শিরোনাম
◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ নির্বাচনের মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৩:০২ রাত
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৩:০২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘ফারমার্স ব্যাংক তলাবিহীন ঝুড়ি, এখানে যা রাখবে তা পড়ে যাবে’

রবিন আকরাম: সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতিতে ডুবে যাওয়া ফারমার্স ব্যাংক উদ্ধারে মূলধনের জোগান দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) প্রথমদিকে রাজি না থাকলেও পরবর্তীতে ওপরের চাপে টাকা দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে শেষ পর্যন্ত যদি যোগান দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় তাহলে এই পাঁচ ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফারমার্স ব্যাংক একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। এখানে টাকা দিলে অবশ্যই ঝুঁকিতে পড়বে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, নতুন অর্থ জোগানদাতারা ঝুঁকিতে না পড়ার কোনো কারণ নেই। যেহেতু ফারমার্স ব্যাংক একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। এখানে যা রাখবে, তা পড়ে যাবে। ব্যাংকটির সৃষ্টি যে উদ্দেশ্যে, শেষ পর্যন্ত তা-ই হল। নতুন ব্যাংকগুলো অনুমোদনের বিরোধিতা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। তবুও নতুন ব্যাংক দেয়া হয়েছে। এখনও অর্থ দেয়া হচ্ছে একই কারণে।

সূত্র জানায়, প্রথমদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ফারমার্স ব্যাংককে অর্থ জোগান দিতে রাজি ছিল না। সে কারণে একটি বৈঠকে হট্টগোলও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের চাপে প্রতিষ্ঠানগুলো রাজি হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যারা বোর্ডে নতুন এসেছেন, তারাই অর্থ জোগান দিতে পারতেন। অন্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে অর্থ জোগান দিলে ঝুঁকির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবুও যদি টাকা দিতে হয়, তাহলে ইকুইটির ভিত্তিতে দিলে কিছুটা শেষ রক্ষা হতে পারে।

সূত্র জানায়, অর্থ সংকটে পড়া নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেয়ার বিষয়ে সভা ডেকেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। তারল্য জোগানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাকে সাড়া দিয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং আইসিবির চেয়ারম্যান ও এমডি এক সভায় যোগ দেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

এ সভার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। গণমাধ্যমের কোনো কর্মীকে প্রধান ভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে সভায় উপস্থিত লোকজনকেও নিষেধ করা হয়।

ওই সভা থেকে বেরিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে বিবৃতি দেবে। তবে এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিবৃতি আসেনি।

সূত্র জানায়, ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতি উন্নত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে। চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম শামীমের পরিবর্তনের পর নতুন করে তাদের টাকা জমা ও মূলধন দেয়ার জন্য বলা হয়। এ উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ওপরের ইঙ্গিতে পর্ষদে পরিবর্তন আসে। নতুন পর্ষদ তারল্য সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেয়। নিজেরা কোনো টাকা না দিয়ে আবারও সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব দেয় ফারমার্স ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলো সংকটে পড়া এ ব্যাংকে নতুন করে টাকা দেয়ার আগ্রহ দেখায়নি। এরপর গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সভা আহ্বান করে চেয়ারম্যান ও এমডিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূলধন জোগানের প্রস্তাব দেয়া হলে ব্যাংকগুলো আরও ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা জানায়। কী পদ্ধতিতে ব্যাংকটিকে সহায়তা করা হবে, তা নিয়ে আরও পর্যালোচনার কথা জানায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলধন জোগানের চিন্তার পাশাপাশি নগদ ধার (কলমানি) দেয়ার কথাও বলেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ব্যাংকগুলো বলছে, আইসিবির নেতৃত্বে জোট গঠন করে অর্থায়ন করা হলে ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনায় অর্থ জোগানদাতা ব্যাংকগুলোর কোনো ভূমিকা থাকবে না। তাই ব্যাংকগুলো মূলধন হিসেবে টাকা দিতে চায়, পাশাপাশি ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদেও বসতে চায়। কারণ নতুন করে ব্যাংকটি খারাপ করলে টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আর অর্থায়নের দায় আসবে বর্তমান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর। তবে ফারমার্স ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ এতে রাজি হয়নি।

আইসিবির চেয়ারম্যান মুজিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফারমার্স ব্যাংককে অর্থ জোগানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থ দিলে ঝুঁকিতে পড়ার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সে দিকটাই দেখা হচ্ছে। কীভাবে ঝুঁকিমুক্ত রাখা যায়, সেটা চিন্তা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ফারমার্স ব্যাংককে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা দিয়ে সহায়তার পক্ষে সম্মতি দেন। তবে কী প্রক্রিয়ায় এ টাকা দেয়া হবে, সেটি নিয়ে আলোচনার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক সভা ডেকেছিল।

এদিকে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতীসহ ফারমার্স ব্যাংকে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। তদন্তের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সংকটে পড়ে ফারমার্স ব্যাংক বর্তমানে গ্রাহকের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় গত নভেম্বরে পদ ছাড়তে বাধ্য হন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকটির এমডি একেএম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদকে চেয়ারম্যান ও মারুফ আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। আবার তাদের সরিয়ে গত জানুয়ারিতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা চৌধুরী নাফিজ সারাফাত। সূত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়