জসিম উদ্দিন আকন্দ রনি : বহু চর্চিত জিয়া অনাথ আশ্রম (এতিমখানা) দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড সাজা হয়েছে খালেদা জিয়ার৷ তিনি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও অন্যতম বিরোধী নেত্রী৷ বেগম জিয়ার কারাদণ্ড নিয়ে মতামত দিলেন কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা জসিম উদ্দিন আকন্দ রনি
কথায় আছে পাপ ছাড়েনা বাপ কে, তারই প্রমাণ মিলল রায়ে খালেদা জিয়ার ৫ বছর জেল হওয়ায়। যদিও অপরাধের তুলনায় শাস্তি একটু কম হয়েছে। এতিম (অনাথ) শিশুদের টাকা আত্মসাৎ করা অন্যায় এবং মহা অন্যায়। কত শিশু বাবা-মা হারা হয়ে এতিম অবস্থায় জীবন যাপন করছে কষ্ট করছে আর তাদের নামে বিদেশ থেকে অনুদানের টাকা এনে আত্মসাৎ করা নেহাত ঘৃণিত অপরাধ। সুতরাং অপরাধের শাস্তি দেরিতে হলেও হবে। অবশ্য এতে হয়তো খালেদা জিয়ার অনুশোচনা হয়নি কারণ তার বিদ্যা শক্তি ‘শূন্য ‘।
যদি নূন্যতম জ্ঞান থাকতো তাহলে তিনি রায়ের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলতে পারতেন না যে গায়ের জোরে সরকার বিচার করছে। ওনার আশেপাশে এমন কেউ কি নাই যে তাকে এগুলো বলতে নিষেধ করবে? হয়তো ভয়ে কেউ বলেনা আর বললেও তিনি সেটা শুনবেন না। আদর্শগত ভাবে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি অনেক পিছিয়ে। এত পিছিয়ে আছে যে আওয়ামী লীগের কাছাকাছি আসতেও তাদের টাইম মেশিন ছাড়া উপায় নেই।
বিএনপির ইতিমধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে গেছে। সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ছাড়া কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারপর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মোশাররফ হোসেন সেই নেতাদের কড়া সমালোচনা করেছেন। একই দিনে কয়েকটি আলাদা সংবাদ সম্মেলন সেটিই স্পষ্ট হয়েছে যে কার্যত বিএনপি ভেঙ্গে যেতে পারে।
ঢাকাবাসী ভেবেছিলেন খালেদা জিয়ার রায় হলে ঢাকায় নাশকতা হবে রাস্তাঘাট অচল হবে, আগুন জ্বলবে বাস ট্রাক পুড়বে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হবে। কিন্তু হয়েছে এর উল্টোটা, রায়ে খালেদার জেল হলো, রাস্তাঘাট স্বাভাবিক ছিলো, বাস ট্রাক পোড়েনি সোজা বাংলায় ঢাকা শহর ছিলো স্বাভাবিক। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়না, অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়না, খারাপ লোককে মাথায় তোলে নাচে না। যার জন্য খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়াটা ছিল বাংলার জনগণের কাছে প্রত্যাশিত।
তবে মনে রাখা ভালো, বিএনপি মূলত আন্দোলন করতেই জানেনা যার দরুন বিএনপির নেতাকর্মীরা তেমন কোনও প্রতিবাদের বলয় গড়তে পারেনি। অবশ্য বিএনপির আন্দোলন মানেই, চোরাগোপ্তা হামলা, পুলিশের উপর হামলা, বাস-ট্রাকে দূর থেকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা আর কয়েকটা ছোট ছোট টোকাই দিয়ে ককটেল বিস্ফারণ ঘটানো। এগুলো তো আর আন্দোলন হতে পারেনা। দলীয় প্রধানের প্রতি মায়া থাকলে কতভাবেই প্রতিবাদ করা যায়। সেটিরও অভাব পরিষ্কার বোঝা গেলো। ভাড়া করা লোক দিয়ে তো আর যাইহোক আন্দোলন হয়না।
বিএনপি আরও একটি মারাত্মক অন্যায় করেছে লন্ডনে বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা চালিয়ে। আরও বড় অন্যায় করেছে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি বিকৃতি করা সহ অশ্রাব্য স্লোগান দিয়ে যা বিএনপির জনপ্রিয়তা নিচের দিকে নামবে বলে সবাই মনে করে। কত বড় মূর্খ হলে এমন একটি কাজ তারা করতে পারে। কাজেই বিএনপির কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা নেহাত বোকামি।
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ‘সাব জেলে’ খালেদা জিয়া আরামেই আছেন যা গণমাধ্যমের কল্যাণে সবাই জানতে পেরেছে। ফ্রিজ, টিভি, নিউজ পেপার, এসি সহ একজন কাজের মেয়ে সার্বক্ষণিক তার সাথে থাকবে। জেল কোড অনুযায়ী তিনি ডিভিশন সুবিধা পাবেন। তবে তিনি বোধহয় একটু বেশি সুবিধা নিয়েছেন কারণ খালেদার সাথে তার নিজের বাসার গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকেও পাশের রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। ফাতেমার কাজ হচ্ছে সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার দেখভাল করা৷ খালেদার এমন অমানবিক আবদার মেনে নিয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। অপরাধ না করেও খালেদার আরামের জন্য একজন নিরপরাধ মেয়ে জেলে থাকতে হচ্ছে শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার অন্যায় আবদার পূরণের জন্য। খালেদা জিয়া জেলে গিয়েও অন্যায় করছেন, কথায় আছে, ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে।
মজার ব্যাপার হলো,খালেদা জিয়ার নিজ এলাকায় ফেনীর শ্রীপুরে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে। ফেনীতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে খালেদা জিয়ার চাচার মিষ্টি বিতরণের খবরটি। বিএনপি নেত্রীর পৈত্রিক বাড়ি ফুলগাজির শ্রীপুরে। রায় ঘোষণার পর তার চাচা একেএম মহিউদ্দীন শামু চেয়ারম্যান ফুলগাজি বাজারে মিষ্টি বিতরণ করেন। সবাই অবাক বনে যান। সুতরাং সহজেই অনুমেয় যে খালেদা জিয়া জেলে বন্দি হওয়ায় তার আত্মীয়স্বজন অনেকেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে খুশি হয়েছে। কারণ তারা জানে খালেদা আপাদমস্তক অশিক্ষিত একজন মহিলা তাকে দিয়ে অন্তত রাজনীতি হবেনা। এবার যদি অনন্ত বাংলাদেশ নিরাপদে পথ চলতে পারে সামনের দিকে, চলো বাংলাদেশ যেতে হবে বহুদূর। কলকাতা7*24
আপনার মতামত লিখুন :