শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৪:৩১ সকাল
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৪:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খালেদা জিয়ার রায়, পরিবর্তনের ইঙ্গিত এবং শেখ হাসিনার নিরাপত্তা

দীপক চৌধুরী : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর জেল হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তুঘলকি কা- শুরু হয়েছে। আদালতের বিচারের রায় নিয়ে এমন ‘ঢালাও’ মন্তব্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, মন-মানসিকতা ও বৈশিষ্ট্যই বহন করে। মিডিয়ায় ‘তার কারাবাস দীর্ঘ না সংক্ষিপ্ত হবে’ এর বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। যেন, আদালত নয়; আমরাই জানি কী হতে যাচ্ছে!

১০ ফেব্রুয়ারি (২০১৮) রাতে ৭১ টেলিভিশনে উপস্থাপক মিথিলা ফারজানার সংযুক্ত করেছিলেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুককে। রায় সংক্রান্ত বিষয়ে তার মন্তব্য, ‘কাল্পনিক ও তৈরি করা রায় এটি।’ প্রশ্ন জাগে, ‘কনটেম্পট অব কোর্ট’ তবে কী জিনিস?

মজার বিষয় হচ্ছে, এটা স্বীকার করেন না কেউই যে, বাংলাদেশে অতীতে যা হয়নি তা সম্ভব হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ২ কোটি টাকা আর এমন কী! কেউ কী বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন যে, ১৯৯১-৯২ সালের ২ কোটি টাকা সেই সময়কার ডলারের হিসাবে ইন্টারেস্টসহ এখন প্রায় কত কোটি টাকা হয়? হিসাব তো দরকার। এছাড়া এই সাজা কী কোনো বার্তা বহন করে না? এই সাজাতো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির জন্য কঠিন বার্তা, যেকোনো পদবীর রাজনীতিবিদের জন্যও সতর্ক বার্তা। আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীর জন্যও এমন বার্তা দরকার ছিল।

কেন একথা বলা যাবে না যে, বাংলাদেশে যে দুর্নীতির আখড়া ছিল সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার প্রচেষ্টায় এ সরকার। তার সাফল্যও এটা। এখন প্রবাসীরাও নিশ্চয় বলতে পারবেন, বাংলাদেশে জবাবদিহি করতে হয় সবাইকে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি করার পর সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, এটা আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল না করলেও অপরাধী যত শক্তিধরই হোকÑ বিচার করা হবেই বাংলাদেশে। আমরা পৃথিবীর কাছে বলতে পারব, যারা দুর্নীতি করেন এ দেশে তাদের বিচার হয়, হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এখন আলোচনায় আসছে।

তা হচ্ছে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা ইস্যু। যতদূর মনে পড়ে ২৫ মে, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা সরকারি খরচে আবাসস্থলসহ নিরাপত্তা পাবেন। যে আইনে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেটি হল ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’এর (২০০৯ সনের ৬৩ নং আইন) ধারা ৪এর উপধারা (৩)। দেশের অনেক ভিন্নমতের ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং বিশেষ ধর্মাবলম্বী মানুষ যেখানে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, সেখানে ক্ষমতায় থেকে পরিবার ও নিজের জন্য এমন সুযোগ নেওয়ায় সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেও।

অনেকেই তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না; তিনি এখন বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় অবস্থান করছেন। তাই এ সময়ে তার নিরাপত্তা পাওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত থাকার কথা নয়। জঙ্গি আমদানি, অর্থখরচ, জাতীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্তগুলো কিন্তু একসূত্রে গাঁথা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর অতীতের আক্রমণগুলো বা হত্যা চেষ্টাগুলো দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রতিশোধের আসল কারণ আড়াল করার জন্য কৌশলে তার নিরাপত্তা নিয়ে অযৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছে, প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা হয়েছে নিরাপত্তার বিষয়টি। রাজনৈতিক প্রতিশোধের লক্ষ্যে তাকে টার্গেট করে তার জনপ্রিয়তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।

নানাকৌশলে জনরোষ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্রমাগত মিথ্যাচার চলছেই। তার সাহসী সিদ্ধান্তগুলো খাটো করার সূক্ষকৌশলে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিচ্ছে ‘শয়তানের’ দল। শেখ হাসিনার আমলে বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের বিচার করা; ফাঁসি নিশ্চিত করা; ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা; মৃত্যুদ- দেওয়া’ নারকীয় বিজিবি হত্যাযজ্ঞের বিশ্বকাঁপানো ঘটনার বিচার ও মৃত্যুদ- হওয়ার বিষয়গুলো ভুলে গেলে চলবে না। এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়Ñ খালেদা জিয়ার দুর্নীতির বিচার হওয়া; এর আগে আইন ও আদালতের মাধ্যমে ৬ নম্বর মইনুল রোডের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা। আমি তো মনে করি, তার দুর্নীতি মামলার রায়ের পরবর্তীকাল বাংলাদেশের হিংসাত্মক রাজনীতির বিপরীতে একটি ‘মাইলফলক’ হতে পারে। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার আভিযোগ আনা যাবে আমার প্রতি, কিন্তু সত্যকথা ও বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না।

প্রত্যেক রাজনীতিবিদের স্বীয় মর্যাদার ওপর ভর কওে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখা দরকার। মানুষের স্বপ্ন ফিকে হোক, বর্ণহীন হোক, রাজনীতির ঘূর্ণিঝড়ে তলিয়ে যাক তা জনগণ চায় না। এটা এখন পরীক্ষিত সত্য, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা হওয়ার কারণেই কঠিন জটিল অনেককিছুর বিচার করা সম্ভব হয়েছে। একটি বর্বরোচিত হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে তিনি পরিবারের সকলকে হারিয়েছেন। ’৭৫ এর সেই হত্যাকা-ের শিকার আট বছরের শিশু রাসেলসহ অন্তঃসত্ত্বা নারীও ছিলেন। সে ঘটনার ছ বছর পর যখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তখন থেকে তাকেও হত্যা করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ১৯ টিসহ ২৩ বার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা ও চেষ্টা চালানো হয় ২০০৪ সালে। যে ঘটনা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নামে পরিচিত।

জনগণের সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টার্গেট করার মূল কারণ, কোনো লোভ বা ভয় দেখিয়ে তাকে কোনোভাবেই দমানো যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়জন সৎ, মানবতাবাদী, গণতন্ত্রপ্রেমী, মহান রাষ্ট্রনায়ক বা সরকারপ্রধান জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি তাদের অন্যতম। রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় অসাধারণ দক্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়