শিরোনাম
◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ জিবুতি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে ৩৩ জনের মৃত্যু ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আইনমন্ত্রী মীর্জা গোলাম হাফিজ, খালেদার রায় এবং বিচার ব্যবস্থা

দীপক চৌধুরী : ১৯৯২ সালের কথা। তখন খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী মীর্জা গোলাম হাফিজ। তার একান্ত সচিব ছিলেন এম এ রাজেক। তখন ‘সন্ত্রাস দমন আইন’ ছিলো আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, সে সময় ডিসি-এসপিরা তো বটেই; ওসি-টিএনওরা কথায় কথায় প্রতিপক্ষদের দমন করতে ‘সন্ত্রাস দমন আইনের’ মামলার ভয় দেখাতেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে সবচেয়ে বেশি ভয় দেখানোর একটি অস্ত্র ছিলো এ ‘কালো’ আইন। ছাত্রলীগের কেউ হলে তো কথাই নেই। সে সময় মির্জা গোলাম হাফিজের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎতার গ্রহণ করি আমি।

আজকের কাগজ পত্রিকায় এটি যথাযোগ্যস্থানে ছাপা হয়। এর শিরোনাম করেছিলাম, মন্ত্রীর একটি ‘ডায়ালগ’ দিয়ে। তখন সন্ত্রাস দমন আইনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে মন্ত্রী অনেক কথা বলেছিলেন। খুব সম্ভবত সাক্ষাৎকারটির এরকম শিরোনাম ছিল, ‘আমি মন্ত্রী, আমার যেমন নিরাপত্তা নেই, আপনি সাংবাদিক আপনারও নিরাপত্তা নেই।’ পরদিন জাতীয় সংসদে এই শিরোনামের কারণে বিষয়টি অধিক গুরুত্ব হয়ে উঠলো। জাতীয় সংসদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা আজকের কাগজ পত্রিকা উঁচিয়ে ধরে বলেছিলেন, মাননীয় স্পিকার এই হলো বিএনপি...

তখন কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী দমাতে একের পর এক ‘ডিটেনশন’ প্রথা ছিলো। অথচ, সেই বিএনপি নামে দলের বর্তমান নেতাদের মুখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা অহরহ শোনা যায়। সুশীলদেরও কারো কারো মুখে এই বাক্যটি প্রায়ই প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চান। তো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা যদি চাইবেন, তাহলে স্বাধীনভাবে বিচারকদের কাজ করতে দেবেন না? রায়ের পর ‘সার্টিফাই কপি’ নিয়ে কী শুরু হচ্ছে এখন? জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর সাজা ঘোষণার পর থেকে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা ভাবাপন্ন নেতাদের কণ্ঠে হররোজ আমাদের বিচার ব্যবস্থার ‘শ্রাদ্ধপর্ব’ চলছে।

এক কথায় চলমান বিচার ব্যবস্থা নিয়ে একটা তুঘলকি কা- আর কী। তাদের কেউ কেউ বলেছেন ও প্রতিনিয়ত বলছেন, এটা সরকারের ফরমাশে রায়, সরকারের দেওয়া রায়, কাল্পনিক রায় ইত্যাদি ইত্যাদি। আদালতে যে বিচারক দুর্নীতি মামলার রায় দিলেন তা কীভাবে ফরমাশে রায় হয়Ñ এদেশের মানুষ জানে না। তবে মির্জা ফখরুল, জয়নাল আবেদিন ফারুক, রুহুল কবির রিজভীরা জানেন কি-না কে জানে। ইতিহাস থেকে আমরা পাই, আদালত ও সরকার ব্যবস্থা গুলিয়ে ফেলার কৌশল তো বিএনপি-জামায়াত ভালো জানে। মানুষ হত্যা, গুম করা, বিনাবিচারে মানুষ খুনের সংস্কৃতি বিএনপি আমদানি করেছে ও বাস্তবায়ন করেছে তারা।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সামরিক স্বৈরাচার, স্বৈরাচার, উত্থান ঘটেছিল সেই আমলগুলোতে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সরকারে তখন আইনের শাসন শব্দটির বালাই ছিলো না। ইতিহাস প্রমাণ দেয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এদেশে, এই ভূখ-ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে বিএনপি। এটা ঠিক যে, বিচারকের স্বাধীনতা থাকলেই সুবিচার নিশ্চিত করা যাবে; সম্ভবত একথাটা শতভাগ ঠিক নয়। বিচারকের স্বাধীনতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সততা, যোগ্যতা, জ্ঞানের গভীরতা জরুরি। খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় যে বিচারক দিয়েছেন, তাকে ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় লিখতে হবে।

এজন্য যুক্তিসংগত সময় ও বিচারকের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তাতো যে কেউ বুঝবার কথা। কিন্তু বিএনপি নেতারা বুঝতে চান না। টেলিভিশনে প্রতিদিন প্রতিটি সময় টকশোতে শুধু এটিই আলোচনা। অন্য কোনো বিষয় কী নেই আলোচনার? এমন দীর্ঘ রায়ের কপি পেতে, টাইপ করতে কমপক্ষে ন্যূনতম কতদিন সময় লাগা উচিৎ; এ কথাতো খালেদা জিয়ার আইনজীবীদেরও জানবার কথা। সরকার নাকি ইচ্ছে করেই দেরি করছে! সুতরাং নিজেদের চেনার প্রথম দায়িত্ব হোক বিএনপি নেতাদের। জাল সনদ নিয়ে আদালতে কাজ করা, রায় দিয়ে বিচারক পালিয়ে যাওয়া, বিদেশ থেকে পদত্যাগ পত্র দেওয়া, দুর্নীতির রাহু বিচারকের কাঁধে থাকার ঘটনা, এদেশে বিরল নয়।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়