আশিক রহমান : লেখক-প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটা এখন একটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, অথচ বিভিন্ন সময় সেটা নানারকমভাবে রাজনীতিরও শিকার হতে হয়েছে। সূচনাটা হয়েছে মুক্তিয্দ্ধু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে, অনেকগুলো পরিত্যক্ত জমি ও কলকারখানা দেওয়া হলো যে, স্বনির্ভর একটা প্রতিষ্ঠানে যেন পরিণত হয় ।
'বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল খুবই সুদূর প্রসারী। একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার ইস্যুটাও তখন উঠে এসেছিল। কিন্তু পঁচাত্তরের পরে নানা রকম রাজনৈতিক বিপর্যয়ও এই জায়গাটাতে প্রভাব বিস্তার করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি, নীতিভ্রষ্ট মানসিকতাও।'
আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই দুর্ভাগ্য থেকে তো আমাদের রক্ষা পেতে হবে। চলতি মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ যে তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার পরে তালিকাটা যেন সঠিক হয়। এ দফায় অনেক সময় নেওয়া হলেও সঠিক একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকাই দেশবাসী প্রত্যাশা করছে। কারণ এই ইস্যুটা অনেক বেশি সংবেদনশীল। এখানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, সরকার প্রত্যেককেই খুব দায়িত্বশীল হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটা তৃণমূল থেকে যাচাই-বাছাই হয়ে আসবে। প্রক্রিয়াটা ঠিক আছে, কিন্তু প্রক্রিয়ায় যেন অশুভ কোনো শক্তির থাবা আসতে না পারে, সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রকাশ করতে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় যাতে কোনো ব্যতয় না থাকে, তা খুব ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা দরকার। এটি এখন একটা নীতিমালার মধ্যে হচ্ছে। যারা করছে, তা দেখার দায়িত্বও তাদের। আমরা জানি, অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যারা অসচ্ছল, নানাভাবে জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন তারা যখন এই স্বীকৃতিটা পান তখন তাদের জন্য বড় একটা জায়গা তৈরি হয় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে। একইসঙ্গে আর্থিকভাবেও একটা স্বস্তির জায়গা নিশ্চিত হয়। গ্রামের একজন দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকাও অনেকরকমভাবে সহায়তা যুগিয়েছে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা অভাবগ্রস্ত, যাদের ঘরবাড়ি নেই, তা করে দেওয়ার হবে ব্যবস্থা করেছে সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে নেওয়া সরকারি কর্মসূচিগুলো ঠিক আছে। বাস্তবায়নও হয়তো নিখুতভাবে হবে না, তবে যাদের প্রাপ্য তারা যেন এই স্বীকৃতি ও সুবিধাগুলো পান।
এক প্রশ্নের জবাবে মফিদুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরও যেন যাচাই-বাছাইয়ের জায়গাটা থাকে। সেখানে যদি কেউ অসততা অবলম্বন করে তাকেও যেন চিহ্নিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়। পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে যদি কেউ যদি বাদ পড়ে যান, তাদের জন্য যেন দরজাটা খোলা রাখা হয়। তালিকা প্রকাশের পর যদি দেখা যায়, প্রকৃত কোনো মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়ে গেছেন, তার অর্ন্তভুক্তিরও সুযোগ রাখতে হবে। বর্জনের একটা বিধান থাকবে, গ্রহণেরও বিধান থাকতে হবে। খুব বিচক্ষণতার সঙ্গে তা প্রয়োগ করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :