শিরোনাম
◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৪৬ সকাল
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৪৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গ্রাহকের একদিন!

ড. সা’দত হুসাইন : বহুল প্রচারিত দৈনিকের একটি ছোট্ট খবর আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খবরটি হয়তো আরও অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। খবরের শিরোনাম ছিল, ‘বাণিজ্য মেলায় ১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেন ভোক্তারা।’ প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায় যে, এবার ১ জানুয়ারি’১৮ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ১৮ পর্যন্ত ঢাকার শেরে বাংলানগরে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় অন্যান্য বাণিজ্যিক ও সেবা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরও তাদের অস্থায়ী কার্র্যালয় বা স্টল স্থাপন করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছির ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদেরকে যথাসম্ভব স্তস্তি দেওয়া।

বাণিজ্য মেলায় বহু সংখ্যক ছোট বড় স্টল থাকে। মাসাধিক কাল ধরে এসব স্টলে হাজার হাজার ক্রেতার সমাগম হয় এবং কোটি কোটি টাকার বেচা-কেনা হয়। এখানে নানা রকম পণ্য ও সেবা সামগ্রী বাজারজাত করা হয়। চমকপ্রদ

প্রচার-প্রচারণা, বিজ্ঞাপন এবং হাঁকডাকের মাধ্যমে স্টল সমূহ তাদের পণ্য-সেবার বিক্রি বাড়িয়ে লাভের বাড়তি অংক গুণতে থাকে। এরই মধ্যে চলতে থাকে নানা রকম ফাঁকি-ঝুঁকি, প্রতারা এবং মিথ্যা আশ্বাসের মিছিল। ওজনে কম দেওয়া, নি¤œমানের ঠুনকো মাল গছিয়ে দেওয়া, বাড়িতে মাল পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যথাযথভাবে তা পরিবহন ও সংস্থাপন না করা, ওয়ারেন্টি থাকা সত্ত্বেও ত্রুটিপূর্ণ মালামাল ফেরত না নেওয়া বা বদলিয়ে না দেওয়া, কোম্পানি নির্ধারিত দাম গোপন রেখে মাত্রাতিরিক্ত দাম নেওয়া, জালিয়াতির মাধ্যমে নকল বা ভেজাল পণ্য বিক্রি করা বেশকিছু অসৎ ব্যবসায়ীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

অস্থায়ী  প্রদর্শনী বা মেলায় এদের অনৈতিক অপকর্ম বৃদ্ধি পায়। ক্রেতারা অনেকে দ্বিতীয়বার মেলায় আসার সুযোগ পায় না, ভিড়ের চাপে অনেকে অভিযোগ বা দেন-দরবার করতে চায় না। কিছু ক্রেতা বিদেশ থেকে বা মফস্বল এলাকা থেকে মেলায় আসে। ঠকে গেলেও তারা সহ্য করে; এ নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। অসৎ দোকানদার বা স্টল মালিকরা পুরোমাত্রায় এ সুযোগ গ্রহণ করে। নানাভাবে তারা ক্রেতাকে ঠকায়। অনৈতিক ব্যবসা করে মনের আনন্দে টাকা কামায়।

বিক্রেতার অনৈতিক কর্মকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের সুরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠার পর নিজেদেরকে গুছিয়ে নিতে স্বাভাবিকভাবে কিছু সময় লেগেছে। তারপর থেকে অধিদপ্তরটি নিজস্ব নিয়মে, অনেক সময় উদ্যোগী হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ভোক্তারা অভিযোগ করলে অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় দ্রুততার সাথে মামলা বা অভিযোগ নিষ্পত্তি করে। নিষ্পত্তির পদ্ধতি সুন্দর, অনেকটা ভোক্তার অনুকূলে।

যদি অভিযোগ সত্য অর্থ্যাৎ বিক্রেতার দোষ প্রমাণিত হয় তবে আইন/বিধি অনুযায়ী বিক্রেতাকে অর্থ জরিমানা করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জরিমানার ২৫% অভিযোগকারী ভোক্তা (ক্রেতা) কে প্রদান করা হয়। বাণিজ্য মেলায় অভিযুক্ত বিক্রেতাদেরকে মোট ৫ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এর ২৫% হিসাবে অভিযোগকারী ক্রেতাগণকে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার প্রদান করা হয়। কিছু অভিযোগ দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

শুধু বাণিজ্য মেলা নয়, দেশের কোনো জায়গায় যখন বড় মেলা বা প্রদর্শনী হয়, তখন সেখানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে। তা হলে ক্রেতা সাধারণ স্বস্তি বোধ করবে, তাদের ওপর বিক্রেতাদের অনৈতিক জুলুম অনেকটা কমে আসবে। আসলে বিক্রেতার সব অন্যায় ও অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও অভিযোগের জন্য ভোক্তা অধিকার অফিসে যেতে হয় না। এ অফিসের কথা বললেই কাজ হয়ে যায়। আমাদের অফিসে কোনো বড় কোম্পানির দোকান থেকে একটি এয়ার কন্ডিশনার কেনা হয়েছিল।

কথা ছিল যন্ত্রটি তারা আমাদের অফিসে স্থাপন করে দিবে। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় টাকাও নিয়েছিল। যন্ত্রটি এনে দেয়ালে ফিট করে তারা চলে গেল। এটি চালানোর ব্যবস্থা করে দিল না। তারা গড়ি-মসি শুরু করল এবং বলল যে, তারা শুদু ‘ইলেকট্রনিক’ এর কাজ করবে, ইলেকট্রনিকের কাজ আমাদেরকে সম্পন্ন করে মেশিনটি চালু করতে হবে। আমরা এতে রাজি হলাম না। আমাদের কথা মেশিনটি বিক্রেতাকে চালু করে দিতে হবে। চালু হবার আগে অন্য কোনো লোক মেশিনে হাত দিবে না। আর চালু করার জন্য তাদেরকে টাকা দেওয়া আছে।

তারা এ খরচ বাঁচাতে চাইল এবং আমাদেরকে বিপদে ফেলে টেলিফোন ধরা বন্ধ করে দিল। বাধ্য হয়ে আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে দাখিল করার জন্য একটি অভিযোগ পত্রের খসড়া তৈরি করলাম এবং আমাদের একজন কর্মকর্তাকে বললাম তাদেরকে খসড়াটি দেখিয়ে আনতে। খসড়াটি দেখামাত্র দোকারদারের ভাবগতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে গেল। তারা পূর্ব শর্ত মতো ইলেকট্রিকের কাজ শেষ করে যন্ত্রটি চালিয়ে দিতে রাজী হলো। যন্ত্রটি এখন ভালোভাবেই চলছে।

অধিদপ্তরের কাছে আমার সুপারিশ থাকবে তারা যেন ব্যাপক ভাবে প্রচার কার্য চালিয়ে যায়। ভোক্তা সাধারণ এখনো পর্যন্ত তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকেফহাল নয়। নাগরিকরা অধিদপ্তরের কর্মকা- সম্পর্কে অবহিত হলে বিক্রেতারা অনেক সতর্ক এবং সংযত হবে। ক্রেতারা যথেষ্ট স্বস্তি পাবে। অধিদপ্তরটি যথার্থই একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠবে

লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়