নড়াইল প্রতিনিধি: মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের পর নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় বৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি কালিয়া উপজেলা বিএলএফ কমান্ডার ইমদাদুল হক মোল্যা।
বিএলএফ কমান্ডার ইমদাদুল হক মোল্যা বলেন, কালিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র, মুক্তিযোদ্ধা বি এম ইকরামুল হক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অবৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এর ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের পর ব্যবস্থা নেয়। যাচাই বাছাইয়ে পর বৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। অবৈধভাবে কেনো মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা দেয়া হচ্ছে না।
এর আগে দুদকের এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে ইকরামুল হক এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, কালিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও মুক্তিযোদ্ধা বি এম ইকরামুল হক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে আবেদনকৃত কালিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই শুরু হয়, যা চলে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ৬ সদস্যের কমিটি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন। যাচাই-বাছাই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন কালিয়া উপজেলা বিএলএফ কমান্ডার ইমদাদুল হক মোল্যা, সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, সদস্য উপজেলা কমান্ডার তরিকুল ইসলাম মন্নু, মুজিবর রহমান মোল্যা, শামছুল আলম কচি, শাহাবুদ্দিন চৌধুরী এবং জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) প্রতিনিধি হিসেবে কালিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বিএম একরামুল হক টুকু।
কালিয়া উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গ্রেজেড অনুযায়ী ৭৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হন। এরমধ্যে ১৮ জনের নামে অভিযোগ ওঠায় তাদের ভাতা স্থগিত করা হয়। ভাতাপ্রাপ্ত আরো ৫৩ জনের নামে বিভিন্ন স্থান থেকে লিখিত অভিযোগ ছিল। এছাড়া অনলাইনে আবেদন করেছিলেন ৮২২ জন। এদেরকে ডেকে ইউনিয়ন ভিত্তিক সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি তারিখের ভিতর যারা আসতে পেরেছিলেন তাদের জন্য আরো কিছুদিন সময় বাড়ানো হয়েছিল বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
কালিয়া উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের হিসাবে কালিয়াতে প্রথমে ৫৫৯ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পরবর্তীতে চেষ্টা তদ্বির করে প্রায় ৮’শ মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিলেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে সত্য স্বীকারে আমার কোন আপত্তি নেই ,অবৈধভাবে অনেকে টাকা পয়সা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হবার চেষ্টা করেছেন। সঠিক যাচাই বাছাই করলে এদের মধ্যে শতকরা পাঁচ ভাগও টিকবে না।
যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি ইমদাদুল হক মোল্যা বলেন, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেকে ছিলেন। এখানে আমরা কোন ঘুষ, দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার প্রশ্নই উঠে না, যারা এসব তঞ্চকতার আশ্রয় নিয়েছেন তাদের আমরা স্থান দেয় নি। আমরা সকলের মতামত নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে যাচাই বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) প্রতিনিধি একরামুল হক টুকু বলেন, এখানে কোন অমুক্তিযোদ্ধা যাচাই কমিটিতে নেই, যা আগে বিভিন্ন সময়ে ছিলো। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহানুভুতিশীল।
এর আগে যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব সাবেক কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, আবেদন কারীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ টাকা দিচ্ছেন এমন খবর আমার কানেও এসেছে, অনেকে টেলিফোন করে আমাকে জানিয়েছেন। এর বাইরে আমি এইও শুনেছি, আবেদনের জন্য একটি ফরম আমরা বিনামূল্যে সরবরাহ করছি, সেই ফরম ও নাকি বাইরে ৫’শ/ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ লেনদেনের ঘটনাগুলো সত্যি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার কাছে অত্যন্ত দুঃখজনক মনে হয়েছে।
কালিয়া উপজেলা কমান্ডার তরিকুল ইসলাম মন্নু মুক্তিযোদ্ধা যাচাইয়ে টাকা পয়সা গ্রহনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এইগুলো সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট। কালিয়ার সব মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের দিয়ে বাছাই কমিটি করা হয়েছিল। কেউ কোন অন্যায়ের চেষ্টা করতে পারে কিন্তু আমরা সরকারি নীতিমালার বাইরে একচুলও ছাড় দেয় নাই। কোন মুক্তিযোদ্ধা নেতা যাচাই বাছাই কমিটিতে আসতে না পেরে কমিটির নামে দুর্নাম ছড়ানোর জন্য অভিযোগ আনার চেষ্টা করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :