রবিউল আলম : পৃথিবীর ইতিহাসে কত আজব আজব ঘটনাই না ঘটে, কিছু কিছু ঘটনা ইতিহাসে স্থান করে নেয়। কত শত ঘটনা নিরবে নিভৃতে হারিয়েও যায়। দেশের জন্য, জাতির জন্য, স্বাধীনতা অর্জণের জন্য, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কোটি কোটি মানুষ জীবন দিয়েছে এবং ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে তা আমরা দেখেছি এবং এটাও দেখেছি বাঙ্গালি জাতি স্বাধীনতার জন্য জাতির জনকের স্থান দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি উপহার দিয়েছে বিবিসি’র মাধ্যমে। বাঙ্গালি পারে না এমন কি আছে। কত শত, হাজার, লক্ষ, কোটি অর্জণ আছে বাঙ্গালির। পলাশির মাঠে হারানো স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান।
বাঙ্গালি অকৃতজ্ঞ নয়, প্রতিদানে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনাকে বুকে ধারন করেছে, মুজিব হত্যার বিচারে সম্মতি দিয়েছে, মীরজাফরের গোষ্ঠীকে ভোটের মাধ্যমে প্রতিহত করেছে। স্বাধীনতা অর্জণে সহায়তার জন্য আজও ভারতের পাশে থেকে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে চলছে বাঙ্গালি। বাঙ্গালির চেয়ে মাটির মানুষ খুঁজে পাবে নাকো তুমি, যদি তার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ না করে কোন রাষ্ট্র। যদি বাঙ্গালির মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে না চায় ততক্ষন পর্যন্তু প্রতিদান দিতে জানে। হায়েনার দল চেষ্টা করেছিল মুখের ভাষা কেড়ে নিতে, বাঙ্গালি ক্ষমা করে নাই, রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে তা জানা ছিল না মানব জাতির ইতিহাসে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে, জীবন দিয়েছে ও নিয়েছে অনেক নজিরই আছে।
ভাষার জন্য জীবন একমাত্র বাঙ্গালিই দিয়েছে। ১৯৫২ সালে একদল বাঙ্গালি সান্ধ্য আইন ভেঙ্গে রাজপথে নেমে আসে পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে, এক এক করে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করছেন। যাও কয়েকজন ভাষাসৈনিক জীবিত আছেন, তার মধ্যে আব্দুল গাফফার চৌধুরী অন্যতম। হাজার, লক্ষ, কোটি সালাম প্রতিজন ভাষা সৈনিকের চরনে। ৫২তে আমার জন্ম হয় নাই, জন্ম ১৯৫৭ সালে ভারতের আসাম রাজ্যে, ভাষায় একজন বাঙ্গালি। ভাগ্য সহায়, পূর্বপুরুষদের স্বাধীনচেতা মনের জন্য ৬৩তে স্বদেশ, ৭১-এ স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তার জন্য গর্বিত। রায়ের বাজারে অবস্থানের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবিদের লাশ বহন করার সৌভাগ্য আর দূর্ভাগ্য যাই বলেন আমার হয়েছিল। ভাষা সংগ্রামে অংশগ্রহণ না করতে পারার অপূর্ণতা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে মনে হয়।
আজও বাংলা ভাষাপ্রেমী ও বাঙ্গালি হয়ে গর্ববোধ করি। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় কোটি কোটি বাঙ্গালির সাথে একসাথে বলতে পারি, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। ভুলিতে পারি না আমার দেশ, ভুলতে দেয়না দেশের উন্নয়ন, চিনতে পারি না ফেলে আসা হায়েনার দলের ছোবল। শেখ হাসিনার বদৌলতে আজ বাংলাদেশ সোনার বাংলা হয়েছে। পরাধীনতায় থাকা কিছু অমানুষ ক্ষমতার জন্য আবার পরাধীনতা ফিরিয়ে আনতে চায় এবং বাঙ্গালির ভাষা কেড়ে নিতে চায়। সারা বিশ্ব যখন বাংলা ভাষা নিয়ে মাতৃভাষা দিবস পালন করছে, তখন এ দেশের কিছু এতিমখানা, মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাইতে অস্বীকার করছে। জাতির কষ্টার্জিত অর্থে মাদ্রাসা চলছে, জাতীয় সংগীত গাইতে পারবে না, এ কেমন কথা।
বাংলা ভাষা সর্বস্তরে চালু করতে হবে - এ স্লোগান আজও রাজপথে দিতে হয়, এ লজ্জা আমাদের, এ লজ্জা জাতির, এই লজ্জা এ দেশের। বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম এখনো করতে হবে কেন ? প্রশাসনের অসহযোগিতায় সরকারের অনেক সংস্থায় এখনও বাংলা চালু করা যায় নাই। ফেব্রুয়ারি আসলে তর্জন গর্জণ শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি চলে গেলে সব ভুলতে হয়, আর নয়। এই ফেব্রুয়ারি থেকে শপথ হোক, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :