শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১২ মার্চ, ২০১৮, ০৪:৩০ সকাল
আপডেট : ১২ মার্চ, ২০১৮, ০৪:৩০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির অবদান  তুলনামূলকভাবে নিম্নমুখী কেন?

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : নদীর অববাহিকাই মানব সভ্যতার সুতিকাগার, কৃষিই প্রাচীনতম জীবিকা আর সবুজ শ্যামল প্রান্তরে প্রাণী সম্পদের সমারোহ-ই জীবনায়নের স্পন্দন। বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল যে এসব সত্য ও সম্ভারে সমৃদ্ধ তা তো চর্যাপদের পাতা থেকেও জানা যায়। সমুদ্র, নদীমেখলা প্রকৃতি ও সবুজ-শ্যামল পরিবেশের সংমিশ্রণে উপকূল অঞ্চল গোটা দেশের, সমাজের, অর্থনীতির জন্য অনিবার্য অবকাঠামো শুধু নয়, উন্নয়ন প্রয়াস প্রচেষ্টায় সার্বিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যও জরুরি। এটা সুপ্রাচীন কাল থেকে, ইতিহাসের পথ ধরে এ সত্য সতত সকল ভূগোলে স্বীকৃত থাকলেও প্রাচীন এই জনপদে তা যেন সব সময় নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হয় যখন পালা করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের  কবলে পড়ে সবাই। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে পড়ে, তাপমাত্রার পবির্তন প্রসূত তারতম্য সূত্রে সমূদ্রের তলদেশ স্ফিত হয়ে ওঠার ফলে পরিবেশ ভারসাম্যহীনতার যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে বিশ্বের প্রায় সকল সমূদ্র উপকূল বেষ্টনীতে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বাংলাদেশের জন্য তা মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের অশনি সংকেত দিয়ে চলেছে।

বাংলাদেশের নি¤œাঞ্চল, বিশেষ করে অদূরবর্তী দ্বীপাঞ্চল সামান্য জলোচ্ছ্বাাসের ছুতানাতাতেই তলিয়ে যাচ্ছে, তা উদ্ধারে বশংবদ কোনো কার্যক্রম সফল হচ্ছে না। সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্র বিপন্ন হতে চলেছে এর প্রভাবে। বাংলাদেশের উকূলীয় অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির জন্য তা দারুণ দুঃসংবাদ বৈকি।         কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা গুণগত ও কার্যকরণগত পরিবর্তন সময়ের প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। স্বাধীনতা লাভের চার দশকের মাথায় এসে দেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে যতগুলো পরিবর্তন তথা সাফল্যজনিত সূচক শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন অন্যতম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। সে সময় চাষাবাদযোগ্য ২৫৫ লক্ষ একর জমিতে ১০০ লক্ষ টন ধান উৎপাদিত হত, সে  তুলনায় ২০০৮ সালে জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৪০ লক্ষে দাঁড়ালেও এ সময় ২৬১ লক্ষ একর জমিতে ধান উৎপাদিত হয়েছে ২৯০ লক্ষ মেট্রিক টন অর্থাৎ প্রায় ৩ গুন। দ্বিগুণ বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য তিনগুন বর্ধিত খাদ্য শষ্য উৎপাদন নিঃসন্দেহে খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি বা সাফল্য। ১৯৭০ থেকে ২০০৮ সময়ে বাজেটে ক্রমান্বয়ে কৃষি খাতের জন্য বরাদ্দের হিস্যা যথেষ্ট হ্রাস (১৯% থেকে ৭%!) পাওয়া সত্ত্বেও এই প্রবৃদ্ধি একটি নীরব বিপ্লবের সাক্ষ্য বহন করে আর এর অগ্রসাধক হলো দেশের আপামর কৃষক সমাজ।

এই প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির অবদান তুলনামূলকভাবে নি¤œমুখী। উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিখাত প্রধানত শষ্য ও অশষ্য (নন ক্রপ) এ দুভাগে বিভক্ত।  প্রথমত বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত হওয়ার কারণে  খাদ্য শষ্য উৎপাদন তুলনামূলকভাবে এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়নি। একটি পরিশীলিত সমীক্ষা-গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা যায় ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৭ সালের মধবর্তী মাত্র ১৩ বছরে জাতীয় পর্যায়ে যেখানে প্রায় দ্বিগুন পরিমাণ শষ্য (খাদ্য ও অর্থকরী ফসল) উৎপাদিত হয়েছে সেখানে উপকূলীয় অঞ্চলে একই সময়ে শষ্য উৎপাদন বাড়েনি বরং কমেছে।

উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও চাষাবাদ পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েও কাক্সিক্ষত ফল ততটা আসেনি যতটা অশষ্য অর্থকরি খাতে অর্থাৎ মৎস্য চাষসহ প্রাণী সম্পদ চাষ ও বিকল্প পণ্য  উৎপাদন ক্ষেত্রে এসেছে। অশষ্য খাতে আপাত ব্যাপক সাফল্যের ফলে কৃষি থেকে গড়পড়তায় জিডিপিতে এখনো সমানুপাতিক হারে অবদান (২৫%-২৩%)রেখে চলেছে এই অঞ্চল। অশষ্য খাতের এই সাফল্যকে  টেকসই করা যেমন প্রয়োজন একই সাথে শষ্য উৎপাদনে, জমির সঠিক ব্যবহারে, উপায় উপাদান সরবরাহে, চাষ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানোয় এবং এমনকি ভূমি প্রশাসনেও সংস্কার আবশ্যক।

মোদ্দা কথায় সময়ের পেক্ষাপটে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে তার গতিপ্রকৃতি বিচার বিশ্লেষণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে এ জন্য যে একে যথাসময়ে যথাপ্রযতœ প্রদান করা সম্ভব না হলে, উষ্ণায়নের প্রভাবক ক্ষয়ক্ষতিকে যথা নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলা করা সম্ভব না হলে সমূহ সম্ভাবনাময় একটি গুরুত্বপূর্ন অংশের আবদান থেকে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় অর্থনীতি শুধু বঞ্চিতই হবে না, সময়ের অবসরে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রভাবে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এটি গোটা দেশ ও অর্থনীতির জন্য দূর্ভাবনা-দূর্গতির কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দেশের অন্যতম দুটি সামুদ্রিক বন্দর, প্রাকৃতিক সম্পদের স্বর্গ সুন্দরবন এবং পর্যটন সম্ভাবনা সমৃদ্ধ কক্সবাজারকে কার্যকর অবস্থায় পাওয়া  জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অভিযাত্রার জন্য যে কত জরুরি তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।  সাম্প্রতিককালে সিডর ও আইলায় সুন্দরবন এবং সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী সম্পদের ওপর যে দূর্বিসহ ও নেতিবাচক প্রভাব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় তাতে উপকুলীয় কৃষি অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে ভাববার অবকাশ দেখা দিয়েছে।     লেখক : সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়