সজিব খান: দু’বছর আগে যে ছেলেটি স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আবেদন করেছিল। সে নিজেই এখন বাঁচতে চান। ভারতের সুপ্রিমকোর্টে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে রায়ের পরে ‘আমি মরতে চাই না’ কথাটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন মালদহের মহদিপুরের যুবক সুমন দাস।
তিন বছর আগে হরিশ্চন্দ্রপুরে ট্রাক থেকে পণ্য নামাতে গিয়ে জখম হয়েছিলেন ইংরেজবাজারের মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এ কে গোপালন কলোনির বাসিন্দা সুমন। তার মেরুদন্ড ভেঙে গিয়েছিল এবং দুটি পা অকেজো হয়ে গিয়েছিল। বেঙ্গালুরুতে সুমনের মেরুদন্ডে জটিল অস্ত্রোপচার হয়। তারপরেও পা দু’টি নাড়াতে পারতেন না তিনি। হাসপাতাল থেকে চার মাস ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে বলা হলেও আর্থিক সমস্যার কারণে চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। সুমনের বাবা অনেক আগেই মার গিয়েছেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছোট। এই অবস্থায় সুমনের মনে হয়েছিল, অন্যের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকা অর্থহীন। তাই স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে মালদহের তৎকালীন জেলাশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি।
সেই সুমনই এখন বলছেন, ‘‘মরতে চাই না। আমি হাঁটতে চাই।’’ এই পরিবর্তন সম্ভব হল কী ভাবে?
চিঠি পাঠানোর পর সুমনকে নিয়ে হইচই শুরু হলে প্রশাসন তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসে। আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ফিজিওথেরাপিস্ট সুনির্মল ঘোষ। তিনি তাঁর নিজস্ব চেম্বারে সুমনকে রেখে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা করছেন।
সুমন বলেন, ‘প্রশাসন, চিকিৎসক সুনির্মলবাবু আমাকে নিখরচায় উন্নত মানের চিকিৎসা দিচ্ছেন। আমি এখন হাঁটতেও পারছি। তাই আর মরতে চাই না।’’ একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
সুমনের চিকিৎসক সুনির্মলবাবু বলেন, “অর্থের জন্য কোনও রোগী মারা যাক, এক জন চিকিৎসক হিসেবে আমি কখনও তা চাই না।’’ এখন ওয়াকার নিয়ে দাঁড়াচ্ছেন সুমন। কখনও তাতে ভর দিয়ে এগোচ্ছেন এক-দু’পা। এখন তাকিয়ে আছেন সামনের দিকে, কবে নিজের পায়ে হাঁটতে পারবেন। সূত্র: আনন্দ বাজার
আপনার মতামত লিখুন :