শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৫৩ সকাল
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নেতাদের ফটোসেশন কর্মীদের সেলফি ম্যানিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট  : ফটোসেশন ও সেলফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপিসহ দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। রাজপথের কর্মসূচির চেয়ে সংবাদ সম্মেলনেই বেশি আগ্রহ নেতাদের। রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকলে নেতাদের ভিড় জমে ওঠে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে দাঁড়িয়ে যান সিনিয়র নেতাদের পেছনে। জুনিয়র নেতাদের ধাক্কাধাক্কিতে অনেক সময় বসতে পারেন না সিনিয়র নেতারা। উদ্দেশ্য একটিই, টেলিভিশনের ক্যামেরায় নিজের চেহারাটা এক ঝলক দেখানো।

টেলিভিশনে সংবাদ সম্মেলনের খবরে নিজের মুখটি যেন দেখানো হয় তার জন্য করেন দেনদরবার। নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ও ব্রিফিংয়ের সময় পরিস্থিতি এতটাই অসহনীয় হয়ে ওঠে যে সংবাদকর্মীরা দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত পান না। প্রায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তরুণ নেতারা। মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ পর্যন্ত তারা শোনেন না। অথচ রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নয়াপল্টনে ব্রিফিংয়ের সময় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের পাশে বসার নেতা মেলে না। আন্দোলন কর্মসূচিতে রাজপথে দেখা মেলে না বেশিরভাগ নেতার। অন্যদিকে বিএনপিসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সেলফি ম্যানিয়া।

দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, এ ফটোসেশন ও সেলফি আসক্তি নেতাকর্মীদের অলস ও প্রচারমুখী করে তুলছে। তারা নিজেরা অনিরাপদ হয়ে পড়ছেন। একজনের সেলফি বিপদ ডেকে আনতে পারে তার অন্য সহকর্মীর। একটি আন্দোলন মুখর গণতান্ত্রিক দলের জন্য নেতাকর্মীদের এমন মনোভাব সুখকর নয়। এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দলকে ভালোবাসতে পদ লাগে না, মিটিং-মিছিলে সেলফি তুলতে হয় না। এসব যারা করে তারা কর্মসূচি পালনের চেয়ে আত্মপ্রচারে বেশি মনোযোগী। নেতাকর্মীদের বুঝতে হবে, ছবি তুলে প্রমান রাখতে হয় না; আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থাকলে সহকর্মীরাই তার প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়।

নেতারা বলছেন, মিছিলে গিয়ে স্লোগানের বদলে অনেকেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। সমাবেশে গিয়ে নেতাদের বক্তব্য শোনার চেয়ে তাদের ব্যস্ততা সেলফি তোলায়। জানাজায় গিয়েও সহকর্মীর কফিন পেছনে রেখে সেলফি তুলতে দ্বিধা করেন না তারা। বকশী বাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত প্রাঙ্গণের দৃশ্যও একই। খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে পড়াশোনা বা অন্যদের যুক্তিতর্ক শোনার চেয়েও অনেক আইনজীবী ব্যস্ত থাকেন সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আবার কখনো গ্রুপ সেলফি তোলায়। ৮ই ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার সময় তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দেন। তার গাড়িবহরে। বহর মগবাজার মোড়ে পৌঁছলে প্রথম দফা হামলার মুখে পড়ে। টেলিভিশনে প্রচারিত খবরের দৃশ্যে দেখা গেছে হামলার সময়ও বহু কর্মী ব্যস্ত ছিলেন সেলফি তোলায়। তবে সব সেলফিকে হার মানিয়েছে প্রিজন ভ্যান ধরে তোলা সেলফি। ৩০শে জানুয়ারি আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হলে বিএনপির তিন নেতাকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশের প্রিজন ভ্যানের দরজা ভেঙে আটকদের ছাড়িয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে, সে ঘটনার সময়ও সেলফি তুলছেন একজন। প্রিজনভ্যান ধরে তোলা তার সেলফিটি ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেলফিটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় তোলে সে সেলফি। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালানোর ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অনুপ্রবেশকারী বলে দাবি করেন। একই মত পোষণ করে পাবনা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ লিখেছেন- ‘যাকে লীগের মিছিলে দেখি, সেই আবার ছাত্রদলের মিছিলে সামনের সারিতে থেকে সেলফি তুলে।’

