ডেস্ক রিপোর্ট : বেসরকারি ব্যাংক নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভীত হয়ে পড়েছে। ডিপোজিট চাইলে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক না করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হওয়া সেবা খাতের বিল ‘বড় অঙ্ক’ হওয়ার আগেই তা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড ও চট্টগ্রাম বন্দরসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের টাকা ফারমার্স ব্যাংক ফেরত দিতে না পারায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভীতির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ও পানির বিল দেশের কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে জমা দেয়া যায়। এজন্য সেবা খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট রয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে।
কয়েকটি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিল সবচেয়ে বেশি জমা হয় ব্যাংকে। এরপরের ধাপে রয়েছে গ্যাস বিল ও পানি বিল। মহানগরীতে গ্যাস বিল তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একাউন্টে এবং পানির বিল ঢাকা ওয়াসার একাউন্টে জমা হয়। তবে বিদ্যুৎ বিল অঞ্চলভেদে ডিপিডিসি বা ডেসকো’র একাউন্টে জমা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস আগেও এসব বিল জমার অর্থ কিছুটা সময় নিয়ে সরকারি ব্যাংকে ডিপোজিট রাখতে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের বন্ড কেনার জন্য নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জমা হওয়া এসব অর্থ উঠিয়ে নিতে রীতিমতো তাড়াহুড়ো লেগে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ব্যাংক সেবা খাতে জমা হওয়া অর্থ ডিপোজিট রাখার আবদার করলেও তাতে সায় মিলছে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে অর্থ তুলে আনা হচ্ছে। এদিকে সেবা খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্লট বা ফ্ল্যাটের কিস্তি, হস্তান্তর ফি, বাণিজ্যিক কনভারসন (রূপান্তর) ফি, নকশা অনুমোদন ফিসহ বিভিন্ন অর্থ আদায় করে। এ কারণে রাজউক চেয়ারম্যানের বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে অল্প সময়ের মধ্যে বড় অঙ্কের অর্থ জমা হয়। এসব অর্থ নিজেদের ব্যাংকে ডিপোজিট আকারে নিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েন। নানা মাধ্যমে চেয়ারম্যান, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) এবং পরিচালক (অর্থ) এর দপ্তরে তদবির করেন।
রাজউকের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, ডিপোজিট চেয়ে এরই মধ্যে তাদের কাছে ৫০টি আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা তদবির করছেন। অনেকে সশরীরে কর্মকর্তাদের কাছে আসছেন। মঙ্গলবার ও গতকাল রাজউকে সরজমিন হিসাব শাখায় গিয়ে কয়েকটি ব্যাংকের ম্যানেজার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। তাদের বক্তব্য একটাই- আমরা ভালো রেট দিতে চাই।
রাজউকের হিসাব শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো তিন থেকে চার মাস আগেও ৭%-এর বেশি ইন্টারেস্ট দিতে চাইতো না। কিন্তু এখন বেশিরভাগ ব্যাংক ৯% থেকে ১০% পর্যন্ত অফার করছে। এরপরও আমরা অর্থ ডিপোজিট রাখার সাহস করতে পারছি না।
কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, রেটিং অনুযায়ী ‘এ’ ক্লাস, ‘বি’ ক্লাস, ‘সি’ ক্লাস, ‘ডি’ ক্লাস এবং ‘ই’ ক্লাস ব্যাংকের তালিকা যোগাড় করেছেন তারা। ওই রেটিং অনুযায়ী ডিপোজিট দেয়া হচ্ছে। তালিকায় দেখা যায়, ‘এ’ ক্লাস বা স্ট্রং ব্যাংকের সংখ্যা সাতটি, ‘বি’ ক্লাস ব্যাংক ২৭টি, ‘সি’ ক্লাস ব্যাংক ১০টি, ‘ডি’ ক্লাস ব্যাংক পাঁচটি এবং ‘ই’ ক্লাস ব্যাংক তিনটি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ‘এ’ ক্লাসের তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোর দিকে নজর রাখছে বেশি। ‘বি’ ক্লাস ব্যাংকেও ডিপোজিট রাখতে ভয় পাচ্ছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কাজ করতে থাকলে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা বেড়ে যাবে। এটা দেশের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না। মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :