ক্যান্ডি জেলার একটি মসজিদে ও মুসলিম মালিকানাধীন সম্পত্তিতে হামলায় জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার অমিত জীবন বিরাসিংহে গোষ্ঠীর নেতা ও অপর নয় সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়।
এদের মধ্যে তিন জনকে ক্যান্ডি থেকে এবং অপর সাত জনকে জেলার বাইরে থেকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের সবাইকে ১০ দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজধানী কলম্বোতে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কা পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা।
কলম্বোয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কারা তাদের তহবিল যুগিয়েছে, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব জড়িত আছেন কিনা এবং এই দাঙ্গার পেছনে বিদেশি কোনো ইন্ধন আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছি আমরা।”
গত রোববার শুরু হওয়া এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত দুই জন নিহত হন।
শুক্রবার ভোর ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ক্যান্ডিতে ছয়টি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এবং জেলাটি থেকে মোট ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন গুনাসেকারা।
ক্যান্ডি শহরতলীতে হামলার ভয়ে একটি পরিবার বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ওই বাসাটিতে আগুন দিতে দেখেছেন রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক।
পুলিশ কয়েকটি এলাকায় সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন শ্রীলঙ্কার মন্ত্রীসভার মুখপাত্র দয়াসিরি জয়সেকারা।
অপরদিকে কয়েকটি এলাকায় সিংহলীরা মসজিদ রক্ষায় মুসলিমদের সাহায্য করেছে বলে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
দাঙ্গার প্রতিবাদে কয়েকশত সিংহলী শুক্রবার কলম্বোতে সমাবেশ করেছে। সমাবেশটিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও যোগ দিয়েছিলেন। দোকানপাট বন্ধ রেখে দাঙ্গার প্রতিবাদ জানিয়েছেন শহরটির মুসলিম দোকানিরা।
শুক্রবার রাত ৮টা থেকে পরদিন শনিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত ক্যান্ডিতে কার্ফু পুনর্বহাল করে পুলিশ। তবে পাসপোর্ট সঙ্গে থাকা পর্যটকদের চলাচল করতে দেয়।
নান্দনিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য খ্যাত ক্যান্ডি শ্রীলঙ্কার পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
শ্রীলঙ্কার দুই কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে নয় শতাংশ মুসলিম। এদের অধিকাংশই দ্বীপ দেশটির পূর্বাঞ্চলে ও মধ্যাঞ্চলে বসবাস করে। জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ সিংহলী বৌদ্ধ এবং ১৩ শতাংশ তামিল যাদের অধিকাংশই হিন্দু।
শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধদের জোর করে ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত করা হচ্ছে বলে গত বছরজুড়ে অভিযোগ করে আসছিল দেশটির কয়েকটি কট্টরপন্থি বৌদ্ধ গোষ্ঠী। পাশাপাশি বৌদ্ধ পুরাতাত্ত্বিক স্থানগুলো ভাংচুরের জন্যও মুসলমানদের দায়ী করে আসছিল তারা।
গতবছরের শেষে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে মুসলমান রোহিঙ্গারা শ্রীলঙ্কায় গিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করলে তাতে আপত্তি জানিয়ে সরব হয়ে উঠে দেশটির কয়েকটি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী।
এসব নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে দেশটিতে এ দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এরকম এক পরিস্থিতিতেই ক্যান্ডিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ১০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে ও দাঙ্গার উস্কানি রোধে তিন দিনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, ভাইবার ও হোয়াটঅ্যাপ বন্ধ রাখে। সূত্র : বিডিনিউজ
আপনার মতামত লিখুন :