মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ : ১. গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বড় নীরবে-নিভৃতে চলে গেলেন বাউল শাহ আব্দুল করিমের ১০১ তম জন্মবার্ষিকী। অসীমের দেশে অনন্তলোকে যাত্রার মাত্র অর্দ্ধযুগ যেতে না যেতেই বাউল শাহ আব্দুল করিমকে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। দেশী-বিদেশী ভাঁড় আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের নিয়ে রসাল সংবা-দের ভিড়ে প্রায় হারিয়ে ফেলেছি আব্দুল করিমকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলিতে অনেকই পেশীবহুল নায়কদের অথবা বিনোদিনীদের সাথে সেলফি তুলতে যতটা ব্যাস্ত ছিলেন ততটাই নির্লপ্ত এই সাধককে নিয়ে।
২. সিলেটের সুনামগঞ্জ জন্ম হলেও তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীর কাছে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ১৫০০ গানের রচিতা। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’,গাড়ি চলে না, বসন্ত বাতাসে সই গো, আমি কুল হারা কলঙ্কিনী সহ অসংখ্য গান দিয়ে তিনি বাংলা সংগীত জগতকে ঋদ্ধ করেছেন। নিজের লেখা গানের বই প্রকাশের চেষ্টা করলে পুস্তক প্রকাশকরা বই প্রকাশের খরচের অজুহাতে তাঁর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা দাবী করে। এই দাবির বলি হয়ে তিনি জমি বিক্রি করে আরেকবার নিঃস্ব হয়ে যায়।
৩. তাঁর গান গেয়ে অনেকেই তারকা খ্যাতি পেলেও তিনি উপেক্ষিতই থেকে যান। আজীবন দারি-দ্রের সঙ্গী শাহ আব্দুল করিমের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা সামান্য থাকলেও লালন, পুঞ্জু শাহ, দুদ্দু শাহ সর্বাপরি নিজের অন্তরের আলোকে উদ্ভাসিত ছিলেন। তাঁর লেখায় নিছক ‘তুমি-আমি’ ধরণের প্রেমে কাহিনী নয় বরং অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সামাজিক অসঙ্গতি, শ্রমজীবী মানুষের দিন বদলের স্বপ্ন বার বার এসেছে।
৪. প্রিয় শিল্পী শাহ আব্দুল করিম আপনার কাছে আমাদের অনেক দায়। আপনি ঠিকিই বলেছিলেন ‘ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’- তাই আজ পাথর সময় আমাদের আলোকিত মানুষগুলিকে ঊপেক্ষা করি, নির্লিপ্ত থাকি তাদের মহাপ্রস্থানেও!!!
লেখক : উপ অধিনায়ক, আর্মড ফোর্সেস ফুড অ্যান্ড ড্রাগস ল্যাবরেটরি
সম্পাদনা: রাশিদুল ইসলাম মাহিন
আপনার মতামত লিখুন :