শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৩৭ সকাল
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৩৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কী ভাবছে বাংলাদেশ

তারেক : স্বাধীনতার পর ভারতের গণতান্ত্রিক প্রথার রেওয়াজ ভেঙে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত প্রথমবারের মতো নজিরবিহীন রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। গত বুধবার মুম্বাইয়ে এক সেমিনারে তিনি বলেন, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান বাংলাদেশি মুসলমানদের ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঠেলে পাঠিয়ে সেখানকার জনবিন্যাস পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।

জেনারেল বিপিনের বক্তব্যে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি বাদে প্রায় সব রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছে। গণমাধ্যমগুলোও কড়া সমালোচনা করেছে তার এ বক্তব্যের। দ্য হিন্দু জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্যকে অস্বাভাবিক বলে বর্ণনা করেছে। আনন্দবাজার পত্রিকা এর সম্পাদকীয়তে এ ঘটনাকে ‘ভারতের পাকিস্তান মডেল’ বলে সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য না দিলেও বিষয়টি নিয়ে বিব্রত সরকার। এ নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কিছুটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনমনে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

এতিহ্য অনুযায়ী ভারতের সেনাবাহিনী রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক সরকারকে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমন ও শত্রুর হাত থেকে দেশরক্ষার কাজ করে। কিন্তু সে প্রথা ভেঙে বিপিনের এ বক্তব্যকে এখতিয়ারবহির্ভূত বলেছেন নয়াদিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো মনোজ যোশী।

ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সমালোচনা চললেও ভারতের ক্ষমতাসীন জনতা পার্টির কেউ কেউ এটিকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিজয় কুমার সিং বর্তমান সেনাপ্রধানকে সমর্থন করে বলেন, সেনাপ্রধান যা বলতে চান তা বলতে পারেন। আমাদের দোষ হলো- সবকিছুর মধ্যে আমরা রাজনীতি খুঁজি।’ তবে শাসক দল বিজেপির একাংশের মধ্যে এর বিরোধিতাও রয়েছে। অটল বিহারি বাজপেয়ি ও লালকৃষ্ণ আদভানী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিজেপি নেতা সুধীন্দ্র কুলকার্নি এক নিবন্ধে লেখেন, ‘জঘন্য মন্তব্য করে বিপিন রাওয়াত লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করেছেন।’

ভারতীয় বিশ্লেষকদের অনেকে এ মন্তব্যে বিপিন রাওয়াতের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা হিসেবে দেখতে চাইছেন। এর আগে কাশ্মির নিয়েও তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন আড়াই ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে ভারত। চীন, পাকিস্তান দুই ফ্রন্ট আর কাশ্মির অর্ধেক ফ্রন্ট। তার ওই বক্তব্যেও ভারতজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। এ থেকে মনে করছেন এ বক্তব্য ভারত সরকারের নয়, বিপিন রাওয়াতের বিচ্ছিন্ন আলটপকা মন্তব্য।

তবে এ মন্তব্যকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখতে রাজি নন, এমন মতের সংখ্যাও কম নয়। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি আসার পর শাসক দলটির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বর্ণবিদ্বেষ উসকে দেওয়ার নানা অভিযোগ উঠেছে। হিন্দুত্ববাদ দলটির রাজনৈতিক হাতিয়ার। এ হাতিয়ারকে ব্যবহার করে জনমানসে হিংসা-হানাহানি ও উগ্রতা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

গো-রক্ষার নামে একের পর এক মুসলিম ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের পিটিয়ে মারার ঘটনায় গত কয়েক বছর ধরেই সমালোচিত দলটি। ফলে জন মনে বিভাজন ছড়াতে নতুন কৌশল দরকার পড়ছে তাদের। আর এ কৌশলটি হচ্ছে প্রতিবেশী মুসলিমপ্রধান দেশগুলো- ‘ইচ্ছাকৃত’ভাবে দেশটিতে সন্ত্রাসসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে এমন একটা ধারণা জনমনে তৈরি করা। অর্যাকৎ, মুসলিমফোবিয়া বা মুসলিমভীতি সৃষ্টি করে সস্তা জনপ্রিয়তা পেয়ে যাওয়ার কৌশলে এগোচ্ছে তারা।

এ ক্ষেত্রে জেনারেল বিপিন রাওয়াত ভারতের শাসক দল বিজেপির ‘মুখপাত্র’ হিসেবে কাজ করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তিনি বলেন, ‘আসামকে অস্থির করে রাখাটা পাকিস্তানের চক্রান্ত। এটা তাদের কাছে একটা ছায়াযুদ্ধ। বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের তারা আসামে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ কাজে পাকিস্তানকে মদদ দিচ্ছে চীন।’

ভারতের সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যকে অনেকে বাংলাদেশকে ‘চাপে’ রাখার কৌশল হিসেবেও দেখছেন অনেকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দিন দিন চীনের আধিপত্য বেড়ে যাওয়ায় আঞ্চলিক বিরোধও বাড়ছে। ক‚টনীতিকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় অনেকটাই প্রভাব হারিয়েছে ভারত। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে চীন। এ ক্ষেত্রে ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ বাংলাদেশেও অর্থনৈতিকভাবে চীন প্রবেশ করতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে বিপিন রাওয়াতের বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য একটি শক্ত মেসেজও হতে পারে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এসব রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক কোনো অবস্থান না থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজেপি তাদের অবস্থান শক্ত করতে মরিয়া। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে রাজ্যগুলোতে অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের সহবস্থান থাকলেও বিজেপি এ ক্ষেত্রে স্থানীয়-অভিবাসী বিরোধকে তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার করেছে। এ কৌশলে তারা আসামে সফলও হয়েছে।

ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে একই কৌশল প্রয়োগ করেছে। আসামে সম্প্রতি নাগরিকদের নিবন্ধন করা হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে, ৩০ লাখ অভিবাসী রয়েছে যারা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে। তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও কোনো কোনো বিজেপি নেতা বলেছেন। আসামের এ নাগরিক নিবন্ধনে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের স্পষ্ট ইন্ধনও রয়েছে।

এসব ঘটনায় বাংলাদেশ শক্ত কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও বেশ শঙ্কিত। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা গত ছয় মাসে বাংলাদেশে এসেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তেমন কোনো অবস্থানই নিতে পারেনি। ছয় মাসের মাথায় এটি যেন বাংলাদেশের একার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ প্রথম থেকেই প্রতিবেশী ভারতের জোরালো সমর্থন আশা করেছিল। প্রথমদিকে দোদুল্যমান অবস্থানে থাকলেও পরবর্তী সময়ে দিল্লি বাংলাদেশেকে সমর্থনও করে।

তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে ভারতকে টপকে নেপথ্যের কারিগর হিসেবে কাজ শুরু করে চীন। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে এ ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধের সূত্র ধরে ভারতীয় সেনাপ্রধানের নজিরবিহীন এ বক্তব্যের পেছনের কারণ হিসেবেও দেখতে চান অনেকে।

বিপিনের কথা অবাক করেছে: ড. আমেনা মহসীন
ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের বক্তব্যকে ভীষণভাবে অযৌক্তিক মনে হয়েছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন, সেটা শিষ্টাচারের মধ্যেও পড়ে না। এটা উনাদের নিজেদের সমস্যা। একটা জায়গায় একটা দলের সমর্থকের সংখ্যা বাড়তেই পারে। কিন্তু তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটার কোনো ভিত্তি নেই। তার এ ধরনের বক্তব্য আমাদের অবাক করেছে।

