শিমুল মাহমুদ: রাঙামাটির বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনকারী নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী এবং ভূক্তভোগীদের গৃহবন্দী করে রাখার প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিল করেছে আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।
মিছিলটি শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সংহতি সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।
সংহতি সমাবেশে বক্তরা ৭টি দাবি উল্লেখ করে বলেন,অবিলম্বে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনকারী অভিযুক্ত নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশ ও তদন্ত কমিটি গঠন । পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সকল আধিবাসী নারীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম
চুক্তি মোতাবেক সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার এবং চুক্তি পূর্ণাঙ্গ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটির বিলাইছড়ির দুর্গম ফারুয়ার তক্তানালায় মারমা আদিবাসী গ্রামে গত ২২ জানুয়ারি রাতে সেনা বাহিনী সন্ত্রাসীদের সন্ধানে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযোগে প্রকাশ, এসময় সেনা সদস্যরা দুই মারমা বোনদের একজনকে ধর্ষণ ও আরেকজনকে যৌন হয়রাণী করে। জুম চাষী (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ চাষাবাদ) হতদরিদ্র এই পরিবারটি মোটেই বাংলাভাষা বোঝেন না। মূলধারার গণমাধ্যমে ঘটনাটি সেভাবে প্রকাশ না পেলেও স্যোশাল মিডিয়াতে এই ঘটনা তোলপাড় ফেলে।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে কিছুদিন আগে স্থানীয় একজন মারমাভাষী আওয়ামী লীগ নেতা দুই বোনের বাবা-মাকে জেলা শহরে এনে রাঙামাটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি বাংলায় দেওয়া বক্তব্যে দাবি করেন, ওইদিন মারমা গ্রামে সেনা সদস্যরা প্রবেশ করেনি, এমনকি কোনো ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেনি! তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মেয়ে দুটির ছোটভাইয়ের বক্তব্যে বেড়িয়ে আসে থলের বেড়াল। মারমা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিজ ভাষায় কিশোর ছেলেটি জানায়, সেনা সদস্যরা মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে সেদিন রাতে তাদের ঘরে প্রবেশ করে। বাইরে বন্দুক নিয়ে টর্চ হাতে পাহারায় ছিল আরো কয়েক সেনা সদস্য। এ সময় ঘরের ভেতর থেকে দিদিদের চিৎকার ভেসে আসে। গ্রামবাসী ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি!…
সবশেষ ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নিরাপত্তা বাহিনী বাতি নিভিয়ে চাকমা রাণী য়েন ও তার সহযোদ্ধা স্বেচ্ছাসেবীদের মারপিট করে হাসপাতাল থেকে দুই মারমা বোনকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা হতবাক করে দিয়েছে শুভবুদ্ধির মানুষদের। ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড় থেকে সমতলে।
দুই মারমা বোনের নির্যাতন ও চাকমা রাণীর ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রায় প্রতিদিনই পার্বত্য চট্টগ্রামে তো বটেই, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মিছিল, সমাবেশ, মানবন্ধন, মশাল মিছিল হচ্ছে। আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি অ-আদিবাসী বাঙালিরাও যোগ দিচ্ছেন এসব কর্মসূচিতে। শ্লোগান উঠেছে- পাহাড় ও সমতলে/লড়াই হবে সমানতালে!
সংহতি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, নারী নেত্রী রোকেয়া কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও অনুরাগ চাকমা, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা প্রমুখ ।
আপনার মতামত লিখুন :