদের অনেকেই আছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, আইন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ৮৪ জন বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চারজন বিচারক রয়েছেন। সেখানে কোনো নারী বিচারপতি নেই। আর হাইকোর্টে বিচারপতি রয়েছেন ৮০ জন। যার মধ্যে নারী বিচারপতি পাঁচজন। এরা হলেন: বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি জিনাত আরা, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন। প্রথম চার বিচারপতিই হাইকোর্টের চারটি ডিভিশন বেঞ্চের প্রতিনিধিত্ব করছেন। রিট ও ফৌজদারি মোশন সংক্রান্ত মামলার শুনানি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করছেন দ্রুততার সঙ্গে। দিচ্ছেন বিভিন্ন মামলায় যুগান্তকারী রায়।

১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের নারীরা বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও তা বিসর্জন দিতে হয়েছে। কেননা ওই সময় পর্যন্ত নারীদের বিচারক হওয়ার পদে পরীক্ষা দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। পরের বছরই ওই বিধি-নিষেধ তুলে নিলে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় নারীদের। এ প্রসঙ্গে অবসরে যাওয়ার দিন দেওয়া এক সংবর্ধনার জবাবে আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেছিলেন, ‘১৯৭৪ সালে বিচারক (মুনসেফ) পদে একে একে পরীক্ষার সব কয়েকটি ধাপে পাস করে আমি নিয়োগপত্র পাই। ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে দেশের প্রথম নারী বিচারক হিসেবে যোগ দেই। তখন অনেকেই আমাকে স্বাগত জানিয়েছিল, আবার অনেকেই নাক সিঁটকেছিল। কেউ কেউ বলেছিল নারী বিচারক আবার কী বিচার করবে? প্রথম নারী বিচারক হিসেবে আমি ব্যর্থ হলে হয়ত আজ বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ নারী বিচারক হতো না।’

আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে দেশের অধস্তন আদালতে বিচারক রয়েছেন ১ হাজার ৬৭৩ জন। যার মধ্যে ৪৩৫ জন নারী বিচারক। এর মধ্যে জেলা জজ পদমর্যাদায় রয়েছেন ৩৫ জন নারী বিচারক। আর ৩১ জন অতিরিক্ত জেলা জজ, ৯৫ জন যুগ্ম জেলা জজ, ১০৭ জন সিনিয়র সহকারী জজ এবং ১৭৭ জন সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংখ্যার অনুপাতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের এক-চতুর্থাংশই নারী বিচারক। তবে উচ্চ আদালতে এ সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। এ কারণে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন উচ্চ আদালতে আরও অধিক সংখ্যক নারী বিচারপতি নিয়োগে সচেষ্ট থাকার কথা বলেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণের কথা ভাবাই যেত না। আজ তা পরিবর্তন হয়েছে এবং নারী-পুরুষের সমতা নির্ধারণে অগ্রগতি হচ্ছে। অধিকাংশ নারী বিচারক তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই আরও নারী বিচারক নিয়োগের বিষয়টি ‘সক্রিয়ভাবে বিবেচনা’র আশ্বাস দেন প্রধান বিচারপতি।

নারী বিচারকদের অগ্রযাত্রা সম্পর্কে বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশনের সভাপতি জ্যেষ্ঠ জেলা জজ তানজীনা ইসমাইল ইত্তেফাককে বলেন, পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা নারীর অনুকূলে থাকায় নারীরা বিচারক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। আজকাল পরিবার ও সমাজ নারীকে বিচারক ও আইনজীবী হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত। বিচার করার ক্ষেত্রে নারীদের মেধাগত যোগ্যতা কম-সাধারণ মানুষের মধ্যে একসময় যে ভুল ধারণা ছিল তার অবসান হয়েছে। আমাদের নারী বিচারকদের কর্মদক্ষতায় বিচারপ্রার্থী জনগণ সন্তুষ্ট ও আস্থাশীল। আর নারী বিচারকদের প্রতি বিচারপ্রার্থী জনগণের আস্থা থাকায় তারা সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জেলা জজ উম্মে কুলসুম জানান, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের দশম পরীক্ষায় ১৬৬ জন সহকারী জজ নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৪৯ জন নারী সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, নারী বিচারকরা অধিক পরিশ্রমী ও সত্। তাদের কর্মদক্ষতায় কর্তৃপক্ষও সন্তুষ্ট।

বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন পাল্টেছে। পরিবর্তন হয়েছে মানসিকতার। এখন নারী বিচারকদের সকলেই সম্মানের চোখে দেখেন। তবে বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু অবকাঠামোগত সমস্যা এখনো বিদ্যমান। যেমন জেলা জজশিপে ডে কেয়ার সেন্টার নেই। স্বামী-স্ত্রী দু’জন বিচারক কিন্তু একই জেলায় পদায়ন না হওয়ায় তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান হলে নারী বিচারকরা মামলা নিষ্পত্তিতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন। সূত্র : ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়