শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৭:০৮ সকাল
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৭:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগে সাবেক-বর্তমান বিএনপিতে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব

ডেস্ক রিপোর্ট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঝিনাইদহ-৪ আসনের (কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহ সদরের আংশিক) মনোনয়নযুদ্ধে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য তরুণ নেতা আনোয়ারুল আজিম আনারের পাল্লা ভারি। তবে টানা ৯ বছরের শাসনামলে এ দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ছাপও স্পষ্ট।

অন্যদিকে তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হবে- হাইকমান্ডের এমন কথিত ইঙ্গিতের পর বিএনপিতে নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। মনোনয়ন দৌড়ে নবীন-প্রবীণ উভয় নেতারাই রয়েছেন সমঅবস্থানে। উভয় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রচার করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহ-৪ আসন গঠিত হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা এবং সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে। এ আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৪৯ হাজার ২৪২ জন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সব নির্বাচনেই এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে

আনোয়ারুল আজিম আনার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর ফলে ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও ধানের শীষের নেতাকর্মীরা এবার আসনটি পুনরুদ্ধারের আশা করছেন।

অন্যদিকে বর্তমান এমপি ও সাবেক এমপির দ্বন্দ্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্ত নেতাকর্মীরা অনেক আগে থেকেই কেন্দ্র ঘোষিত দলের কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করে থাকেন। তবে বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের দাবি, বড় দলে ছোটখাটো বিভেদ থাকবেই, এটা এমন কিছু নয়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম আনার, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠাণ্ডু, কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও কালীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মো. আক্কাস আলী এবং আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শহীদুজ্জামান বেল্টু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ, সমাজসেবক, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা একেএম হারুন অর রশিদ মোল্লা।

আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার ইতিমধ্যে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ভোটারদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কোনো পুলিশ ও গাড়ি ছাড়াই তিনি নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনসংযোগ ও সভা-সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিয়ে থাকেন। এমপি আনার সমকালকে জানান, তার সময়ে গত চার বছরে রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজের একাডেমিক ভবন, স্টেডিয়াম, স্কুল সরকারীকরণ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যা এর আগে কোনো সরকারের সময়ে হয়নি। দল মনোনয়ন দিলে জনগণ আবারও তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে তার বিশ্বাস।

সাবেক এমপি আবদুল মান্নানও তার সময়ে সম্পাদিত উন্নয়ন কার্যক্রমের দৃষ্টান্ত প্রচারের পাশাপাশি মনোনয়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন। তিনি বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই প্রার্থী দেবেন। সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।

মনোনয়নপ্রত্যাশী কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠাণ্ডু সমকালকে বলেন, তিনি দু'বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্যের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে এবার প্রথম দলীয় মনোনয়ন চাইছেন তরুণ নেতা সাবেক পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু। ইতিমধ্যে তিনি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা কালীগঞ্জের মেয়র হিসেবে পৌর এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করে সুনাম কুড়িয়েছেন। ২০০৪ সালে তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় পঙ্গু হয়ে পড়েন। পরে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী এ নেতা সমকালকে বলেন, কালীগঞ্জ পৌরবাসী ভালোবেসে তাকে পৌরসভার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তাদের আশা পূরণ করতে পেরেছেন। সংসদ নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচিত হয়ে তিনি আবারও আগের সুনামের প্রতিফলন ঘটাতে চান।

মো. আক্কাস আলীও এই আসনে অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সামাজিক ও দলীয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে মনোনয়নের প্রত্যাশায় মো. মতিয়ার রহমান মতিও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। নব্বইয়ের দশকের সাবেক এ ছাত্রনেতা জানান, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিভক্ত দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দেবে এবং আসনটি আওয়ামী লীগের দখলেই থাকবে।

এদিকে বিএনপিতে নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব থাকলেও চারবারের নির্বাচিত এমপি শহীদুজ্জামান বেল্টুর রয়েছে শক্ত অবস্থান। সংসদ সদস্য থাকার সময় এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন কাজও করেছেন। বিএনপির অনেকেই মনে করছেন, তাকে মনোনয়ন দিলেই কেবল হারানো আসনটি ফিরে পাওয়া সম্ভব। সমকালকে তিনি জানান, আগামী নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন আবারও পাবেন এবং আসনটি পুনরুদ্ধার করবেন। জেলা বিএনপির সদস্য আলাউদ্দীন আলী জানান, সাবেক এই সাংসদ এখনও সক্রিয়ভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে সক্ষম। অন্য কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিলে আসনটি আবারও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন নতুন মুখ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী এ নেতা জানান, তিনি কোনো গ্রুপিংয়ে নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যদি তাকে মনোনয়ন দেন, তা হলে তিনি নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন।

ওয়ান-ইলেভেন ও আওয়ামী লীগের নয় বছরের শাসনামলের দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে রাজপথে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ। সমকালকে তিনি বলেন, কালীগঞ্জে নিজে উপস্থিত থেকে ঝুঁকি নিয়ে কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি পালন করেছেন। দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান তিনি। মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীর পাশে থেকে কাজ করে দলের বিজয় ছিনিয়ে আনার কথা জানান তিনি।

ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক, সমাজসেবক, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা একেএম হারুন অর রশিদ মোল্লাও দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকার মানুষের মধ্যে দানবীর বলেও পরিচিত তিনি। তার মতে, দলে অন্য নেতাদের কেন্দ্র করে গ্রুপিং-লবিং থাকলেও তিনি মনোনয়ন পেলে তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার সঙ্গেই কাজ করবেন বলে জানান তিনি। সুত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়