তার বক্তব্যের পেছনের রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে কি না, সে ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে বলব, বক্তিগত মতামত অনেকেরই থাকতে পারে। কিন্তু একজন সেনাপ্রধানের মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তি যখন এ ধরনের কথা বলেন তখন সেটা আর ব্যক্তিগত থাকে না। সেটা পাবলিক ফেয়ারে এসে যায়। একজন সেনাপ্রধান এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন কি না, তা আমার জানা নেই। আমার স্মরণের মধ্যেও পড়ে না ভারতের কোনো সেনাপ্রধান কখনো এ ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য করেছিলেন কি না।

আর তার বক্তব্যকে আমলে নিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক অবনতির কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। এটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করারও প্রয়োজন নেই। পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে বহুবার কূটনৈতিক শিষ্টাচারবর্জিত আচরণ করেছে, আমরা তো সম্পর্ক ছিন্ন করিনি। মিয়ানমার তাদের পুরো সংকটটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে, এর পরও তো আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছি। সুতরাং ভারতীয় সেনাপ্রধানের বক্তব্য উসকানিমূলক হলেও দু’দেশের আন্তঃসম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না।

বক্তব্য ভিত্তিহীন অপ্রয়োজনীয়: এম হূমায়ুন কবীর
ভারতীয় সেনাপ্রধানের এ বক্তব্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন-অবনমনের প্রশ্নে তার বক্তব্য কোনো প্রভাবই ফেলবে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু তিনি যেহেতু একজন সেনাপ্রধান সেহেতু বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সচেতন থাকা উচিত ছিল এবং বক্তব্যটা তথ্যসমৃদ্ধ হওয়া উচিত ছিল। বস্তুনিষ্ঠতা না থাকার কারণে তার বক্তব্য ভিত্তিহীনতায় পর্যবসিত হয়েছে।

এটা আলোচিত হচ্ছে একটা কারণে যে- সম্প্রতি আসামের অস্থিরতা, বাংলার কোনো সীমানা থাকবে না বলে পশ্চিমবঙ্গে এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর মন্তব্য এবং সর্বশেষ ভারতীয় সেনাপ্রধানের বক্তব্য আমাদের চিন্তিত করে। সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে ভারতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা কী ভাবছেন সেটা আমাদের জানা জরুরি। কারণ ভারতের নানা চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সবসময় আন্তরিক ভূমিকা পালন করেছে। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে এবং বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ধরনের অপপ্রয়াসকেই প্রশ্রয় দেয়নি আমাদের সরকার। ফলে এমন একটা আস্থা ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাপ্রধানের বক্তব্য আমাদের অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছে। তবে এটাকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না।

পাঞ্জাবি মনস্তত্ত্ব থেকে এ মনোভাব: মো. আব্দুর রশিদ
আমি মনে করি, উনি যে মন্তব্যটা দিয়েছেন সেটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এ ধরনের মন্তব্য সাধারণত দুদেশের সম্পর্ককে আঘাত করে এবং ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। কারণ, তার বক্তব্যে কোনো বস্তুনিষ্ঠতা খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ হলো, উনি যেটা বলেছেন সেটা ভূ-রাজনৈতিক। আমাদের অঞ্চলগুলো নিয়ে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর যে রাজনীতি, সেটিকে নিয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন এবং সেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ তার পছন্দ হয়নি। ভূ-রাজনীতিতে প্রভাবিত হওয়া একটি অঞ্চলে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে থাকে। সে ক্ষেত্রে ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো স্বভাবতই তাদের নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করে থাকে, এটি নতুন কিছু না। ভারত এবং চীনের মধ্যে যে উত্তেজনাকর সম্পর্ক সেটি তৈরিতে বাংলাদেশ কখনো কোনো ভূমিকা রাখেনি। তার অন্যতম প্রমাণ হলো বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছাকাছি এর আগে যত ক্রাইসিস ডেভেলপ করেছিল তখনো বাংলাদেশ কোনো পক্ষ অবলম্বন করেনি বা কাউকে উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিতও করেনি। বাংলাদেশ সবসময় সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে উনি হঠাৎ করে বাংলাদেশকে নিয়ে এত বড় একটি অপবাদমূলক কথা বললেন। আমার কাছে মনে হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সবসময় পাঞ্জাবি মনস্তত্ত্ব থাকে। এ মনস্তত্ত্ব থেকে তারা ভাবে, পাকিস্তানকে যতটা না কাছে পাবে বাংলাদেশকে অতটা পাবে না। সেখান থেকেই তিনি এ কথা বলেছেন। অথচ বাংলাদেশ ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য যতটা কাজ করেছে তা কখনো পাকিস্তান করেনি। সেটিকে ভুলে গিয়ে হঠাৎ করে সে দেশের সেনাপ্রধানের মুখে এ ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত। এটা বাংলাদেশের জনগণ কামনা করে না। দুদেশের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এসব মন্তব্য অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।

