আসিফুজ্জামান পৃথিল : রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা কোন গুপ্ত বিষয় নয়। ইতিহাসের প্রারম্ভ থেকে রাজনীতির স্বার্থে গুপ্তহত্যার মতো অমানবিক ঘটনা চলমান। আধুনিক যুগেও গুপ্তহত্যা ঘটেই চলেছে। সময়ের সঙ্গে শুধু এর ধরণটাই বদলেছে। নিজেদের কাজের অংশ হিসেবে তথা, কৌশলগত সামরিক পরিকল্পনার আওতায় দুনিয়ার পরাক্রমশালী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কমবেশি গুপ্তহত্যা চালায়। পাশাপাশি বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতাও চালিয়ে থাকে সমান তালে।
বিশেষত, রাজনীতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে নাজুক করে তোলার জন্য যা প্রায়শই কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর বিগত অর্ধশতাব্দি ধরে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ গুপ্তহত্যা চালানোকে একটা প্রতিষ্ঠিত রেওয়াজে পরিণত করেছে। যা তাদের সামরিক পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ ও অবধারিত অংশ বলে গৃহীত। এমনিতে সংস্থাটির কোনো অভিযানের অংশ হিসাবে এইসব হত্যাকান্ড ঘটে না, বরং নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যা করার জন্যই অভিযান চালায় মোসাদ। শুধু তাই নয় নিজেদের এই ধরনের কার্যক্রমকে বৈধ এবং সঠিক বলে মনে করেন এই সংস্থার সদস্যরা।
এসব তথ্য উঠে এসেছে ইসরায়েলি সাংবাদিক রোনেন বার্গম্যানের লেখা বই, ”রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট: দ্য সিক্রেট হিস্টোরি অফ ইসরায়েলস টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশনস” এ। তিনি লিখেছেন, এই পদ্ধতি যেমন যুদ্ধকৌশলগত সাফল্য ঠিক তেমনি ভয়াবহ রকমের কৌশলগত ব্যর্থতা।
বার্গম্যান লিখেছেন আরবদের দ্বারা সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদ ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য চিরস্থায়ী বিপদের কারণ। তাই তাঁদের তৈরী করতে হয়েছে একটি অতি উন্নতমানের সেনাবাহিনী, তর্কসাপেক্ষে পৃথিবীর সেরা গোয়েন্দা সংস্থা এবং নি:সন্দেহে ইতিহাসের দুর্ধর্ষতম কিলিং ম্যাশিন। তিনি আরোও লিখেছেন এসব হত্যাকা- ইসরায়েলকে বহুবার নানান বিপদ থেকে রক্ষা করেছে।
তবে বার্গম্যান এই বইটির প্রচারণা সংক্রান্ত একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরায়েল তার ৭০ বছরের ইতিহাসে এরকম ২৭০০টি গুপ্তহত্যা চালিয়েছে, যা অনেকসময় ইসরায়েলের রাজনীতিবীদদের প্রকৃত রাজনীতি এবং কূটনীতি থেকে বিচ্যুত করেছে। কারণ তাঁরা মনে করেছেন সবকিছুই তাঁদের আঙুলি হেলনে হতে পারে।
এই বইটি লিখতে বার্গম্যান ৮ বছর গবেষণা চালিয়েছেন। এজন্য তাকে ১০০০ সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে। এবং তিনি সহায়তা পেয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার হাত ফস্কে বেরিয়ে যাওয়া অসংখ্য গোপন নথির। ব্যক্তিজীবনে বার্গম্যান ইসরায়েলের বৃহত্তম দৈনিক পত্রিকা ইয়াদিওথ আহরনথ এর সাংবাদিক। - টাইমস অফ ইসরায়েল
আপনার মতামত লিখুন :