শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১০ মার্চ, ২০১৮, ০৮:২৩ সকাল
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০১৮, ০৮:২৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ, ইসলামী ব্যাংকের সুপারভাইজার গ্রেফতার

ডেস্ক রিপোর্ট : কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ইসলামী ব্যাংকের সুপারভাইজার সাবেক শিবির নেতা মাহবুবুল আলম নাঈমকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্যাংকের গ্রাহকরা তাকে আটক করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে নেছারাবাদ থানায় মামলা দায়ের করেছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, কৌড়িখাড়া শাখার ব্যবস্থাপক মো.আবু জাফর খান। কেবলমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে নাঈম। এমন অভিযোগ করেছেন শাখা ব্যবস্থাপক। এজাহার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পুলিশ নাঈমকে আদালতে প্রেরণ করেছে।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বিন্না গ্রামের শাহ আলম ফকিরের ছেলে মাহবুবুল আলম নাঈম ২০০৭ সালে ২ অক্টোবর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর কৌড়িখাড়া শাখায় ক্ষুদ্র ব্যবসা বিনিয়োগ প্রকল্পে (এসবিআইএস) সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকদের নামে বিনিয়োগ পাশ করিয়ে নানা নিয়মকানুন ও টালবাহানা করে গ্রাহকদের সম্পূর্ণ টাকা না দিয়া অথবা ফর্মে টাকার অংক না বসিয়ে গ্রাহকদের স্বাক্ষর নিয়ে টাকা অত্মসাৎ করে আসছিল। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে গ্রাহকদের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলতে থাকে।

মাহবুবুল আলম নাঈম পালিয়ে যেতে পারে এমন আশংকা থেকে বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) গ্রাহকরা তাকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে ভ্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে শাখা ব্যবস্থাপক মো. আবু জাফর নাঈমকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে তিনি দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে নাইমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে ভুক্তভোগী গ্রাহক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে নাইমের আত্মসাৎ করা টাকার পরিমান তিন কোটি ছাড়িয়ে যাবে। পুলিশ নাইমকে ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে।

কে এই মাহবুবুল আলম নাঈম?
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বিন্ন্যা গ্রামের শাহ আলম ফকিরের বড় ছেলে মাহবুবুল আলম নাঈম। নিম্নবিত্ত পরিবারেরর সন্তান নাইম। মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায় জড়ান শিবিরের রাজনীতিতে। এ সময় জামায়াতের জেলার শীর্ষ নেতাদের নজরে পড়লে ২০০৬-২০০৭ সালে পিরোজপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শিবিরের সাবেক এই নেতা এক এগারোর পর রাজনীতির মাঠ ছেড়ে দলীয় পরিচয়সূত্রে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর মিয়ার হাট শাখায় এস বি আই এস সুপারভাইজার পদে মাত্র ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন। তখন তার পরিবারে অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। বর্তমানে তার বেতন ২৬ হাজার টাকা । ৮/৯ বছরেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন নাঈম। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা নাঈম কোটিপতি হওয়ার জন্য বেছে নেন ইসলামী ব্যাংককে। কখনো মানুষের স্বাক্ষর নকল করে, আবার কখনো ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে কিংবা নকল কাগজ পত্র তৈরী করে এসব লোন নিয়েছেন লোনগ্রহীতার অজান্তেই। আবার অনেক সময় তার আশেপাশের পরিচিতজনদের নাম ব্যবহার করে লোন নিয়েছেন। সব মিলিয়ে শুধু নেছারাবাদের ইসলামী ব্যাংক মিয়ারহাট শাখা থেকেই এরকম অনেক লোন নিয়েছেন যা পরিমান প্রায় কোটি টাকার উপরে। তার এই অবৈধ কাজে সহযোগীতা করেছেন সাবেক শিবিরনেতা তারই ২ সহোদর মহিব্বুলাহ ও মাহমুদুল হাসান। ইসলামি ব্যাঙ্ক থেকে তার ভাইয়ের নামে ৩০ লাখ টাকার একটি লোন নেওয়া আছে। তার পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, ২ সন্তান, পিতামাতা ও দুই ভাই। যৌথ পরিবারেই বসবাস করেন নিজেসহ তার দুই ভাই ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে বেনামে গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এক সময়ের পিরোজপুর জেলা শিবিরের সভাপতি নাঈমের রয়েছে পিরোজপুরে জেলা শহরে একাধিক বাড়ি। এছাড়া স্বরূপকাঠীর বলদিয়া ইউনিয়নে এই নাঈমের রয়েছে ২৯ টি দলিলে সম্পত্তি এমন তথ্য জানান তার ঘনিষ্ঠজনরা। পিরোজপুর জেলা সদর ও স্বরূপকাঠির বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুর পুরাতন বাস স্টান্ড এর কাছে ৪ টি ও পুলিশ লাইনের কাছে ২টি, নামাজপুরে ২টি বাড়ি সহ প্রায় ১৫ টিরও বেশি বাড়ি/পট ক্রয় করেছেন এই সময়ের মধ্যে। এ ছাড়াও তার গ্রামের বাড়ি নেছারাবাদ থানাধীন বলদিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের খাড়াবাগে গড়েছেন কয়েকটি বাড়ি সহ বিশাল মাছের ঘের ও পোল্ট্রি ফার্ম। রয়েছে পোল্ট্রি ফিডের ব্যবস্যা। সব মিলিয়ে বর্তমানে তার প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ রয়েছে। এলাকায় নিজেকে সমাজসেবক হিসেবে পরিচিতি করার জন্য নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি প্রতিবন্ধী স্কুল (জিরবাড়ী প্রতিবন্ধী স্কুল)। নাইমের এত সম্পদ নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হলে এক এক করে বেরিয়ে আসছে নানা অজানা তথ্য।

ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্ধেক মূল্যে এলাকার এক সংখ্যালঘু পরিবারের জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই নাঈমের বিরুদ্ধে। এদিকে নানা উপায়ে ব্যাংক থেকে লোন নেয়ায় ইসলামী ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি নজরে আসলে এখন নাইম তার নিজ নামে গড়া সম্পদ গোপনে হস্তান্তর/বেনামী করন করার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছিলেন। এজন্য পিরোজপুর জেলা শহরে রাখা বিভিন্ন বাড়ি ও জমি বিক্রির পায়তারা চালান তিনি। কিছু সম্পত্তি হস্তান্তরও করেছেন
এবং বিক্রি করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

এদিকে এলাকাবাসী বলছে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা নাঈম কোটিপতি হওয়ার জন্য বেছে নেন ইসলামী ব্যাংককে। কখনো মানুষের স্বাক্ষর নকল করে, আবার কখনো ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে কিংবা নকল কাগজ পত্র তৈরী করে এসব লোন নিয়েছেন লোন গ্রহীতার অজান্তেই। আবার অনেক সময় তার আশেপাশের পরিচিতজনদের নাম ব্যবহার করে লোন নিয়েছেন। খায়রুল আলমের নামে ২ লাখ ৬০ হাজার, কবির হোসেনের নামে ২ লাখ ৮২ হাজার, সজিব টিম্বারের নামে ৩ লাখ টাকার লোন আনেন তিনি নিজের ব্যবসায়িক কাজে। এরকম কয়েক জনের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার সত্যতা জানা যায়। সব মিলিয়ে শুধু নেছারাবাদের ইসলামী ব্যাংক মিঞারহাট শাখা থেকেই এরকম বিভিন্ন ব্যাক্তির নামে বেনামে লাখ লাখ টাকা লোন নিয়েছেন। ইসলামী ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত তিনি যে লোন নিয়েছেন তাতে নিজেসহ তার ভাই ও গ্রাহকদের আংশিক টাকা মিলিয়ে ব্যাংকের হিসাব মতে প্রায় দুই কোটি টাকা। এলাকাবাসীর মতে নামে বেনামে তার সম্পদ রয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার মত।

তবে সম্প্রতি তিনি স্বরুপকাঠি উপজলার সোহাগদল ইউনিয়নে আরও একটি বিবাহ করেছেন বলে গুজব রয়েছে। বলদিয়া ইউনিয়নের গ্রাহক খায়রুল আলম ও কবির হোসেন বলেন, নাইম একজন ধূর্ত লোক। লোন অফিসার হওয়ায় ভূয়া কাগজ পত্র তৈরী করে ও লোক দেখিয়ে সে অনেক জালিয়াতি করেছে। অনেক নামে বেনামে লোন করেছে। নাঈমের ব্যবসায়ীক এক অংশীদার মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ বলেন, নাঈমের সাথে অনেকদিন ধরেই আমি দৈহারী ইউনিয়নের ১ একর জমির উপর মুরগীর ফার্ম করেছি। তবে তার বিনিয়োগ জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি নাঈমের সাথে অনেকের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার কথা স্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে নাইম বলেন, আমার ১ কোটি টাকার মত সম্পদ রয়েছে এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তার এ ব্যবসা ছোট দুই ভাই দেখাশুনা করেন।আমার পিতার ১০/১২ বিঘা সম্পত্তি ছিল। পিতার ২টি দোকান এবং কিছু জমি বিক্রি করে ব্যবসায় এ মুলধন খাটিয়ে এ সম্পদ অর্জন করেছি। এর মধ্যে আমার কোন অবৈধ সম্পদ নেই। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং আরো যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তার বিরুদ্ধে এলাকার একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেন।

ইসলামি ব্যাংকের কৌড়িখাড়া শাখা ব্যাবস্থাপক মো.আবু জাফর খান জানান, নাঈম কখনো মানুষের স্বাক্ষর নকল করে, আবার কখনো ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে কিংবা নকল কাগজপত্র তৈরী করে লোন নিয়েছেন লোনগ্রহীতাদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

স্বরূপকাঠী থানা পুলিশের এ এস আই দুলাল জানান, জালিয়াতির কারণে গ্রাহকরা না্ঈমকে গণধোলাই দিয়ে দুপুরে লাইটপোস্টের সাথে বেধে রাখে। পরে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে এবং তাকে আজ কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। সূত্র : পরিবর্তন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়