শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:০৩ সকাল
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:০৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাবা অধ্যাপক, ছেলে ১৬ বছর বয়সেই গ্যাং লিডার

ডেস্ক রিপোর্ট  : এহসানুল আলম জয়ের বয়স মাত্র ১৬ বছর। এই কিশোর বয়সেই সে একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। মাদক সেবন, ছিনতাই, শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ইভটিজিং তার কাছে ছোটখাটো ব্যাপার! সর্বশেষ গত সোমবার অধ্যক্ষকে মারধর করে তাকে জেলে যেতে হয়। এর আগেও থানায় আটক ছিল সে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে পড়ছে জয়। তার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছোট জয়। স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিনজন শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে জয়ের অপরাধ সম্পর্কে অনেক তথ্য উঠে আসে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, কিশোর জয় বন্ধুদের নিয়ে একটি গ্যাং তৈরি করেছে। ওই দলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও কাজলা এলাকায় ছিনতাই করে থাকে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্পটে বসে মাদক সেবন করে। ম‚লত মাদকের টাকার জোগান দিতেই ছিনতাইয়ের পথ বেছে নিয়েছে জয় ও তার কয়েক বন্ধু। এই বিষয়গুলো স্কুলের অনেকেরই জানা। তাদের শিক্ষক ও সহপাঠীরা এসব কাজ থেকে দ‚রে থাকতে বললে প্রাণনাশের হুমকি দেয় জয়।

ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় একাধিকবার হাতেনাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল জয়। সর্বশেষ গত থার্টিফার্স্ট নাইটে ছিনতাই করার সময় হাতেনাতে ধরে পড়ে। ছিনতাইয়ের অপরাধে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একদিন আটক করেও রাখা হয়েছিল তাকে। পরের দিন শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ছেলে জয়কে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। শিক্ষকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণির ‘খ’ শাখার ছাত্র জয়ের ক্লাস রোল ৫৮। পড়াশোনায় খারাপ বলেই সে এতটা পিছিয়ে। ক্লাসে নির্ধারিত সময়ে কোনোদিনই উপস্থিত হয় না সে। ক্লাস শুরুর সময় সকাল ৯টা হলেও সে আসে ১০ বা ১১টায়। এই বিষয়ে ক্লাস শিক্ষকরা তাকে কিছু বললেই শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জয়ের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জয়ের পরিবারকে বারবার বিষয়টি জানালেও কোনো লাভ হয়নি।

দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, জয়ের বিরুদ্ধে ক্লাসের কেউ কোনো কথা বলতে পারে না। জয় সব সময় ক্লাসে নিজেকে ‘বস’ দাবি করে। ক্লাসমেটদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জয়ের ঝগড়া লেগেই থাকে। এ নিয়ে শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায় না।

স্কুল অ্যান্ড কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জয়ের কারণে আতঙ্কে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে স্কুলের ল্যাব ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে জয়। সর্বশেষ গত সোমবার (৫ জানুয়ারি ) রাতে রাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে জয়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে মারধর করে সে। ওই ঘটনার পর অধ্যক্ষ রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় মামলা করলে পুলিশ রাতেই তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়।

অধ্যক্ষকে মারধরের পর জয়কে যেন স্কুল থেকে টিসি না দেওয়া হয়, সেজন্য ঘটনার দিনই অধ্যক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম। আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি নিজেই ছেলের ছাড়পত্র নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করাবেন ও ছয় দিনের আগে জেল থেকে ছেলে জামিন করাবেন না। তবে গত বৃহস্পতিবার স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ জয়কে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস না করার জন্য নোটিস দিয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জয় যেন আর এখানে ক্লাস করতে না আসে। কারণ তার এমন কর্মকাণ্ডের জন্য স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা আতঙ্কে রয়েছেন। আমাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর পাঁচজন অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের এই প্রতিষ্ঠানে না পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা আমার কাছে টিসির জন্য আবেদন করেছেন। তাই আপাতত জয় যেন এখানে ক্লাস করতে না আসে সে বিষয়ে আমরা একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি।’

জয়ের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনা এটাই প্রথম নয়। গত আগস্টে চন্দন কুমার নামের এক প্রভাষককেও লাঞ্ছিত করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয় জয়। ওই সময়ে স্কুলের একটি ল্যাবও ভাঙচুর করে সে। ভাঙচুরের ঘটনা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ায় সেই ক্যামেরা ২৬ সেপ্টেম্বরের ভাঙচুর করে সে। ভাঙচুরের সেই ঘটনা আরেকটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ২৬ আগস্ট দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে মুখোশ পরে কলেজে প্রবেশ করে জয়। সেখানে কেউ উপস্থিত না থাকায় ক্যামেরাটি ভেঙে ফেলে সে।

ওই ঘটনার পর রাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজে জয়ের ক্লাস করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে তার বাবা ও কয়েকজনের দাবির পরে জয়কে ক্লাসে আসার নিধেষাজ্ঞা তুলে নেয় কর্তৃপক্ষ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জয়ের বাবা রাবির দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তার (জয়) বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে চাই না। আমি মানসিকভাবে ভালো নেই।’ এসব ঘটনার পেছনে ছেলের মানসিক ভারসাম্যহীনতা কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  ব্রেকিংনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়