জান্নাতুল ফেরদৌসী: বাংলাদেশে ১৫ লাখেরও বেশি শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর ব্যাপক সংখ্যক রোগীর জন্য রয়েছে মাত্র ২৫ জন শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। এদের মধ্যে ২৩ জনই রাজধানীতে, আর বাকি ২ জন চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন চট্টগ্রাম ও রংপুরে। ফলে রোগ নির্ণয় হতে দেরী হওয়ায় নিরাময়যোগ্য হবার পরও মৃত্যুর কাছে হার মানছে ক্যান্সারে আক্রান্ত দেশের ৮০ ভাগ শিশু। প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর বাইরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ১ জন করে শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়নের পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
আক্রান্ত ১৫ লাখের সঙ্গে প্রতি বছর ১৩ হাজার শিশু নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ বাড়তে থাকা আক্রান্তের চিকিৎসায় সরকারের নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আমিরুল মোরশেদ খসরু বলেছেন, যদি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিশু ক্যান্সার রোগীদের পদায়ন করতে পারি তবে আশা করা যায় তারা চিকিৎসা পাবে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদ জাহাঙ্গীর কবির বলেছেন, অনেক অভিভাবকই বলেন, ২ দিন আগেও ভালো ছিল এরই মধ্যে ক্যান্সার হয়েছে? এমন প্রশ্ন নিয়ে তারা ‘না’ শব্দটি শোনার জন্য বিভিন্ন জায়গাতে দৌড়াতে থাকেন এবং এরই মধ্যে ক্যান্সার আরও ছড়িয়ে পড়ে। তখন আর কিছুই করার থাকে না।
মৃত্যু হার কমাতে শিগগিরই রাজধানীর বাইরে চিকিৎসা সেবা ছড়িয়ে দেবার আহ্বান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের।
জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. মোয়াররফ হোসেন বলেছেন, ক্যান্সার আক্রান্ত একটি শিশুকে ঢাকায় নিয়ে আসলে অনেকদিন সময় দিতে হয়। অনেকের পক্ষেই এতদিন ঢাকায় অবস্থান করা সম্ভব হয় না। এজন্য আমাদের চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শিশু ক্যান্সারের ৭৫ ভাগই নিরাময় সম্ভব। অথচ আর্থিক সমস্যা, সচেতনতার অভাব, চিকিৎসকের তীব্র সংকটসহ নানা কারণে আক্রান্তের ৮০ ভাগের রয়ে যাচ্ছে চিকিৎসার বাইরে।
রেডিয়েশন অনকোলজি ইউনাইটেড হাসপাতালের পরামর্শক অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা বলেছেন, শিশুদের ক্যান্সারের ১০ থেকে ১৫ ভাগ বংশগত কারণে হয়। শরীর বৃদ্ধি, টিউমার হওয়া এবং বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে তিনটি জিন মূলত দায়ী। শিশুরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চোখের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, স্নায়ু ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ও ব্রেইন ক্যান্সার। এ ছাড়া ব্লাড ক্যান্সার ও হাড়ের ক্যান্সারও হতে পারে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. মমতাজ বেগম বলেছেন, প্রতিবছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগীর মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টিআলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদাম মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।
প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী শিশু ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়। সূত্র: সময় টিভি, এনটিভি
আপনার মতামত লিখুন :