ড. মিজানুর রহমান : রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা যে সমস্যার সম্মুখিন হয়েছি এবং বর্তমানে এ সমস্যাটি যে অবস্থায় আছে, বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট না থাকলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষে খুব কঠিন কোন কাজ ছিল না। খুবই সহজ ছিল। বলতে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ব্যাপারে শক্ত একটি অবস্থান নিয়েছে, তবে তাদের এ অবস্থান শুধু বক্তব্য বিবৃতিইে সীমাবদ্ধ। কারণ, অপর পক্ষে রয়েছে ২টি পরাশক্তি চীন এবং রাশিয়া।
আবার আমাদের এ অঞ্চলে ভারতকে বিবেচনায় না নিয়ে কোন সমাধান সম্ভব নয়। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হওয়া সত্বেও তারা বাংলাদেশের পক্ষে শুধুমাত্র নৈতিক সমর্থন দিয়েছে, আর তাদের রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে মিয়ানমারের পক্ষেই। যার ফলে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে যে সমাধান প্রত্যাশিত ছিল অর্থাৎ রেহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা এবং সেখানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, এর কোনটাই কিন্তু আমরা গ্রহণ করতে পারছি না। ওয়ার্লড ফুড প্রোগ্রামে প্রধানমন্ত্রী অবহিত করেছেন, রোহিঙ্গাদের উপর বিশ্ব সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠির যে মনযোগ ছিল, তা দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
অর্থাৎ আমরা এর ভবিষ্যতে কিন্তু খুব একটা উজ্জল দেখছি না। একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি জাতির বোঝা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ কে চলতে হবে। এমতাবস্থায় আমাদের একটি মাত্র কাজ হচ্ছে, কুটনৈতিক ভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব সময় জীবন্ত রাখা। যে কোন ফোরামে আমাদের সুযোগ নেওয়া এবং এই প্রশ্নগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া।
এতকাল বাংলাদেশের উপর যারা চাপ সৃষ্টি করেছে, আমরা যেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেই, তাদের যেন তাড়িয়ে না দেই। তাদের কে বাংলাদেশের সব সময় এই কথাটি বলতে হবে যে, তাদের অনুরোধে বাংলাদেশ যেমন মানবিক কারণে এই কাজটি করেছে, এই দায়িত্ব বাংলাদেশের একার হতে পারে না।
আন্তর্জাতিকভাবেই এই দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে। সুতরাং দুটো পথেই বাংলাদেশকে এগুতো হবে। প্রথমত কুটনৈতিক পথ সুগম করা, দ্বিতীয়ত যে অর্থনৈতিক চাপ বাংলাদেশের উপর এসেছে সে চাপ যেন বাংলাদেশকে এককভাবে সহ্য করতে না হয়। সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল যেন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
পরিচিতি: সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
মতামত গ্রহণ: মাহবুবুল ইসলাম
সম্পাদনায়: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :