শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৯:২২ সকাল
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৯:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আ’লীগ হতাশ

জাকির হোসেন লিটন : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে আওয়ামী লীগে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। রাজনীতিতে প্রধান প্রতিপক্ষ জোটের শীর্ষ নেতার জেল হওয়ায় বেশ উচ্ছ্বসিত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তবে রায়ে বিএনপির ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদে চরম হতাশ সরকারের নীতি নির্ধারকেরা। দলীয় প্রধান কারাগারে অন্তরীণের পরও সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারমুখী অবস্থানে না দেখে চিন্তিত তারা। সেজন্য বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল আসলে কি হতে পারে তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন সরকারের কর্তারা।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শাস্তি হোক তা মনে প্রাণে চেয়েছে ক্ষমতাসীনরা। যাতে আগামী নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় এ ইস্যুটিকে কাজে লাগানো যায়। আর রায়ে সাজা হওয়ায় ব্যাপক উৎফুল্ল ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সেজন্য রায়ের পরপরই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল, ভুরিভোজ ও মিষ্টি বিতরণ করেছে সরকার সমর্থকেরা। তবে রায় নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিএনপি নেতাদের হাঁকডাক আর হুঁশিয়ারিতে বেশ চিন্তিত ছিল সরকার। রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অস্থিরতা তৈরি হতে না পারে সেজন্য সারা দেশে একরকম কারফিউ অবস্থা তৈরি করা হয়। পুলিশি কঠোর নজরদারি এড়িয়ে খালেদা জিয়ার বহরে হাজারো নেতাকর্মীর সমাগম হলেও শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলায় জড়ায়নি নেতাকর্মীরা। গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। পুলিশ কোনো কোনো স্থানে মিছিলে বাধা ও নেতাকর্মীদের আটক করলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের সংঘাতে জড়াননি। বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না সরকারের নীতি নির্ধারকেরা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজার রায় ঘোষণার পরপরই আনন্দে মেতে উঠে সরকার সমর্থকেরা। ধানমন্ডি ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে নেতাকর্মীরা। বরিশালে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালাও পোড়াও করলে শাস্তি পেতে হয়। এতিমের টাকা মেরে তিনি এখন কোথায়?

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ হয়েছে জাতীয় সংসদে। রাষ্ট্রপতির ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার দলীয় এমপি মন্ত্রীরা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন। আগামী নির্বাচনে এ রায়কে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক প্রচারের চিন্তা রয়েছে আওয়ামী লীগের। তবে এমন উচ্ছ্বাসের মধ্যেও রায়কে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা না হওয়ায় দলের সিনিয়র নেতাদের মামলা তথা গ্রেফতার করতে না পারায় খানিকটা হতাশ আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরা।

নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি মাঠে নামবে এমন তথ্য ছিল সরকারের কাছে। রাজধানীসহ সারা দেশে জ্বালাও পোড়াও হতে পারে সে আশঙ্কাও ছিল। বিএনপি নেতারাও বেশ কিছু দিন এমন আভাস দিয়ে আসছিলেন। সেজন্য সরকারও সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়ালে পরবর্তী কৌশল কী হবে তাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ এবং বড় জমায়েতের সুযোগ পেয়েও কেন তারা সহিংস প্রতিবাদী হয়ে উঠেনি তা বোঝা যাচ্ছে না। আসলে তারা মনে হয় সরকারের কৌশল আগেই টের পেয়ে যায়। সেজন্য সহিংস কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াতে চায়নি। এখন তাদের পরবর্তী কৌশল কি তা বোঝা জরুরি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতা অনেকটাই রসিকতা করে বলেন, ‘আসলে প্রশ্ন ফাঁসের মতো সরকারের কৌশলও মনে হয় বিএনপির কাছে ফাঁস হয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার হাজিরার দিন হাইকোর্টের সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে ধরপাকড় এড়াতে প্রায় সব নেতাকে গর্তে ঢুকে যেতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে আরো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে বলে সরকার মনে করেছিল। সরকারও সেজন্য প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু তা আর হলো না। বিএনপি এখন ভিন্ন কৌশলে রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানের কারণে বিএনপির নাশকতা চক্রান্ত ভণ্ডুল হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন দাবি করলেও আসলে বিষয়টি ছিল একেবারে ভিন্ন। কারণ, মামলা ও জেলের ভয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির পরও খালেদা জিয়ার বহরে হাজারো নেতাকর্মী যুক্ত হয়। তারা ইচ্ছা করলে আরো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে পারতো। কিন্তু তা না করে ছিল সংযত। আসলে তাদের কৌশল কি সেটি জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এ দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার সাজা নিয়ে আপাতত কম কথা বলতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি নেতাদের জানিয়েছেন, খালেদা জেলে থাকা অবস্থায় এই ইস্যুতে বিএনপি জনগণের সহানুভূতি পেতে পারে, এমন কোনো বক্তব্য বা আচরণ করা যাবে না। এমনকি নেতাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা বা উসকানিমূলক বক্তব্যও পরিহার করতে নির্দেশ পাঠিয়েছেন দলীয় সভাপতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়