শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১১ মার্চ, ২০১৮, ০৪:১৪ সকাল
আপডেট : ১১ মার্চ, ২০১৮, ০৪:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুনামগঞ্জে দিরাই-শাল্লায় বাঁধনির্মাণ প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ

দীপক চৌধুরী : হাওরে ফসলহানি আর কৃষকের হাহাকারের পর বছরজুড়ে মন্ত্রী-এমপির এত আলোচনা-পরিকল্পনার পরও নির্ধারিত সময়ে একটি বাঁধেরও কাজ শেষ হলো না। গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ হয়েছে ৩৫ থেকে ৬০ ভাগ। তৃণমূলের কৃষকদের মন্তব্য, কৃষকদের মাথায় তুলে রাখার বদলে পায়ে পিষণ করে মারা হবে এবার। কারণ, যে বাঁধের জন্যে এতো হৈ চৈ, এতো কথা; বাস্তবে নির্মাণকাজে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। গত বছরের ঢলে বোরোফলন তলিয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট নিজে দেখতে ৩০ এপ্রিল শাল্লা যান। বিপুল ত্রাণ সঙ্গে নিয়ে যান। মন্ত্রী-মিনিস্টার-এমপিরাও ছিলেন তাঁর সঙ্গী। এরপর তৈরি হয় নতুন নীতিমালা।

নীতিমালা অনুযায়ী, হাওরের প্রকৃত কৃষক এবং হাওরে যাঁদের জমি আছে, তাঁদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) করে এসব কাজ করার কথা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নীতিমালার উল্টো কাজ হয়েছে। নামে- বেনামে বাঁধের কাজে যুক্ত হয়ে কিছু লোক ভয়ঙ্কর গাফিলতিতে নেমেছে। নদীর তীর ঘেঁষে যেসব প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখেও না দেখার ভান করছে। একাধিক কৃষক বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিবান্ধব। তৃণমূলের মানুষের মন্তব্য, দরকার হলে কৃষকদের বোরোফসল রক্ষার কাজটি দেখভাল করার দায়িত্ব গ্রহণ করুক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। দিরাই-শাল্লার মাটি আওয়ামী লীগের উর্বর ঘাটি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এলাকাবাসী কিছুই বোঝে না। শুধু দিরাই-শাল্লা নয়, সুনামগঞ্জে, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট অঞ্চলে নৌকার ভোট বেশি সব সময়ই। সুনামগঞ্জের ৫০টি হাওরে ফসল রক্ষায় বাঁধের কাজ হচ্ছে। এ জন্য গঠন করা হয়েছে ৯৬৪টি পিআইসি। কোনো কোনো পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে। এ কাজে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২২ কোটি টাকা। গত বছর হাওরে ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি-অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ ওঠায় নতুন নীতিমালা করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রথা। কাজে সরাসরি যুক্ত করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে।

কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টোটা। এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেন, দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ তালুকদারের পছন্দের লোকেরা বাঁধপ্রকল্পের কাজ পেয়েছে। অথচ হাফিজ স্থানীয় হাতিয়ার জারুলিয়া নদী দখলের ‘ট্রিপল মার্ডার’ মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি। (সুনামগঞ্জের দিরাই থানা মামলা নং ৫, তারিখ ১৯/১/২০১৭।) তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পড়ে আছে। থানা-পুলিশ অসহায়, প্রশাসন নাকি কিছুই করতে পারে না তার বিরুদ্ধে। অথচ সীমাহীন অপকর্মের অভিযোগ লোকটির ওপর। বিএনপির দিরাই উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফিজ। তার পছন্দের লোকগুলো প্রকল্পের কাজ পায় কীভাবে এ প্রশ্নও উঠেছে। তিনি নাকি আওয়ামী লীগার! অথচ দলে তার কোনো পদ নেই, এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম জেলার কৃষকদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবলেও ইতিবাচক রেজাল্ট পাচ্ছেন না। বাঁধনির্মাণের ব্যাপারে জেলার সার্বিক অবস্থা তদারক করছেন। দিরাইয়ের ইউএনও মঈন উদ্দিন ইকবালের উপজেলায় ১৩০টি প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রায় প্রতিটি বাঁধের ওপর নজরদারী বাড়িয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তিনি। প্রকল্পগুলো স্বচক্ষে দেখতে ছুটছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। ইউএনও গভীররাতেও সংশ্লিষ্টদের ফোনে নির্দেশ দিচ্ছেন। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের তিনি তাগাদা দিচ্ছেন।

স্থানীয় কয়েক কৃষক মন্তব্য করেন, ‘মঈন উদ্দিন ইকবাল একা কী করবেন, কী করার আছে? এখানকার কিছু শয়তান তো গাছের বান্দর।’ বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করে স্থানীয় সাংবাদিক দ্রুপদ চৌধুরী নূপুর জানান, একেকজন নামে বেনামে কয়েকটি করে প্রকল্প এনেছে। অসংখ্য প্রকল্পের নাম বলা যাবে। তাড়লের টাংনির হাওর প্রকল্পের বরাদ্দ ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৩২৬ টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অনিয়মের চিত্র। প্রকল্পের শতকরা ৩৮ ভাগ কাজও হয়নি জানান এলাকার কৃষকরা।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক
সম্পাদনা : মোহগাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়