শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৪১ দুপুর
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৪১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খালেদা জিয়ার জেল, অতঃপর…

সাম্য শরিফ : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দলটি টিকে থাকবে কি? অথবা, বিএনপির প্রথম সারির ৫০০ নেতা জেলে গেলে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে কি ? এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ইতিহাসবোধসম্পন্ন প্রতিটি মানুষের কাছে প্রশ্ন দুটি অবান্তর। অবান্তর এ কারণে যে ৪০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত দলটিকে এদেশের জনগণ কখনো তাদের ম্যান্ডেটে তৃতীয় স্থানে নিয়ে যায়নি। সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, প্রতিটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি কখনো প্রথম আবার কখনো দ্বিতীয় হয়ে এদেশের জনগণের রাজনৈতিক ভাবনায়, বিশ্বাসে ও অস্তিত্বে মিশে রয়েছে রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায়, পাড়ায় ও বংশে। এরুপ বাস্তবতা থাকা সত্ত্বেও বিএনপি বিরোধী কারো কারো দৃষ্টিভঙ্গী এমন যে অভিধানে যত রকম খারাপ বিশেষণ আছে দলটির প্রতি তার সবগুলো আরোপ করেও যেন তৃপ্ত হতে পারেন না। আবার বিএনপিতেও এমন সমর্থক রয়েছেন যারা প্রতিপক্ষের প্রতি একইরুপ বিরুপ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন। এ মানুষগুলো প্রতিপক্ষ দলের বিলুপ্তিও কামনা করেন যদিও ইতিহাস ও বাস্তবতা হচ্ছে এদেশের প্রধান দুটি দলের একটি কখনো বিলুপ্ত হবে না। ইতিহাস পরিক্রমায় হয় দুটোই বিলুপ্ত হবে, না হয় দুটোই টিকে থাকবে। যতদিন একটি পক্ষ টিকে থাকবে, ততদিন অন্যটিও থাকবে। জনপ্রিয়তায় প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হয়ে, কখনো তৃতীয় হয়ে নয়।

খালেদা জিয়া জেলে, এখন কি হবে? এটাই এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হবার পর প্রথমে আসে বিএনপির নেতৃত্বের বিষয়টি। নিঃসন্দেহে প্রয়োজন হলে সে কাজটি করবেন তারেক রহমান। দলের গঠনতন্ত্রে ও দলটির সমর্থকদের ভাবনায় অন্য কোনো বিকল্প নেই। আর স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটিতো রয়েছেই। তারা নিশ্চয় এই বিশেষ সময়ের জন্য বিশেষ সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রয়োজনে বিশেষ কমিটিও করতে পারেন। আবার জোবায়দা রহমান দেশে এসেও জনসভাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। যে কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের কারণে দলটি লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কিন্ত টিকে থাকা না থাকা নির্ভর করে না। প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দলের টিকে থাকা ও বিকশিত হওয়া নির্ভর করে জনসমর্থনের উপর, নেতৃত্বের কারণে নয়। যে কোনো বড় দলের নেতৃত্ব হচ্ছে সমুদ্রে ভাসতে থাকা ঢেউ এর মত। পানি থাকলে তবেই ঢেউ-এর অস্তিত্ব থাকে, ঢেউ-এর জন্য পানি না, পানির জন্য ঢেউ। নেতৃত্ব হচ্ছে ঢেউ, পানি হচ্ছে জনসমর্থন। বিএনপির ৫০০ নেতা নয়, জনসমর্থনই বিএনপি।

খালেদা জিয়া জেলে গেলে বিএনপি ভেঙ্গে যাবে কিনা এরকম প্রশ্নও কারো কারো মনে। ১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর ধরেই নিয়েছিলেন যে বিএনপি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিএনপির টিকিটে পাশ করা অনেক এমপিকে প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে দলছাড়া করে জাতীয় পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ আট বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে চেষ্টা করেছিলেন বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে। ’বিএনপি (ওবায়েদ)’, ’বিএনপি (হুদা-মতিন)’ এরকম ব্রাকেটবন্দি ষড়যন্ত্রের আবির্ভাব হয়েছিল । অথচ ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন হয়ে পরবর্তীতে আপসহীন খেতাব পাওয়া খালেদা জিয়া, তাকে ঘিরে থাকা ছাত্রদল এবং সারা দেশে বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ নেতা, কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের কারণে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি আবার ক্ষমতাসীন হয়েছিল। মাত্র চার বছর বয়সী বিএনপিকে আট বছরের অব্যাহত রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার তখন বিএনপির জনপ্রিয়তায় তিল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারেনি।

