[caption id="attachment_469778" align="alignnone" width="600"] Villagers with their belongings move to relief camps as they leave their locality after violence at Chirang district in Assam July 24, 2012. REUTERS/Stringer[/caption]
মাছুম বিল্লাহ : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে বর্তমানে যে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) তৈরির কাজ চলতে তা সেখান থেকে বাংলাদেশমুখি জনস্রোত তৈরি করবে বলে ঢাকা আশঙ্কা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।
পত্রিকাটি লিখেছে, বাংলাদেশ সফররত ভারতের একদল সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে বক্তব্যকালে গত বুধবার কর্মকর্তারা বলেন যে আসামের প্রক্রিয়াটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের শাসন বিরোধিতাকারী ভারত-বিরোধিতাকারী ও ইসলামী মৌলবাদিরা এর সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।
তারা বলেন, তিস্তা পানি চুক্তি সই করতে না পারার পর নাগরিকত্ব ইস্যু হবে আরেকটি হতাশার কারণ। আমরা মনে করি আসামের এনআরসি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের আগে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের বিষয়টি ভাবতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এই প্রক্রিয়ার জের ধরে যদি আসামের বাংলাভাষী জনগণকে বহিস্কার করা হয় তাহলে তা আরেকটি রাখাইনের মতো উদ্বাস্তু সমস্যা তৈরি করবে।
ভারত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি করায় তা বাংলাদেশে ব্যাপক হতাশা জন্ম দিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা একমত। এখন আসামের চলমান প্রক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেরও একই মনোভাব প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো দিদিমনি (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি) তিস্তার পানিতে আমাদের অংশ দিতে চান না।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি অংশ বিশ্বাস করে যে ভারত শুধু নিতে চায়, দিতে চায় না। শেখ হাসিনা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহ দমনে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছেন।
তারা বলেন যে হাসিনা সরকার কোন বিনিময় ছাড়াই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া উলফা নেতাদের ধরতে ভারতকে সাহায্য করেছে। কিন্তু আসাম থেকে নতুন করে উদ্বাস্ত স্রোত তৈরি হলে তা বহু বছরের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার হিসাবটি পাল্টে যেতে পারে।
তারা বলেন ২০১৭ সালে বাংলাদেশ দুটি বড় ধরনের বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট তার সম্পদের ওপর চাপ তৈরি করেছে। এরপর আবার গোলযোগ তৈরি হলে তা নির্বাচনমুখি দেশটিতে একটি অবিশ্বাস তৈরি করবে। চলতি বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, আসামে নাগরিকত্ব নিয়ে যে অনুশীলন চলছে তা ১৯৪০-এর দশকে যে সাম্প্রদায়িকতা দেখা দিয়েছিলো তারই স্মৃতিবহ।
শেখ হাসিনার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক আমলা মশিউর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি কোন জায়গায় কিছুকাল বাস করে তাহলে ধরতে হবে সে ওই স্থানের বাসিন্দা এবং তাকে তার অবস্থানে থাকার স্বাধীনতা দিতে হবে। কিন্তু আসামের কাজে দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রতিফলন ঘটেছে। এর মানে হলো মুসলমানরা বাংলাদেশে থাকবে আর হিন্দুরা থাকবে ভারতে। যেন পাকিস্তানের একটি উত্তরাধিকার বাংলাদেশ।
গত নয় বছর ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় রয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। বর্তমানে দলটিকে এন্টি-ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টরের পাশাপাশি আরো অনেক ইস্যু মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাই ঢাকার উদ্বেগ নিরসনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের অবশ্যই আমাদেরকে সাহায্য করতে হবে ।’