শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৫:০৫ সকাল
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৫:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডে বিএনপির পতন হলে অখুশি হবে না ভারত

মাছুম বিল্লাহ : ‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে যায়, যেটা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে – তাহলে ক্ষমতাসীন আর বিরোধীদলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য এতটাই কমে যাবে যে, দ্য ইকোনমিস্ট মনে করছে এতে দুই-দলীয় ব্যবস্থাটাই ধসে পড়বে, কারণ খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের কারণে বিএনপির পতনই শুধু ত্বরান্বিত হবে। নয়াদিল্লী এতে অখুশি হবে না ।’

ভারতীয় জনপ্রিয় নিউজ সাইট ক্রল.ইন-  সাংবাদিক ও কলামিস্ট  সোয়াইব ডেনিয়েলের কলামে বিষয়টি উঠে এসেছে। ‘হোয়াট দ্য কনভিকশন অব মেইন অপজিশন লিডার খালেদা জিয়া মিনস ফর ইন্ডিয়া’ অর্থ্যাৎ ‘খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড ভারতের জন্য কি অর্থ বহন করে?’ শিরোনামে লেখা কলামে তিনি লিখেছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের একটি আদালত বিরোধীদলের নেতা খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এক দশক আগে তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সে সময় দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে এই সাজা দেয়া হয়েছে।

জিয়া বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) প্রধান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিলে দেশটিতে অনেকটা দুই দলীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বিদ্যমান রয়েছে। যে সময় তাকে কারাদণ্ড দেয়া হলো, সেই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আগামী ডিসেম্বরে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যেহেতু কারো বিরুদ্ধে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডের রায় থাকলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হবেন, তাই জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের কারণে আসন্ন নির্বাচনে তার দলের অংশগ্রহণই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হয়তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তবে এতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন প্রভাব ফেলবে না। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারা ক্ষমতায় টিকে গেলে সেটা ভারতের জন্যই ভালো হবে।

সহিংস গণতন্ত্র

১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনীতির অংশ হয়ে আছে। দুই দফা সামরিক শাসন দেখেছে দেশের মানুষ, দেখেছে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানের হত্যাকাণ্ড যাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানও রয়েছেন। এছাড়াও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ক্যু প্রচেষ্টা হয়েছে ১৯ বার।

১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো “অবাধ ও মুক্ত” জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দেশটিতে। এতে জয়লাভ করে বিএনপি। কিন্তু, ১৯৯৪ সালে বিরোধী দলগুলো সংসদ বয়কট করে এবং প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ অসহযোগিতা আন্দোলন শুরু করে যেটা এক পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সহিংসতা এবং সরকারের জবাবের ফলে দেশ স্থবির হয়ে পড়ে। এতে করে ক্ষমতাসীন দল বাধ্য হয় বিরোধী দলের দাবি মেনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিতে।

এতে করে দুই দলের প্রধান শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার মধ্যে পুরনো শত্রুতা আরও গভীর হয়। জিয়া সামরিক বাহিনীর জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী এবং আওয়ামী সমর্থকরা মনে করে হাসিনার পিতা মুজিবুর রহমান হত্যায় সে জড়িত ছিল। জিয়াউর রহমান নিজেও ১৯৮১ সালে একদল সামরিক অফিসারের হাতে নিহত হন।

২০০৪ সালে হাসিনার এক সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়। ওই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে দায়ি করে।

প্রহসনের নির্বাচন

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এবার বিএনপি দাবি করছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু দাবি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত প্রধান বিরোধীদলগুলোর বয়কটের মধ্য দিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অর্ধেকেরও বেশি আসনে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হন ভোটগ্রহণ ছাড়াই। পুরো নির্বাচনটি হয়ে দাঁড়ায় প্রহসনের চেয়েও বেশি কিছু।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নয়াদিল্লী হাসিনাকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং নির্বাচনকে সমর্থন দেয়। এতে করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হয় এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গুঞ্জন থেমে যায়। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে সহিংসতায় জড়িত যে সব জঙ্গি গ্রুপ বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে হাসিনা। (বিএনপি সরকার মূলত তাদের উৎসাহ যোগাতো।) দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বেড়ে যায়, যেখানে বাণিজ্যের ভারসাম্য মূলত ভারতের দিকেই রয়েছে। ঢাকা এমনকি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে এর উত্তরপূর্ব অঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নিজের ভূমি ব্যবহার করতে দিতেও সম্মত হয়। দেশ বিভাজনের কারণে যে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়েছিল সেটি কাটিয়ে উঠতে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতের প্রবেশ সহজ করতে এটা সহায়ক হবে।

কক্ষের ড্রাগন

শেষ দিকে অবশ্য হাসিনা তার পররাষ্ট্র নীতি কার্ড খেলায় আরও সাবধানী হয়। বিশেষ করে চীন যে মূলা ঝুলিয়ে রেখেছে, সেটার ব্যাপারেও সম্মত হয় ঢাকা। ২০১৫ সালে, ঢাকার জন্য ২৪ বিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন অনুমোদন দেয়। সেটার সাথে ভারসাম্য রাখতে গত বছর নয়াদিল্লীও ঢাকাকে ক্রেডিট লাইনের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু সেটার পরিমাণ মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। নয়াদিল্লীর জন্য আরও উদ্বেগের বিষয় হলো ২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ, যেটা বঙ্গোপসাগরে টহল দেবে। চীন ও বাংলাদেশের নৌবাহিনী যৌথ মহড়াতেও অংশ নিয়েছে।

এর সাথে রয়েছে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি। ভারতের অর্থনীতি যখন হোচট খাচ্ছে, অর্থনীতি সে সময়ে বিকশিত হয়েছে। ২০১৬ সালে জিডিপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশে। বিজনেস সংবাদ ওয়েবসাইট কোয়ার্টজ এটাকে বলেছে, “বিশ্বের সুখী অর্থনৈতিক গল্পগুলোর একটি”। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ। এই শিল্প শুধু অর্থনীতিকেই মজবুত করছে না, কর্মসংস্থানও করছে ব্যাপক। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, আর সারা বিশ্বে নবম। এছাড়া, ভারতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন এয়ারটেল, রিলায়েন্স এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির অংশ। এভাবেই, নিরাপত্তার বাইরেও ঢাকার সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে নয়াদিল্লী।

যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে যায়, যেটা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে – তাহলে ক্ষমতাসীন আর বিরোধীদলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য এতটাই কমে যাবে যে, দ্য ইকোনমিস্ট মনে করছে এতে দুই-দলীয় ব্যবস্থাটাই ধসে পড়বে, কারণ খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের কারণে বিএনপির পতনই শুধু ত্বরান্বিত হবে। নয়াদিল্লী এতে অখুশি হবে না। চীনের সাথে হাসিনার দহরম মহরম সত্বেও, ভারত তার ফিরে আসা থেকে মূলত লাভবানই হবে। কারণ হাসিনা সবসময় ভারতের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে এসেছে। (এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে যে, দেশের ভেতরে অনেক সময় গুঞ্জন উঠেছে।)

নেপাল ও মালদ্বীপ যখন দৃশ্যত চীনা বলয়ের দিকে সরে যাচ্ছে, ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ঢাকায় একটা পরিচিত চেহারার জন্য নয়াদিল্লী উদ্বিগ্ন হতেই পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়