নিজস্ব প্রতিবেদক : বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কমিটি এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই দুই কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে পাঁচজন করে।
একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দিয়েছে আদালত।
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পর চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্ন ফেইসবুকে চলে আসার প্রেক্ষাপটে উচ্চ আদালতের এই আদেশ এল।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক তদন্ত কমিটির কাজ হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত, কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, কোন কোন মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে তা খুঁজে বের করা এবং এর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকলে এর শাস্তি কী হওয়া উচিৎ, তা নির্ধারণ করা।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে উপ-সচিব।
ব্যারিস্টার বড়ুয়া বলেন, প্রশাসনিক কমিটির কাজ হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁস প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় এবং ভবিষ্যতে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় যেন এ ঘটনা আর না ঘটে, এর কী কী সমাধান আছে, সেগুলো নির্ধারণ করা।
ড. কায়কোবাদের নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন বুয়েটের অধ্যাপক সোহেল রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক, কম্পিউটার সোসাইটির একজন বিশেষজ্ঞ এবং সিআইডির ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।
আদেশের কপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে বলে জানান ব্যারিস্টার বড়ুয়া। কমিটি দুটিকে সময় দেওয়া হয়েছে ৩০ দিন।
চলতি এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করে নতুন প্রশ্নপত্র দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিচারিক ও প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন এবং প্রশ্ন ফাঁসের অপরাধ দমনে আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়েছিল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রশ্নফাঁসের বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতে বুধবার আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, সিকদার মাহমুদুর রাজি, মো. রাজু মিয়া ও নূর মোহাম্মদ আজমী।
রুলের জবাব দুই সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, আইন সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসি’র সচিব-চেয়ারম্যান, বিটিসিএল প্রধান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক-চেয়ারম্যান, ঢাকা-রাজশাহী, কুমিল্লা-যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল সিলেট, দিনাজপুর উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে।
রিট আবেদনকারী মাহমুদুর রাজি সাংবাদিকদের বলেন, শুনানিতে আদালত বলেছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্নফাঁস যে মহামারি আকার ধারণ করেছে, এটা মাদকাসক্তির চেয়ে একটি বড় ব্যাপার।
আজকে যারা এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার্থী আছে পাঁচ-দশ বছর পরে তারাই বাংলাদেশকে লিড করবে। তাদের অবস্থা যদি এরকম হয়ে যায় তাহলে জাতি কলাপস করার সম্ভাবনা আছে।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও তা আটকানো যাচ্ছে না।
অসহায়ত্ব প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বৃহস্পতিবারই সাংবাদিকদের বলেছেন, বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভবপর নয়।
একদিন আগে তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বারও বলেছিলেন, প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে পরীক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত বহু মানুষের সম্পৃক্ততা থাকায় এই পদ্ধতির পরিবর্তন ছাড়া প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ সম্ভব নয়।
হাই কোর্টের রুলের বিষয়ে সচিব সোহরাব বলেন, আদালত যে আদেশ দেবে আমরা অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করব। আমাদের কোনো নিষ্ক্রিয়তা থাকলে সেই বিষয়ে আমাদের বক্তব্য অবশ্যই আদালতের কাছে উপস্থাপন করব।
আপনার মতামত লিখুন :