মইন ইউ আহমেদের দুই বছর ছিল বিএনপির জন্য বিভীষিকাময়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংস্কারপন্থী সৃষ্টি করে দলটিকে ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল হিসেবে খালেদা-খন্দকার দেলোয়ারের বিএনপির পরিবর্তে চাপ প্রয়োগ করে গুটিকয়েক সংস্কারপন্থী দিয়ে সাজানো ও চক্রান্তমূলক কমিটিকে মূল দল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, কোকো ও তারেক রহমানকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করা, সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি, নির্যাতন ও ঘরছাড়া করা এসবই ছিল বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার নীল নক্সা। আর এখন সারাদেশে বিএনপিতে কে কেমন নেতা তা মাপার স্টান্ডার্ড হচ্ছে কার নামে কয়টা মামলা আছে তার সংখ্যার উপর। অনেকের নামে আবার শতাধিক মামলা রয়েছে। এতকিছুর পরও কেউ বিএনপি ছেড়ে যায়নি, হতোদ্যম হয়ে রাজনীতি ছেড়ে দেয়নি এবং দলে কোনোরুপ ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়নি, জনপ্রিয়তাও হ্রাস পায়নি। নিকট অতীতের কয়েকটা নির্বাচন হওয়া এবং না হওয়া থেকেই বিএনপির জনপ্রিয়তার বিষয়টি বোঝা যায়।

প্রায় চৌত্রিশ বছর একটানা বিএনপির চেয়ারপারসন থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে যদি কারাবরণ করতে হয় তাহলে দলটির জন্য তার নেতিবাচক প্রভাবের চেয়ে ইতিবাচক প্রভাব হবে কয়েকগুণ বেশি। ৩ ফেব্রুয়ারি লা মেরিডিয়ানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় বেগম জিয়াকে নিয়ে এযাবৎকালের সবচেয়ে আবেগী স্লোগান ”আমাদের নেত্রী আমাদের মা, জেলে যেতে দেব না” বারবার উচ্চারিত হয়েছে। তাই বেগম জিয়ার জেল হবার পর দলটির প্রতিটি স্তরের নেতা, কর্মী ও সমর্থকবৃন্দের মনে তাদের প্রিয় নেত্রীর প্রতি যে সহানুভুতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে নেত্রীর পাশাপাশি দলটির প্রতিও কয়েকগুণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়ে যাবে। এরুপ পরিস্থিতিতে তারা দলের জন্য যে কোনও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তত হয়ে যাবেন। বিএনপির যারা এত দিন নিষ্ক্রীয় বা কম সক্রিয় ছিলেন তারাও সক্রিয় হয়ে যাবেন। যে যেভাবে পারে অবদান রাখতে এগিয়ে আসবেন। দল ভেঙ্গে যাওয়ারতো প্রশ্নই আসেনা বরং যারা সংস্কারপন্থী হওয়ার কারণে দল থেকে দুরে রয়েছেন তারাও যেমন দলে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে যাবেন, দলটির নেতৃত্বও তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার তাগিদ অনুভব করবেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাথে এক সাথে রাজনীতি করা যারা বিভিন্ন কারণে বিএনপি ছেড়ে অন্য দল করেছেন তারাও হয়ত আর এমন সময়ে দলের বাইরে না থেকে আবার ঘরে ফিরে আসবেন কিংবা বিএনপির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও বিএনপিপন্থী সকলেই একাট্টা হয়ে যাবেন। তাই বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার পর তা দলটিকে ক্ষতিগ্রস্ত নয়, বরং আরও সুদৃঢ় করবে।

E-mail: [email protected]

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়