শিরোনাম
◈ উপজেলার ভোটে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে: ওবায়দুল কাদের  ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘন: ড. ইউনূসসহ ৪ জনের জামিন ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি ◈ ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২৬ ◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১২  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘনের সাজাপ্রাপ্ত মামলায় স্থায়ী জামিন চাইবেন ড. ইউনূস ◈ ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ ◈ স্বাস্থ্যখাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী  ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:১১ সকাল
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সকালে সাংবাদিক, বিকালেই পরিষ্কার গেট

ডেস্ক রিপোর্ট : আমতলার ঐতিহাসিক গেট। সোমবার সকালে তোলা ছবিভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আমতলা গেটটি দীর্ঘদিন থেকেই ছিল অপরিচ্ছন্ন, হকারদের দখলে। বিষয়টি নিয়ে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিকালেই গেটটি পরিদর্শন করে হকারমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে এর সৌন্দর্য বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত আমতলার ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণ থেকে ১৯৫২ সনের ২১শে ফেব্রুয়ারি এই দিনে ছাত্র সমাজ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। উদ্যোক্তা- ভাষা আন্দোলন পরিষদ।’–এটুকুই লেখা রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের পাশের ঐতিহাসিক গেটটিতে। কালো টিনের ওপরে লিখে রাখা এইটুকুই বহন করছে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা গেটটির ইতিহাস। এখন এই গেটটি খোলা হয় না। এর সামনে ফুটপাতে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছে। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা।

বিকালে উচ্ছেদ অভিযানের পর ব্রিফ করছেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালকরাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ) আমতলা ফটক থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার, আবুল বরকত, শফিউর রহমান, আবদুস সালামসহ অনেকেই। অনেক শহীদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঐতিহাসিক এ ফটকটি সংস্কারের মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন তা পড়ে আছে অবহেলা আর অনাদরে।

এখানে প্রতিদিন উপস্থিত থাকা মানুষেরাও জানে না এই গেটটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব। গতবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং শহীদ দিবসে বাংলা ট্রিবিউন এ ‘অবহেলা অনাদরে ভাষা শহীদদের স্মৃতির ফটক’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

আজ সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দৃশ্যপটের কোনও পরিবর্তন হয়নি। গেটটি বন্ধ অবস্থায় রয়েছে এবং এর সামনের ফুটপাতে বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। রাস্তায় রয়েছে ময়লা আবর্জনা।

সামনের দোকানের বিক্রেতা মো. রায়হান আহমেদ (১৮) বলেন, ‘দুইমাস ধরে এখানে দোকান চালাই। এখানে ঐতিহাসিক কোনও ঘটনা আছে কিনা এ ব্যাপারে কিছু জানি না। তবে, শহীদ মিনারে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে মানুষ ফুল দিতে যায় এটা জানি।’

গত ৭/৮ বছর ধরে এখানে পণ্য বিক্রি করেন মনির হোসেন (২৬)। তিনি বলেন, ‘এখানকার ব্যাপারে কিছু জানি না। তবে, শহীদ মিনারে মানুষ শহীদদের জন্য ফুল দিতে যায় সেটা জানি। আমি নিজে কোনও দিন ফুল দিতে যাইনি। আমরা এদিকে ঢুকতেই পারি না। ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ রাত থেকে আমাদের এদিকে ঢুকতে দেয় না। ফেব্রুয়ারির পরে আবার আমাদের দোকান বসতে দেয়।’

মো. বেলাল হোসেন (২২) বলেন, এখানকার ব্যাপারে যেটুকু দেয়ালের বোর্ডে লেখা আছে ঐটুকুই জানি। এর বাইরে কিছু জানি না।’

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, এই গেটের সামনের হকারদের রেগুলারই উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু এটা ধরে রাখা যায় না। উচ্ছেদের এক-দুইদিন পরে আবার দখল করে নেয়। ওখানকার লোকজন যারা আছে প্রতিনিয়ত তারা দখল করে ফেলে। আমরা হাসপাতালের পরিচালককে বলেছি, আপনাদের তো আনসার আছে, তাদের দিয়ে উচ্ছেদ করেন।’ গেটটির আশেপাশে ময়লা আবর্জনা জমে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি জায়গা দিয়েছে, সেখানে ময়লা রাখার ব্যবস্থা হয়ে গেলে এই গেটের আশেপাশে কোনও ময়লা থাকবে না।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গেট বন্ধ আছে কারণ এর ভেতরের দিকে আবাসিক ভবনে আবাসিক সার্জনরা থাকেন। ওই বিল্ডিংয়ের ভেতরে জরুরি চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত চিকিৎসকদের বাসা। গেটটি আমরা এই কারণে খুলি না। গেটটি খুললে পুরো এলাকা যানবাহন দিয়ে ভরে যায়। আমরা গেটটিকে সংরক্ষিত রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘গেটের বাইরে রাস্তার ওপর দোকানপাট আমাদের কনসার্ন নয়। ওটার সিটি করপোরেশন অনুমতি দেয়। আমরা গেটের বাইরে যেতে পারি না। নিরাপত্তাজনিত কারণে আমরা আমাদের দেয়ালের বাইরের বিষয়ে ভাবতে যাই না। আমরা তো গেটটা বন্ধ রেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই পুরনো ভবন ভেঙে নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। সেখানে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত যে ঐতিহ্য আমাদের হাসপাতাল ঘিরে রয়েছে সেগুলো অবশ্যই সংরক্ষণ করা হবে।’

এরপর সোমবার বিকালেই হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এ এম নাসির উদ্দিন ঐতিহাসিক আমতলা গেটটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের জাতীয় চেতনা এবং অনুভূতির জায়গা এটি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাজ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এই জায়গা থেকে মিছিল বের করেছিলেন। তাই এই ঐতিহাসিক জায়গাটি হকারমুক্ত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ শুরু করা হচ্ছে। যাতে এ প্রজন্মের যে কেউ এসে এই স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি দেখে একুশের আন্দোলনের কথা মনে করতে পারেন।’ বিকালেই গেটটির সামনে থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়