শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৭:৩০ সকাল
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৭:৩০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘লাফ’ দিয়ে বেড়েছে জনপ্রিয়তা

মামুন : বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠকদলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় তার জনপ্রিয়তা ‘লাফ’ দিয়েছে বেড়েছে, এমনটি মনে করছে বিএনপি। পাশাপাশি দলটির নেতারা ঐকমত্যে এসেছেন—শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়েই চলমান সংগ্রাম অব্যাহত রেখে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে হবে। আর এর পূর্ব শর্ত হিসেবে দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও দলের ‘সমন্বিত সিদ্ধান্ত’ বাস্তবায়নে প্রত্যেক সংগঠন ও নেতাকেই আন্তরিক থাকতে হবে।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠকে প্রায় ১৬-১৭ জন নেতার বক্তব্যে এ বিষয়গুলো উঠে আসে। উপস্থিত প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা সর্বসম্মতভাবে তাদের বক্তব্য সমর্থন করেছেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, মূলত তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে শনিবারের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমত, লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলা। দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়ার কারাবরণ ও এর থেকে উত্তরণের বিষয়ে নেতাদের পরামর্শ নেওয়া। তৃতীয়ত, দলের হাইকমান্ডের মনোভাব পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রায় পাঁচ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি মনে করে—সরকার যেকোনও উপায়ে ২০১৪ সালের মতো আগামী নির্বাচনেও দলটিকে বাইরে রাখতে চায়। আর এ কারণে সরকারও চাইছে বিএনপি ভুল করুক। কিন্তু বিএনপি নেতারা উপলব্ধি করছেন, ২০১৪ সালের মতো সহিংস কোনও কর্মসূচিতে গেলে হিতে বিপরীত হবে এবং রাজনৈতিকভাবে দলটির ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে। আর এ কারণে বৈঠকে অন্তত ১৬ জন নেতার প্রত্যেকের প্রস্তাব ছিল— কোনও অবস্থাতেই সহিংস বা হঠকারী হওয়া যাবে না। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার গত ৩, ৫ ও ৭ ফেব্রুয়ারি দেওয়া অসহিংস থাকার বক্তব্যটিই বৈঠকে ঘুরে-ফিরে সবার মুখে এসেছে।

সূত্রের ভাষ্য, প্রত্যেক নেতাই খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে তার ও দলের জনপ্রিয়তা লাফ দিয়ে বেড়েছে বলে মনে করছেন। বিশেষ করে রায় ঘোষণা এবং চেয়ারপারসনের কারাগারে যাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানানোতে নেতাকর্মীরা ধৈর্যের পরিচয় ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করায় বিএনপির সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। আর এই ইতিবাচক মনোভাবটিকেই ধরে রাখতে চায় বিএনপি।

বিএনপির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নেতারা প্রস্তাব করেছেন, ২০১৪ সালের আন্দোলনের বিবেচনায় প্রক্রিয়াগত দিক থেকেই এবার পরিবর্তন আনতে হবে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে বিক্ষোভের যে ধারা বজায় রাখা হয়েছে, আগামী দিনের মানববন্ধন, অবস্থান,সভাসহ সব কর্মসূচিতেই তা অব্যাহত রাখতে হবে।

বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, সরকার বা যেকোনও পক্ষ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের উসকানি দেওয়া হতে পারে। এই প্ররোচনা আগামী দিনে আরও বাড়বে। এমনকি দলের নেতাদের দিয়েই দল ভাঙানোর চেষ্টা শুরু হতে পারে। আর এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বৈঠকের শুরুতেই লন্ডন থেকে সরাসরি ৪-৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন। যদিও মির্জা ফখরুল বৈঠকের মাঝপথে এসে জানান, বিএনপি এখন আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন সিনিয়র নেতার ভাষ্য, ‘ইন্টারনেটে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রত্যেকেই শুনেছেন। তার মুখেও পার্টির সংকটের কথা উল্লেখ হয়েছে। একইসঙ্গে দলের মধ্যে ঐক্য দৃঢ় করার আহ্বান ছিল।’ যেটি বৈঠকের মাঝপথে এসে সাংবাদিকদের কাছেও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান।

বিএনপি মনে করে, আগামী নির্বাচনে যেকোনও মূল্যে অংশ নিতে হবে। আর নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে বেশি-বেশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে হবে। এজন্যই জনসম্পৃক্ত নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈঠকে ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে মামলায় দলীয় চেয়ারপারসনকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে, তা মিথ্যা মামলা। এতে করে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।’

সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। মহাসচিব শুরুতেই পরিস্থিতির ওপরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

সূত্রের দাবি, মির্জা ফখরুল বৈঠকে বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তাকে পরাস্ত করতে হবে। আর জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে। তিনি যেভাবে বলে গেছেন, সেভাবেই দল চলছে।’

সভাপতির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘পার্টি এখন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলছে। দলের ক্রাইসিস মুহূর্তে যাকে যখন দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা মেনে চলতে আন্তরিক হতে হবে।’ পার্টি ঠিক লাইনে চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘মহাসচিব এখন দলের মুখপাত্র।তার অনুপস্থিতিতে অন্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।’

এই দুজনের বাইরে বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জ্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেড জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, শওকত মাহমুদ, উপদেষ্টাদের মধ্যে জয়নাল আবদীন ফারুক, তৈমুর আলম খন্দকার, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচনা হয়, দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, সুনির্দিষ্ট উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবরা বৈঠক করবেন। সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘সমন্বিত’ সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে মহাসচিবের সমন্বয়ে। এছাড়া, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করবেন মির্জা ফখরুল। আগামীকাল রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকালেই জোটের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এছাড়া, কর্মসূচির ক্ষেত্রে বিএনপির সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো একসঙ্গে মার্চ করবে।গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, ‘পার্টির চেয়ারপারসনের অবর্তমানে সবাইকে মিলে-মিশে চলতে হবে। আর আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কথা বলেছেন। যেকোনও অবস্থায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করা, কোনও অবস্থায় উত্তেজনা তৈরি না করা।’

শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন । এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

বৈঠকে আরও ছিলেন– দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ প্রমুখ।

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে বৈঠকে অংশ নেন– মো. আবদুল কাইয়ুম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, এম এ হক, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, আব্দুস সালাম, ফরহাদ হোসেন ডোনার প্রমুখ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীও বৈঠকে ছিলেন

তবে গুরুতর অসুস্থ থাকায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বৈঠকে আসেননি। অসুস্থ থাকায় বৈঠকে উপস্থিত হয়েও চলে যান স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়