দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফেরার পথে শনিবার তিনি এ কথা বলেন বলে খবর বিবিসির।
পিয়ংইয়ংয়ের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার বিষয়ে ওয়াশিংটন ও সিউলের মধ্যে পূর্ণ সমঝোতা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দশককাল ধরে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবারের অলিম্পিককে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এ বিষয় থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের হাতে উত্তরের শীর্ষ নেতার আমন্ত্রণপত্রও পৌঁছেছে। ওই পত্রে দক্ষিণের প্রেসিডেন্টকে পিয়ংইয়ংয়ে গিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন উত্তরের নেতা কিম জং উন।
শেষ পর্যন্ত এটি ঘটলে তা হবে কয়েক দশকের মধ্যে দুই কোরিয়ার শীর্ষ নেতাদের প্রথম কোনো সম্মেলন। আমন্ত্রণ গ্রহণ করে মুন বৈঠকটি ‘অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি উত্তর কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতেও উৎসাহিত করেছেন।
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক কর্মসূচির ধারাবাহিকতা দুই দেশের কাছে আসার সম্ভাবনাকে ফের অসম্ভব করে তুলতে পারে।
মার্কিন প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ সব ধরনের চাপ অব্যাহত রাখতে চায়। প্রায়ই উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা উনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাকযুদ্ধেও জড়াতে দেখা গেছে।
দেশে ফেরার পথে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলা পেন্সের কথাতেও ছিল একই সুর।
“যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বাদ না দিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, প্রজাতান্ত্রিক (দক্ষিণ) কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই,” বলেন তিনি।
শনিবার শীতকালীন অলিম্পিক শুরুর দিন সিউলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে দুই কোরিয়ার নেতাদের মধ্যে হওয়া ঐতিহাসিক এক বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিমের হাতে লেখা আমন্ত্রণপত্র মুনের কাছে হস্তান্তর করেন কিমের প্রভাবশালী বোন কিম ইয়ো জোং।
জোং ও উত্তর কোরিয়ার আলঙ্কারিক রাষ্ট্রপ্রধান কিম ইয়ং নাম এখন দক্ষিণ কোরিয়া সফরে আছেন। ১৯৫০-র দশকের কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাওয়া সবচেয়ে শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উত্তরের এ আমন্ত্রণ গ্রহণ করে মুন খানিকটা বেকায়দাতেই পড়েছেন; মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে উত্তরের ‘মিষ্টভাষ্যে বিমোহিত না হতে’ সতর্ক করেছে।
জনসম্মুখে দুই দেশই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও ভেতরে দুপক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা রয়ে গেছে বলে ধারণা তাদের।
শুক্রবার অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ কাছাকাছিই বসেছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স ও উত্তর কোরিয়ার জোং এবং নাম।
উত্তর ও দক্ষিণের ক্রীড়াবিদরা যখন এক পতাকার নিচে মার্চ করে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনও পেন্সকে তার আসনেই বসে থাকতে দেখা গেছে; উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নৈশভোজও এড়িয়ে যান তিনি।
পরে টুইটারে দেওয়া বক্তব্যে উত্তর কোরিয়া বিষয়ে বর্তমান প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
এবারের শীতকালীন অলিম্পিকের আলো প্রায় পুরোটাই নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন কিম ইয়ো জোং। ৩০ বছর বয়সী এ নারী গত বছর উত্তরের ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোতে পদোন্নতি পান। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত চলা যুদ্ধের পর তিনিই দক্ষিণ কোরিয়ায় আসা কিম পরিবারের প্রথম সদস্য।
শনিবার কিম ইয়ং নাম ও মুন জায়ে ইন একসঙ্গে বসে দুই কোরিয়ার যৌথ আইস হকি দলের খেলা উপভোগ করেন। ওই খেলায় দুই কোরিয়ার একত্রিত দল সুইজারল্যান্ডের কাছে ৮-০ গোলে পরাজিত হয়। সূত্র : বিডিনিউজ
আপনার মতামত লিখুন :