জুয়াইরিয়া ফৌজিয়া: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে একটা ঘোর রাজনীতি চলছে এবং বর্তমান বিশ্বে এক দেশের সাথে আর এক দেশের সম্পর্ক হয় স্বার্থের উপর নির্ভর করে। এখানে মিয়ানমার এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে ভারত, চীন, রাশিয়া এবং আশিয়ানভূক্ত দেশগুলো মিয়ানমারকে ব্যবহার করছে এবং মিয়ানমার সেটা নিচ্ছে। আর তাদেরই সমর্থনের কারণে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করার মতো সাহস পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অনুপ কুমার চাকমা। বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত নভেম্বরে মাসে প্রত্যাবাসনের এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পরে এদিকে যেমন প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি চলছে, পাশাপাশি এখনো প্রতিদিনই মিয়ানমার থেকে আসছে রোহিঙ্গারা। কারণ আমি নিজেই রাখাইনে অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গাগুলো ঘুরে দেখেছি, সেখানে তাদের থাকার কোনো পরিবেশ নেই। সেখানে তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই, কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই এবং কোনো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও তারা অংশগ্রহণও করতে পারে না। শুধুমাত্র চাষবাস করে কি ওখানে থাকা যাবে। পাশাপাশি তাদের কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা নেই এবং তারা যে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাবে সেই ব্যবস্থাও নেই। কাজেই আমরা যদি সীমান্ত খুলে দিই তারা কিন্তু আসতেই থাকবে।
অনুপ কুমার চাকমা বলেন, হিউম্যান ট্রাফিকের কবলে পড়ে কেনো বাংলাদেশ থেকে মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। নিশ্চয়ই তারা তাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এইগুলো করে। আর রাখাইন অঞ্চলে যে রোহিঙ্গারা তাদের তো অনেক দুরাবস্থার, তাহলে তাদেরওতো একটা স্বপ্ন আছে। আর যারা তরুণ তারা মনে করে তারা বাংলাদেশে আসলে মালেশিয়ায়, সৌদি আরব এবং ইন্দোনেশিয়া যেতে পারবে। আর এই যে একটা স্বপ্ন এটাও কিন্তু তাদের মধ্যে কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, চুক্তি আমাদের করতেই হবে। আর মিয়ানমারের সমস্যা মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু তাদের বোঝা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। আর আমাদের ঘাড়ে এসে যেহেতু পড়েছে তাই আমরা চুক্তির মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আর এটার সাথে যদি আন্তর্জাতিক চাপ থাকে তাহলে মিয়ানমার দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা নিবে। এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যেটা সেটা হচ্ছে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া। আমি যেটা আশঙ্কা করেছিলাম সেটাই হয়েছে তারা একটা তালিকা চেয়েছে এবং সেই তালিকায় তাদের সঠিক নাম, ঠিকানা সবকিছু থাকতে হবে। আর এই তালিকাটা তৈরি করা আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ রোহিঙ্গারা অশিক্ষিত। তারা কিছুই ঠিক মতো বলতে পারে না। তারা তাদের নামের বানান, গ্রামের নাম, জেলার নাম, থানার নাম কিছুই ঠিক মতো বলতে পারে না।
আপনার মতামত লিখুন :