শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৪ মার্চ, ২০১৮, ০৭:৪৬ সকাল
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০১৮, ০৭:৪৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কার ভুলে দুর্ঘটনা?

মামুন : নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানতে উদগ্রীব সবাই। ইউএস বাংলা ও ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করলেও উভয় পক্ষের বক্তব্য থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিমানের পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এটিসি টাওয়ারের মধ্যে যোগাযোগগত ত্রুটির কারণে ওই দুর্ঘটনা হয়েছে। ৭১ আরোহী নিয়ে গত সোমবার রওনা হওয়া ড্যাশ এয়ারক্রাফটটি বিধ্বস্ত হয়ে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি ২৬ জন। এ ছাড়া আহত ১০ জন চিকিৎসাধীন।

ইউএস বাংলা দুর্ঘটনার জন্য কন্ট্রোল রুমের ভুল বার্তাকে দায়ী করলেও ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে,বিমানের পাইলট ভুল রানওয়েতে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন। তবে অতীতেও এই কন্ট্রোল রুমের ভুল বার্তা দেওয়ার নজির রয়েছে। জার্মান বিমান-নিরাপত্তা বিষয়ক ওয়েবসাইট জেএসিডিইসি থেকে প্রচার হওয়া অডিওতে দুইটি রানওয়েই অবতরণে প্রস্তুত বলে নির্দেশনা শোনা গেছে। এএফপির সরবরাহকৃত আরেক অডিওতে দুই যাত্রী কন্ট্রোল রুম থেকে দেওয়া শেষ বার্তাকে ভীতিকর বলেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরাও অবতরণে অপেক্ষারত অবস্থায় বিমানটিকে রানওয়ের ওপর দিয়ে ঘুরপাক খেতে দেখেছেন। এদিকে ঘটনার দিন ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা ৬ কর্মকর্তাকে অন্যত্র স্থানান্তরের ঘটনাকে সন্দেহজনক মনে করছে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে নেপাল। ফাঁস হওয়া অডিও বার্তাও তদন্ত করবে তারা। তদন্তের ফলাফল যাই হোক, দুর্ঘটনার পর পাওয়া বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে প্রকৃত দায়ীকে চিহ্নিত করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বাংলাদেশ থেকে টিম যেতে প্রস্তুত থাকলেও পাঠাতে হয়নি বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।

বিমান দুর্ঘটনার পেছনে সাধারণত দুই ধরনের কারণ থাকেÑ এক. কারিগরি ব্যর্থতা এবং দুই. মানবসৃষ্ট ত্রুটি। যান্ত্রিক ত্রুটিকে বলা হয়ে থাকে কারিগরি ব্যর্থতা বা টেকনিক্যাল ফেইলিউর। আর মানবসৃষ্ট ত্রুটি বা হিউম্যান এরর বলতে বোঝায়Ñ যারা বিমানটি চালনা, পরিচালনায় সম্পৃক্ত এবং উড্ডয়ন ও অবতরণের প্রাক্কালে প্রয়োজনীয় চেক-আপ করেন, তাদের ভুল বা দায়িত্ব পালনে অবহেলা।

সোমবারের দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত বিচার বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতদৃষ্টে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য মানবসৃষ্ট ত্রুটি বা হিউম্যান এরর-ই দায়ী বলে মনে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, ত্রুটি কার? পাইলটের ভুল বা অদক্ষতা? নাকি বিমানটি যেখানে অবতরণ করতে যাচ্ছিল, সেই বন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি)? এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। এর সমাধান আসতে পারে উদ্ধারকৃত ব্ল্যাকবক্সের তথ্য যাচাই থেকে। যদিও ব্ল্যাকবক্সের তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের আগে একে অন্যের ঘাড়ে ত্রুটি চাপিয়ে দিতে চলছে পাল্টাপাল্টি বাহাস। বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সোমবার রাতেই ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নেপাল সরকার। ইতোমধ্যেই কমিটি তদন্তে নেমেও পড়েছে। তবে কবে নাগাদ তারা অনুসন্ধান শেষ করতে পারবেন এবং এর পর প্রতিবেদন দেবেন, সে বিষয়টি পরিষ্কার না।

প্রসঙ্গত প্রতিটি উড়োজাহাজে একটি ব্ল্যাকবক্স থাকে, যা দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি প্রকৃতপক্ষে এমন একটি যন্ত্র, যেটি ককপিটের যাবতীয় কথাবার্তা, পাইলটের নির্দেশনা, ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে তার কথোপকথনসহ বিমানের প্রয়োজনীয় কারিগরি তথ্য রেকর্ড হয়ে থাকে। এটিকে ফ্লাইট রেকর্ডারও বলা হয়ে থাকে।

চ্যানেল নিউজ এশিয়া ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, তারা দুর্ঘটনার দায় দিয়েছেন বিমানের পাইলটকে। বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক রাজ কুমার ছেত্রি বলেছেন, নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ রানওয়েতে নামতে পারেনি বিমানটি। তার দাবি, কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে বারবার পাইলটকে জ্ঞিজ্ঞেস করা হয়েছে, সব ঠিক আছে কিনা। পাইলট ‘হ্যাঁ’ উত্তর দিয়েছেন।

আল জাজিরা তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে,জেনারেল ম্যানেজার বিমানটি কন্ট্রোল রুমের নির্দেশনা অনুসরণ করেনি। তিনি দাবি করেন, ‘বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বিমানটিকে দক্ষিণ দিকে অবতরণের অনুমোদন দিলেও তারা উত্তর দিকে অবতরণের চেষ্টা করে।’

তবে এ তথ্য মানতে নারাজ ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আফিফ। তিনি বলেন, এখনই নিশ্চিত কিছু বলতে না পারলেও আমাদের আশঙ্কা কাঠমান্ডু বিমান কর্তৃপক্ষের কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া নির্দেশনায় বিভ্রান্ত হয়েই পাইলট আবিদ হাসান ভুল রানওয়েতে নেমেছিলেন। ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সিইও আসিফ ইমরান দুর্ঘটনার আগে বিমানের ক্যাপ্টেন ও কাঠমান্ডু এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি-র মধ্যকার কথোপকথনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুম থেকে পাইলটকে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছিল বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়