শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:৪১ রাত
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:৪১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মায়ের ভাষা বাংলা, খোদার দান

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির: ভাষা হচ্ছে মানুষের আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা ও ভাব প্রকাশের বাহন। ইরশাদ হচ্ছে, খালাকাল ইনসানাওয়া আল্লামাহুল বয়ান -তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে “বয়ান” শিখিয়েছেন। বাংলা আমাদের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা, রাষ্ট্র ভাষা। এ ভাষার জন্য লড়াই করতে হয়েছিল ৬৫ বছর আগে। তাই ৫২’র ভাষা আন্দোলন জাতীয় ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়।

পৃথিবীতে যেমন নানা দেশ রয়েছে, তেমনি রয়েছে নানা জাতি, গোত্র, বর্ণ, ধর্ম ও ভাষা। এই পৃথিবীতে যত প্রাণী রয়েছে প্রত্যেকের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন। এমনকি একই ভাষা ভাষী মানুষের কন্ঠস্বর, উচ্চারণভঙ্গি পৃথক পৃথক। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, আর তাঁরই (কুদরতের) অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি এবং পৃথক পৃথক হওয়া তোমাদের ভাষা ও বর্ণের নিশ্চয় এতে (কুদরতের) নিদর্শনসমূহ রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য। (সূরা রূমঃ ২২

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে তার দেশের ভাষা প্রিয় ও মধুর। মাতৃভাষা বাংলা আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়। কারণ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলে আনন্দ ও তৃপ্তি পাই। তাছাড়া মাতৃভাষা বাংলা আজ আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। এটা আমাদের বাঙালি জাতির কাছে সবচেয়ে গৌরবের।

আল্লাহপাক হলেন অন্তর্যামী, আমরা যে ভাষাতেই তাকে ডাকিনা কেন তাতে তিনি সাড়া দেবেন। কালামে পাকে রয়েছে নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন। (সূরা বাক্বারা-১৮২) নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শুনেন, সব দেখেন। (সূরা মুজাদালাহ-১) নিশ্চয়ই আল্লাহ পূর্ণরূপে জানেন (তোমাদের ) অন্তর সমূহের কথাও। (সূরা মায়িদাহ-৭)
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী নিজেদেরকে বাঙ্গালী জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ জাতি এবং বাংলা ভাষার চেয়ে উর্দূকে শ্রেষ্ঠ ভাষা হিসাবে মনে করায়, সংখ্যা গরিষ্ঠ লোকের ভাষা ‘বাংলা ভাষা’ হওয়া সত্ত্বেও উর্দূকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষনা করার অপপ্রয়াস চালায়। যার ফলে বাঙ্গালী জাতি সেদিন এই জুলুমের বিরুদ্দে প্রতিবাদ করেছিল সম্মিলিতভাবে এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী (৮ই ফাল্গুন) বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাদের মধ্যে রফিক, বরকত, জব্বার সালাম সহ আরো অনেক। আমরা আজো তাদের ভুলতে পারিনি এবং ভুলবো না।

একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙ্গালীর গৌরব ও ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে আমাদের মাতৃভাষার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হয়েছিল তারই স্মৃতিবিজরিত তারিখ একুশে ফেব্রুয়ারী। আর এরই ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালী ধীরে ধীরে তার অধিকার অর্জনের সংগ্রামে এগিয়ে যেতে থাকে এবং পরবর্তীতে রক্তার্জিত স্বাধীনতার পেক্ষাপটে অভ্যুদয় ঘটে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙ্গালীর জাতীর জীবনে উদ্দীপ্ত চেতনায় প্রতীক। আর এ চেতনা ও বোধের ব্যাপ্তি বর্তমানে শুধু আমাদের জাতীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয় বরং তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

দুঃখের বিষয় আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিকে আমরা অবজ্ঞা করে চলছি। চারদিকে আজ পশ্চিমা এবং হিন্দির আগ্রাসন। তরুন সমাজ পশ্চিমা অশ্লীল সংস্কৃতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে ভাষার ব্যবহার করার কথা থাকলেও আজ সিংহ ভাগ জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। সরকারি বিভিন্ন পদ ও বিচারিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার না করে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাকে উপেক্ষা করে ইংরেজিকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং বাংলাকে ইংরেজি এবং হিন্দির সঙ্গে মিলিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যে মাতৃভাষাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে এ জাতির বীর সন্তানরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছিল, সে মাতৃভাষা বাংলাকে এভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা ভাল লক্ষণ নয়। আমাদের সবাইকে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে আরো সচেতন যত্নশীল হতে হবে।

যে কোন সমাজের ঐতিহ্য, মেধা এবং সংস্কৃতিক বিকাশ ও লালনে ভাষা এক সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। অথচ অযত্ম ও অবহেলায় বহু ভাষা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। এবং বহু ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে। ইউনেস্কোর এ ঘোষনা শুধু “অমর একুশের” স্বীকৃতি নয় বরং পুরো পৃথিবীর সব জাতির মাতৃভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্তে অনেক ভাষা রক্ষা পাবে এবং বৃদ্ধি পাবে মাতৃভাষার মর্যাদা। মাতৃভাষার লালন ও বিকাশের মাধ্যমেই মানব জীবনের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব, যা পক্ষান্তরে দেশ, সমাজ ও বিশে^র জন্য সামগ্রিক কল্যাণই বয়ে আনবে। কলামিষ্ট, সাংবাদিক, গবেষক, ও প্রকাশনা সম্পাদক-বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, কুমিল্লা জেলা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়