ডেস্ক রিপোর্ট : স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশ চলতি মাসেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হচ্ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে বাংলাদেশকে আরও কমপক্ষে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থাকবে পর্যবেক্ষণের তালিকায়।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নতুন করে মূল্যায়ন শুরু হবে ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে। এই মূল্যায়নে বাংলাদেশ সূচকগুলোতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা আসতে পারে।
জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) আওতাধীন কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কোনো দেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি তদারকি করে। তিনটি সূচকের ওপর ভিত্তিতে করে তারা তিন বছর পর পর এই তালিকা প্রণয়ন করে। সূচকগুলো হচ্ছে মানবসম্পদের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ও জাতীয় মাথাপিছু আয়। এই তিন সূচকেই বাংলাদেশ নির্ধারিত মানে উন্নীত হয়েছে।
আগামী ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা শুরু হবে। চলবে ১৬ মার্চ পর্যন্ত। ওই সভায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সকল মানদ- পূরণের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হবে। কেননা ইতোমধ্যেই সূচকগুলোর প্রতিবেদন তাদের কাছে পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নে ১০০-এর মধ্যে ৬৬ পয়েন্ট পেতে হবে। বাংলাদেশ এই সূচকে অর্জন করেছে ৬৮.৭ পয়েন্ট। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ৩২ পয়েন্টের কম থাকতে হবে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫.১১ পয়েন্ট। জাতীয় মাথাপিছু আয় (জিএনআই) কমপক্ষে ১ হাজার ২৪২ মার্কিন ডলার হতে হবে। বর্তমানে এই আয় ১ হাজার ৬১০ ডলার। এসব তথ্যের ভিত্তিতে কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের করে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত করার সুপারিশ করবে। এরপর ইকোসোক এই সুপারিশ মূল্যায়ন করবে।
নিয়ম অনুযায়ী ওই তিনটি সূচকে বাংলাদেশের ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের তথ্য উপস্থাপন করা হবে ওই বৈঠকে। ২০১৬ সালের তথ্য চূড়ান্ত করা হয়েছে গত বছরের শেষ দিকে। এই ধারাবাহিকতা ২০২১ সাল পর্যন্ত বজায় রাখতে হবে। ২০২১ সালের তথ্য চূড়ান্ত হবে ২০২২ সালের শেষ দিকে। এগুলো সমন্বয় করে জাতিসংঘের পদ্ধতিতে হিসাব তৈরি করে পাঠানো হবে ২০২৩ সালে। ২০২৪ সালের মার্চে কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। তারা চূড়ান্তভাবে সূচকের ওইসব তথ্য অনুমোদন করলে তা পাঠানো হবে ইকোসোক-এ। তারা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠাবে জাতিসংঘে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটি গৃহীত হলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবে।
তবে ইকোসোক-এর আওতাধীন কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নেওয়ার সুপারিশ করলেই তা বাস্তবে পরিণত হয়। কেননা এই কমিটি জাতিসংঘের শর্ত মেনেই সুপারিশ করে। যে কারণে এই সুপারিশই পরে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ফলে ওই কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। এটি পেলে এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর থেকে উন্নয়ন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা পাবে সেগুলো কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, স্বল্পোদেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে বাংলাদেশ যেমন অনেক ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তা ও বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে দেশের দায়বদ্ধতাও বাড়বে। এসব বিষয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সূত্র : আমাদের সময়
আপনার মতামত লিখুন :