শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৮:৫০ সকাল
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৮:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নৈরাজ্য চলছে আলিয়া মাদ্রাসায়

ডেস্ক রিপোর্ট : লুটপাট, জালিয়াতি ও পাবলিক পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম চলছে দেশের এক শ্রেণির আলিয়া মাদ্রাসায়। এ বছরের প্রথম দেড় মাসে যৌন হয়রানিসহ ডজনখানেক অভিযোগের ব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুধু তা-ই নয়, অধিদফতরের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ। মহাপরিচালককে দফায় দফায় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। তবে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ না নেওয়া এবং দায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়ায় নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, অবৈধ নিয়োগ, এমপিও জালিয়াতি, সনদ টেম্পারিং, পাবলিক পরীক্ষার কোচিং ফি’র নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা ধরনের জালিয়াতি ও লুটপাট চলছে বিভিন্ন আলিয়া মাদ্রাসায়। এমনকি যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর।  তিনি বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতি, অবহেলা মেনে নেওয়া হবে না। যত বড় কর্মকর্তাই হোন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের সক্ষমতা কম উল্লেখ করে মো. আলগীর বলেন, ‘যারা তদন্ত করছেন তাদের বেশিরভাগেরই অভিজ্ঞতা নেই। প্রশাসনিক যোগ্যতাও নেই অনেকের। নতুন অধিদফ্তর হওয়ায় দুর্বলতা রয়েছে। তবে দুর্নীতি ও লুটপাটসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে শৈথিল্য ও বাঁচিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে ছাড় দেওয়া হবে না, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন আদেশ ও পত্রে মাদ্রসাগুলোর দুর্নীতির চিত্রে দেখা গেছে অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট ও জালিয়াতি, যৌন হয়রানির চিত্র।
অভিযোগ রয়েছে, নয় বছর চাকরি করার পর ইনডেক্স পরিবর্তন করে ২১ বছরের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে অবসরের টাকা ভোগ করেছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ইউসুফ চৌধুরী আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আবু ছায়েম মোল্যা। শুধু তা-ই নয়, দফায় দফায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও ব্যক্তিগত কারণে মো. আবু ছায়েম মোল্যাকে অব্যাহিত দিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা সুপার আব্দুল ওয়াহাব।

নীলফামারির সৈয়দপুর থানার সোনাখুলি মুন্সিপাড়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ ব ম মনসুর আলী টেম্পারিং করে বয়স কমিয়েছেন দাখিল ও আলিম পরীক্ষার মূল সনদে।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বুড়িরহাট দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. সোহরাব আলী অবৈধভাবে চাকরি নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। একই উপজেলার দক্ষিণ রামখানা রহমতিয়া দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়োগ ও এমপিওভুক্তিতে অনিয়ম করা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জানুয়ারি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রসা শিক্ষা বিভাগ।

চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার জায়েমা আদুদিয়া সুন্নিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসাইনের কাছ থেকে ১৫ বছর আগের আত্মসাৎ করা প্রতিষ্ঠানের ৯৭ হাজার ৪৬৩ টাকা আজ পর্যন্ত আদায় হয়নি। গত ১০ জানুয়ারি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অধিদফতরকে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের বাইতুল ফজল ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার দরিদ্র তহবিলের এক লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং অধ্যক্ষের হাতে থাকা আরও ২৫ হাজার ৫৪১ টাকা মাদ্রাসার তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা ফেরত দেওয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, গত ১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় অধিদফতরকে প্রতিষ্ঠানের অবৈধ অভিভাবক সদস্যের পদ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে।

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার দুমকি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষক সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলনে সরকারি বিধি অমান্য করেছেন। এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ গত ১০ জানুয়ারি মহাপরিচালককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর উপজেলার দক্ষিণ হাটবমুনী এনআই দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমানের সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় চাকরিকালীন উত্তোলন করা টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলেছে মন্ত্রণালয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, কবে এমপিওভুক্ত হয়েছে, কত টাকা ওই শিক্ষক উত্তোলন করেছেন, তা দ্রুত জানাতে হবে।

একইভাবে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার শাহ্ মাজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক তমিজ উদ্দিন সরকারি কোষাগার থেকে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করেছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এই অভিযোগের প্রমাণপত্রসহ অধিদফতরকে পাঠাতে বলেছে মন্ত্রণালয়।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গাজীপুর-কুড়িগ্রাম আলিম মাদ্রাসার গভর্নিং বডির দাতা সদস্য নির্বাচনে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গত ১৭ জানুয়ারি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার চাচইর দারুল ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা দেশের সব মাদ্রাসাকে সতর্ক করে পরিপত্র জারি করার সুপারিশ করেছেন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে পরিপত্র জারি করার বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে গত ৮ জানুয়ারি।

ময়মনসিংহের নান্দাইলের ধুরুয়া ডিএস দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আব্দুল ওয়াহাবের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না করে জোর করে বেতন উত্তোলন, হালুয়াঘাট ডিএস দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান ও গভর্নিং বডির সভাপতির অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামত দিতে বলা হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পটকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মহিউদ্দিন জেলহাজতে থাকলেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেনি কমিটি। গত ১৫ জানুয়ারি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

দুর্নীতি, লুটপাট ছাড়াও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অভিযোগ প্রমাণের পরেও একটি ঘটনায় অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে তদন্তে। এ কারণে মন্ত্রণালয় সুস্পষ্ট মতামত চেয়েছে অধিদফতরের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার ফহেতপুর জে ইউ সি ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তদন্ত কর্মকর্তা অভিযুক্তকে বাঁচাতে গোঁজামিল দিয়ে প্রতিবেদন জমা দেন। এ ব্যাপারে গত ৮ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় সুস্পষ্ট মতামত চেয়েছে অধিদফতরের কাছে।বাংলাট্রিবিউন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়