ডা. জাকির হোসেন : ঢাকা আমাদের অনেকেরই প্রিয় নগরী। কাজের প্রয়োজনে কিংবা পৈতৃকসূত্রে বংশপরমপরায় ঢাকায় বসবাস করছেন অনেকেই। এখানে প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষ, কিন্তু বাড়ছে না আয়তন। এর ফলে প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা পেতে নানারকম সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন নগরবাসী। মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা। কেন মিলছে না নাগরিক সমস্যার সমাধান, তারও কোনো নির্ভরযোগ্য উত্তর নেই। অথচ নাগরিক সমস্যা সমাধানে দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পেশাজীবী রয়েছেন। সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এসব পেশাজীবীদের পদায়নের কোনো ধাপ না থাকায় তাদের মতামত সর্বক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে দিনদিন নগরীর সমস্যাগুলো আরও প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে।
বেঁচে থাকতে প্রতিটি প্রাণির ন্যায় মানুষও অক্সিজেন গ্রহণ করে, কার্বণ ডাই অক্সাইড বাতাসে ত্যাগ করে। বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই অক্সিজেন যদি বিশুদ্ধ না হয় তাহলে শরীরে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধী দেখা দেয়। বায়ুর এই দূষণ বিগত একদশক ধরে বেড়ে চললেও চলতি বছর ঢাকার বাতাস সবচেয়ে বেশি দূষিত মনে হচ্ছে। ভয়াবহ এই বায়ু দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ভুগছে। শিশুরা ফুসফুস ও শ্বাস-নালীর শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। বায়ু দূষণে শিশুদের ফুসফুসের র্কাযক্ষমতা অতিমাত্রায় কমে যাচ্ছে।
এছাড়া বায়ু দূষণে শিশুদের শ্বাস কষ্ট, এলার্জি, হাপানি, ব্রঙ্কাইটিস, মাথাব্যাথা, হৃদরোগ ও ফুসফুসের ক্যান্সারও হতে পারে। বায়ু দূষেণের ক্ষতিকর প্রভাবে এ বছর যে পরিমাণ শিশু ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছে বিগত বছরগুলোর তুলনায় তা অনেক বেশি। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে সাধারণত দুই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ভয়ের এবং ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছেÑ বায়ু দূষণের ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দ্রুত রেসপন্স করছে না। শিশুদের নিয়ে কাজ করার ফলে এ অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। এর ফলে কী হচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যাদের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তাদের শক্তিক্ষয় হচ্ছে। ফলে ঝুঁকির মুখে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশই।
এখন করণীয় কি আমাদের, কীভাবে রক্ষা করা যাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে? সচেতনতা খুব জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বেশিরভাগ পিতা-মাতাই বিষয়টিকে খুব গুরুত্বসহকারে দেখেন না। অথচ এখানে অভিভাবকদের সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিতা-মাতা বা অভিভাবকেরা সচেতন হলে শিশুদের এ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পারে। যেমন খুব প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের বাইরে বের হতে না দেওয়া, অপ্রয়োজনীভাবে শিশুদের নিয়ে ঘুরাঘুরি না করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় মুখে মাস্ক পড়া ইত্যাদি।
শুধু পিতা-মাতা বা অভিভাবকেরা সচেতন হলেই হবে না, এজন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঢাকার আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে হাজারও ইট-ভাটা গড়ে উঠেছে, মূলত ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য এগুলোই সবচেয়ে বেশি দায়ী। পাশাপাশি নির্মাণ কাজের ধুলা, ফিটনেসবিহীন গাড়ির ধোঁয়া, অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য রাস্তা খুড়ে অপরিকল্পিতভাবে খোলা আকাশের নিচে বালু ও মাটি ফেলে রাখা বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। বায়ু দূষণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সচেতনতার পাশাপাশি এই পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা : গাজী খায়রুল আলম
আপনার মতামত লিখুন :