শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৪:০১ সকাল
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৪:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যাংকিং খাতের বিপর্যয়: লজ্জায় চেতনা, রবীন্দ্রনাথ কাঁদছেন, মৌলবাদীরা হাসছে

ফাহমিদা হক : জনগণের পবিত্র আমানত ও বিশ্বাসের ক্ষেত্র হচ্ছে ব্যাংক। আমানতের খেয়ানত করে কেউ কেউ যে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়, আর সাধারণ জনগণ যে তার জীবনের শেষ সম্বলটুকু নিশ্চিন্তে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়, তেমনি একটি ঘটনা বলতে চাই। আমার পরিচিত একজন বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাড়ি বিক্রি করে তিন ভাই বোন পুরো টাকাই ব্যাংকে রাখে। নিশ্চিত আমানতের জায়গা ভেবে রাখা টাকা এখন তারা দীর্ঘ তিন মাসেও উঠাতে পারছে না। কারণ ব্যাংকে টাকা নেই। সাধারণ জনগণ শুনে শুনে অভ্যস্ত ব্যাংকে তরল টাকা উপছচ পড়ছে, কিন্তু কোথায় গেল সেই টাকা; এর উত্তর কে দিবে? সময় মতো নিজের অর্থ তুলতে না পারার দায় কার?

দেশে বর্তমানে প্রায় ৫৭ টি ব্যাংক আছে, যার মধ্যে ৯টি বিদেশী। এর মধ্যে ৩০ ব্যাংকেই বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে আবার সরকার নিয়ন্ত্রন করে এমন ব্যাংকগুলোর অবস্হা সবচেয়ে ভয়াবহ। ২০১৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করা ফারমার্স ব্যাংক ঐ আমলে অনুমোদন দেয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ খেলাপির শীর্ষে রয়েছে। যার পরিমান গত জুন পর্যন্ত প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের এপ্রিলে যাত্রা শুরু করা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ১৯১ কোটি টাকা। ফারমার্স ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে, উচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে। আর নিয়ম মেনে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে না পারায় এক বছরে ১৮ কোটি টাকা জরিমানা গুনছে। এখানে উল্লেখ্য পরিস্থিতি এতই খারাপ যে, আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধের ক্ষমতাও নেই, যা যে কোন আমানতকারীর ব্যাংকে আমানত করার আস্থা নষ্ট করার জন্যে যথেষ্ট।

প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মূলধন, যোগান থেকে ঋণ প্রদানসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে যা চুড়ান্ত পর্যায়ে প্রমাণিত হলে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্হা নেয়ার কথা রয়েছে। বিভিন্ন ঋণ অনিয়মের কারণে এসব ব্যাংক ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী, বেসিক, রূপালী, কৃষি, বিডিবিএল ব্যাংকে খেলাপী ঋণের ছড়াছড়ি অবস্হা, যার পরিমান প্রায় বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। মূলত: একারণেই ব্যাংকগুলো চরম আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ সভায় উপস্থাপিত হয় ৩০টি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যাংকিং সেক্টরে গুরুতর সংকটের চিত্র।

প্রায় সবকটি সরকারী ব্যাংকই ঋণখেলাপির ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়েছে। ব্যাংকি খাতের এমন বেহাল দশা থেকে মুক্তির ব্যাপারে সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করতে পারলেও ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা রাখে না বলে এর ব্যবস্থা মন্ত্রনালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংক কেই করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্ভ চুরি, একটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন দূর্বলতা দেশবাসীকে হতাশ করেছে। সরকারকে করেছে বিব্রত। সোনালী ব্যাংকের কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাটে জনগণ প্রতিবাদ করেনি কিন্তু সহজে মেনেও নেয়নি। সর্বশেষ জনতা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির কাহিনী বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামগঞ্জের অতি সাধারণ জনগণ সহ সর্বত্র যা যে কোন দেশের জন্যে অর্থনৈতিক আস্থায় কুঠারাঘাত হানতে বাধ্য।

আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখেছি কেবলমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এমনকি এত ব্যাংক দেশে প্রয়োজন কিনা সেটিও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। শুধু দলীর বিবেচনা থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যাদের অনেকের শিক্ষা-দীক্ষাতো দূরে থাক ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ছিলোনা বলে সংবাদমাধ্যমের খবর বেরিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কর্তাব্যাক্তিদের আমরা দেখেছি নিজ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চেয়ে বেশী ব্যস্ত ছিলেন চেতনা, রবীন্দ্রনাথ আর মৌলবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে।

কিন্তু প্রত্যেকেই কাজ করেছেন এইসব মূল্যবোধের উল্টো। আমরা এখন অর্থমন্ত্রীর হাহাকার শুনি, কিন্তু তিনিও কোন পদক্ষেপ নেননি।ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব ও যোগসাজশের মাধ্যমে লাগামহীন জালিয়াতি, দূর্নীতি ও ঋণ খেলাপির প্রাতিষ্ঠানিকরণ রোধে নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতা,কর্মক্ষমতা,স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত, দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল অরাজকতা দূর করে আমানতকারীদের আস্হা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

লেখক: পরিচালক, সিসিএন/ সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়