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের পরদিন বাইতুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিএনপি। মিছিলে বিএনপি নেতাদের হই-হুল্লোড়ের মধ্যে দেখা যায় কয়েকজন নেতাকর্মী সেলফি তুলছেন, আবার ফেসবুক লাইভ চালু করে মিছিলে এগোচ্ছেন কয়েকজন। এ নিয়ে সমালোচনা করে দলের কর্মীদের অনেকেই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন- ‘খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে সেলফি তোলার ধুম।’ জিএম সালাহউদ্দিন কাদের আসাদ মিছিলে সেলফির মাধ্যমে তোলা ছবির নতুন নাম দিয়েছেন- ‘মিছিলফি’। আল মামুন নামে একজন সেলফিবাজ কর্মীদের ব্যঙ্গ করে লিখেছেন- ‘বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের অংশ হিসাবে কালারফুল শার্ট পরে সেলফি স্পেশাল মোবাইল হাতে নিয়ে মিছিলে উপস্থিত হয়ে গেছি, এখন শুধু সুযোগ বুঝে নেতার সাথে সেলফি তুলতে পারলেই আওয়ামী লীগ-এর নগ্ন হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ কমপ্লিট হয়ে যাবে!’ ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে সেলফি তুলতে তুলতে বিএনপির এক কর্মী বলছেন, বিক্ষোভ মিছিলে এসেছি টিভি ক্যামেরায় না দেখালে তো কেউ সহজে বিশ্বাস করবে না। তাই প্রমাণ হিসেবে সেলফি তুলেছি। ফেসবুক লাইভও করেছি।

 

মোহাম্মদ শাহেদ নামে এক ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মৃত্যুর মিছিলে শরিক হওয়া মানে দেশ এবং সংগঠনের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ, শহীদের জানাজায় সেলফি এবং ফটোসেশন কি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিছিলের ছবি পোস্ট করে অনেকেই লিখে দেন- এইটা সেলফি মার্কা মিছিল নয়।’ বিএনপির এক নেতা বলেন, আমরা এখনো ইমোশনাল রাজনীতিতে পড়ে আছি। নেতা দেখলে সেলফি, মিটিং-মিছিলে গেলে সেলফি এমনকি লাশের সামনে সেলফি তুলেও রাজনীতিতে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চাই। এম হায়দার আলী নামে এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক লিখেছেন, ‘সেলফি রোগে আক্রান্ত দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল! সব দলের সব নেতারাই চায় মিছিলের সামনের সারিতে থেকে যব্বর একখান ছবি খিচতে! বর্তমানে প্রতিটি দলই নেতা কেন্দ্রিক, দলে কোনো কর্মী নেই, সবাই নেতা! যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা মিছিলে সবাই বড় বড় নেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকে। ভালো একটা সেলফি তুলতে পারলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বাকি যারা থাকে তারাও মিছিল শেষে তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ছবি আপলোড করে নিজের নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়ে নিজেকে বড় নেতা হিসেবে জাহির করতে চায়।

 

ভবিষ্যতে এই সেলফি রোগকে মোকাবিলা করে দলকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে করণীয় ঠিক করতে হবে। মিছিল-মিটিং সেলফি তোলা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনা থাকলেও ভিন্নমত পোষণ করেন জাতীয়তাবাদী ধারার লেখক এম এম ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যারা মিছিলে এসে সেলফি দেয় তারা অবশ্যই আমার চেয়ে ভালো। কারণ আমি ঘরে বসে ফেসবুকে প্রতিবাদ করি। আমি তাদের জন্য গর্ব অনুভব করি যারা বন্দুকের নল উপেক্ষা করে রাজপথে নামে।’ তবে, বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলেন, রাজপথের কর্মসূচিগুলো কাঙ্ক্ষিতভাবে জোরদার না হওয়ার পেছনে নেতাকর্মীদের এ ফটোসেশন ও সেলফি ম্যানিয়া একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেতারা এখন আর সংগঠিত হয়ে রাজপথে নামতে চায় না। গলিপথে ফোনে কয়েকজন কর্মীকে জড়ো করে। একই সঙ্গে দু’একটি টেলিভিশন চ্যানেলে খবর দেয়। টিভি ক্যামেরার সামনে এক মিনিটের ঝটিকা মিছিল করে দ্রুত কেটে পড়ে। পরক্ষণেই তা পোস্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মিছিলের তথ্য পাঠায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।

বিগত দিনে আন্দোলনের সময় টেলিভিশনের গাড়ি ফলো করে মিছিলের আগেই বা মিছিল থেকে বহু নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। নেতারা বলেন, দলের এমন কিছু নেতাকর্মী রয়েছেন যারা সুসময়ে ব্রিফিংয়ে ভিড় করেন, দুঃসময়ে তাদের দেখা মেলে না। অনেকেই দু’একটি ছবি তুলেই আন্দোলন সেরে মেতে উঠেন আত্মপ্রচারণায়। ফাঁফা প্রচারণার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চান নিজের পদ-পদবী। নেতারা বলেন, এক সময় মিছিলের গর্জনে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হতো, মিছিলে সরকারের ভিত কেঁপে উঠতো আর এখন মিছিলে প্রাণ নেই। আগে পিছে তাকিয়ে দুই একটা সেলফি এর পরেই দায়িত্ব শেষ। এখন নিজেদের কণ্ঠ শুনে নিজেরাই ভয় পায়।

উৎসঃ মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়