শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৮:২২ সকাল
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৮:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোগ নিয়ে জন্মায় ত্রিশ ভাগ শিশু

ডেস্ক রিপোর্ট : সাত বছরের এহসানুল হক পড়ালেখা করছে একটি মাদ্রাসায়। এরই মধ্যে তার হার্টে বড় একটা অপারেশন হয়েছে। তারপর থেকে প্রায়ই সে মাথাঘুরে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। কিছু দিন আগে প্রায় তিনঘণ্টা অচেতন ছিল। তখন তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মা খাদিজা জানান, ছেলেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন তার ক্রমেই ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনলাখ টাকা খরচ হয়েছে। নিজেদের সঞ্চয় যা ছিল তা সবই গেছে। একই অবস্থা শিশু হূদরোগ বিভাগে ভর্তি হওয়া সাত বছরের সুলতান আরেফিনেরও। হার্টে আর মস্তিষ্কে সমস্যা নিয়ে জন্মায় সে। বাবা-মা ভারতের একটি হাসপাতালে ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছেন। ছেলের একটা অপারেশন হয়েছে মাথায়। এখন হার্টের চিকিত্সা বাকি। এই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, জন্মগত বাতজ্বর, বেশি বেশি সংক্রামকব্যাধির আক্রমণ এমনকি কিডনি রোগ থেকেও শিশুদের হার্টের সমস্যা হতে পারে। আমরা এমন হার্টের সমস্যা নিয়ে প্রচুর শিশু রোগী পাচ্ছি।

বারডেম হাসপাতালে নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে আসেন মোহাম্মদপুরের ইসাক আলী মিয়া আর তার স্ত্রী জোহরা খাতুন। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে স্ত্রীর আর পাঁচ/ছয় বছর আগে তার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। স্ত্রীর এরই মধ্যে চোখে, কিডনিতে আর হার্টের অসুখ হয়েছে। চিকিত্সক বলেছেন- কিডনির অবস্থা বেশি ভালো না। দুইজনের ওষুধ খরচ মাসে ১০ হাজার টাকা।

সরকার পরিচালিত ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ বছরের অধিক মানুষের মধ্যে ২০ শতাংশ উচ্চরক্ত চাপ, ৭ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিস রয়েছে। ১০ সালের পর সরকার অসংক্রামক ব্যাধির ওপর ফের একটি গবেষণা করছে। এ বছর জুন নাগাদ গবেষণা প্রকাশ করা হবে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ নামে একটি গবেষণা সংস্থা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগ একটি গবেষণা করছে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ বলেন, প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি ডায়াবেটিক রোগী চিকিত্সা সেবা নিতে আসেন এখানে। এমন বিপুল সংখ্যক রোগী এক সঙ্গে চিকিত্সা সেবা নেওয়ার ঘটনা বিশ্বের আর কোনো হাসপাতালে নেই। বর্তমানে সারাদেশে ডায়াবেটিক সমিতির নিয়মিত (কার্ডধারী) সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালিত ছোট-বড় ১০০টি হাসপাতাল আছে। সেই হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ বাড়ছে। বর্তমানে বারডেম ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীর সেবা দিয়ে আসছে। তাই ৬০ শতাংশ রোগীকে সেবার অন্তর্ভুক্ত করাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক হারুন আর রশীদ ইত্তেফাককে বলেন, ডায়াবেটিক ও উচ্চরক্ত চাপ বাড়ার কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। দেশে ৮০ লাখ মানুষের ডায়াবেটিস আছে। যার এক-তৃতীয়াংশ কিডনি রোগী। আর ২ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। এদের ২৬ শতাংশ কিডনি রোগী। দেশে মোট ১ কোটি ৮০ লাখ কিডনি রোগী আছেন। প্রতিবছর পরিপূর্ণভাবে কিডনি নষ্ট হয় ৩৫ হাজার মানুষের। তিনি ৪০ বছর পরে নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা এবং শিশুসহ সবাইকে ফাস্ট ফুড ও কোমলপানীয় না খাওয়ার পরামর্শ দেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এ কে আজাদ চৌধুরী জানান, আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা। ৩০ শতাংশ শিশু জন্মগতভাবে অসংক্রামক রোগ নিয়ে জন্মায়। নবজাতকের ৬ শতাংশ হার্টের রোগ দেখা যায়। ২ শতাংশের থাকে জটিল অবস্থায়। তিনি বলেন, হার্টের সমস্যা, মাথায় সমস্যা, ডায়াবেটিক, জন্ডিস, জন্মগত শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা প্রভৃতি অসংক্রামক রোগ দেখা যায়। জনা যায়, দেশের ৬২ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। পরিবেশগত ও জীবন যাপনের কারণে শহরের ৫৭ ভাগ মানুষের অসংক্রামক রোগ হয়। বিশ্বে বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ অসংক্রামক রোগের কারণে মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে ২ কোটি ৯০ লাখ মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ। ২০১০ সালে ডব্লিউএইচও’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যক্তির মধ্যে অন্তত একটি, ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে অনন্ত দুটি ও ২৩ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে তিনটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি রয়েছে। আইসিডিডিআরবি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬৪ লাখ বা ৪ শতাংশ মানুষ চিকিত্সা করাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধির লাইন ডিরেক্টর এএচইএম নায়েত হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, চারটি ব্যাধিকে সাধারণত বড়দের অসংক্রামক ব্যাধি বলে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও শ্বাকষ্টজনিত রোগ। এই ব্যাধিগুলো নীরব ঘাতক। তাই সরকারের কমিনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস শনাক্তকরণের ব্যবস্থা আছে। উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে এ সব রোগের চিকিত্সাসেবারও ব্যবস্থা আছে। আমরা চিকিত্সা ও সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। লবণ, চিনি, ধূমপান, মাদক পরিহার এবং সবজি বেশি করে খাওয়া ও হাঁটাসহ ব্যায়াম করতে উত্সাহিত করতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সূত্র : ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়