তা ছাড়া মনে হয়েছে, বিপিন রাওয়াতের বিশ্লেষক বা তাকে যারা তথ্য সরবরাহ করেন, তাদের মধ্যেও কিছুটা পাঞ্জাবি ভূত চেপে আছে। বিশেষ করে তাদের যে অ্যাথনিক লিঙ্ক আছে সেখান থেকেই এ চিন্তার বিস্তার ঘটেছে বলে মনে হয়। কারণ, বাংলাদেশ ভারতের নিরাপত্তার জন্য কখনই হুমকি হয়নি। উপরন্তু ভারতের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় সে জন্য বাংলাদেশ যত আন্তরিকভাবে কাজ করেছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকার যত স্পষ্ট এবং সাহসী কাজ করেছে এর আগে কোনো সরকারকে তা করতে দেখা যায়নি। সেখান থেকে দুদেশের বন্ধুত্বের যে ঘনত্ব তৈরি হয়েছে, আস্থার উন্নয়ন ঘটেছে, সে পরিবেশটা একাত্তরের দুদেশের মধ্যে যে পরিবেশ ছিল তার কাছাকাছি অবস্থায় ফিরে গেছে। সেটি এমনি এমনি যায়নি। দৃশ্যত এবং কার্যত নানা পদক্ষেপের কারণেই গেছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের ৫টি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় চার হাজার মাইল সীমান্ত আছে। সেখানে যে খোঁচাখুঁচি বা ঝুঁকির যে অস্তিত্ব সেটা বিনাশে বাংলাদেশ খুব বড় ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতের যাতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সবসময় সজাগ থেকেছে। সেটিকে মনে রাখতে হবে ভারতকে। কিন্তু ভারতীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশের এত সব ভূমিকাকে দেখলেন না। কোত্থেকে এমন মন্তব্য তিনি করলেন তা শুনে আমি অবাক হয়েছি।

তার বক্তব্য নিয়ে ভারতের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও নানাভাবে সমালোচনা হচ্ছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান হিসেবে তার কাছে যদি ওইরকম কোনো তথ্য থেকে থাকে তো সেটা তিনি প্রকাশ্যে না বলে সরকারের যথাযথ পর্যায়ে সেটা তিনি উত্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। ভারতের বিশ্লেষকরাও বলছেন, তিনি এ ধরনের বিতর্কে না জড়ালে পারতেন। ভারতীয় লোকজন তার সমালোচনা করুক। কিন্তু বাংলাদেশের তরফ থেকে সরকারিভাবে এ ধরনের বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ নেই। কারণ, সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কোনো রাষ্ট্র বা সরকার জড়াবে সেটা রীতিসিদ্ধও নয়। আর ভারতীয় সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে যেহেতু আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যও মনে হয়নি এবং তিনি বিশেষ রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন সেটা স্পষ্ট হয়েছে সেখানে আমাদের আগ বাড়িয়ে যুক্ত হওয়াও সমীচীন হবে না। পরিবর্তন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়