শিরোনাম
◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৩৯ দুপুর
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৩৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি, হারাতে বসেছে কুটির শিল্প

শাকির আহমদ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কুটির শিল্প হারাতে বসেছে। দেশ জুড়ে প্লাস্টিকের ছড়াছড়িতে দৈন্যদশায় পড়েছে এ শিল্পটি। বাঁশ-বেতের সৌখিন শিল্পকর্মের নানা পণ্যের কদর কমেছে গ্রামগঞ্জে। ফলে কুটির শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে উৎপাদন কার্য থেকে। কুটির শিল্পের মধ্য দিয়ে আবহমান বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্য ফুটে ওঠে, যার কারিগর পল্লী অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এ শিল্পকে কেউ কেউ হস্তশিল্প, কারুশিল্প, সৌখিন শিল্পকর্ম, গ্রামীণ শিল্পও বলেন।

মৌলভীবাজারের ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার নিজেদের জীবিকা এবং ব্যবহারের জন্য বিভন্ন রকম পণ্য উৎপাদন করে। বাংলার প্রকৃৃতি, মানুষ, পশুপাখি, লতাপাতা, গাছপালা, নদ-নদী ও আকাশ কুটির শিল্পের ডিজাইনে বা মোটিভে দেখা যায়। বর্তমান বাজারে এ শিল্পের কদর কমলেও থেমে নেই এ পরিবারগুলোর জীবন যুদ্ধ।

সহায় সম্বলহীন গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার একমাত্র আয়ের উৎস এই শিল্প। সম্প্রতি সময়ের প্লাস্টিকের রাহুগ্রাসের কারণে কুটির শিল্পের শিল্পকার্য হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কয়েক হাজার পরিবার কর্মহীন হওয়ার পথে।

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, জেলার রাজনগর, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় উপজেলার নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো মূলত এ শিল্প থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। হাওর (টিলাগাঁও), কানাইদেশি, কাঁঠালকান্দি, ছয়ঘরি, জাবরগাঁও, রাজকান্দি ও কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল, আধকানি, কাওয়ারগলা, খাপারবাজার, কোনাগাঁও, ছনগাঁও, চাঙ্গাইচাবি, জালালপুরসহ ১৫-২০টি গ্রামের প্রায় ১০ সহস্রাধিক পরিবার এই বাঁশ-বেতের নকশা আকাঁয় ব্যস্ত। তারা দীর্ঘদিন থেকে বাঁশ ও বেতের চাটাই, টুকরি, ডালা, কুলা, ঝাকা, ডরি, পারন, টাইল, উকা, খালুই ইত্যাদি তৈরি করে আসছেন।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই শুরু হয়ে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে বাঁশ কাটা, বেত তৈরি, রং দেয়াসহ নানা রকম পণ্য তৈরির কাজ। বাঁশ-বেতের তীক্ষ্ণ ফলায় কখনো কখনো ক্ষত হয় হাতের তালু। সেই ক্ষত একসময় শুকিয়ে যায়। কম পুঁজি বেশি লাভ হওয়ায় ক্ষত কিংবা কষ্ট যাই হোক এভাবেই চলছে তাদের জীবন-জীবিকা। সংসারের গতি সচল রাখতে পুরুষের চেয়ে নারীদের কাজের ভার বেশি।

বাঁশ-বেতের কারিগর নারীরা জানান, পৈতৃক পেশার হাল ধরে বিভিন্ন গ্রামের নারী-পুরুষ বাঁশ-বেতের পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু এখন প্লাস্টিরে কারণে বাজারে চাহিদা কম কুটির শিল্পের। আর অন্যদিকে বাঁশের সমস্যা, সাথে পুঁজি সল্পতা আছেই। যে মহাজন তাদের কাছ থেকে পণ্য নেন, তার কাছ থেকে আগাম টাকা নিলে ১৫০ টাকার পণ্য ১০০ টাকায় দিতে হয়।

নারী উদ্যোক্তা মনি বেগম জানান, উৎপাদিত পণ্যগুলো স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর দূর-দূরান্তে বিক্রি হত। স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু বেপারী এগুলো কিনে নেন। পাইকাররা এসব পণ্যে তাদের কাছ থেকে কিনে সিলেট বিভাগের নানা হাটে বিক্রি করত কিন্তু এখন আর সেটা চোখে পড়ে না। কেননা প্লাস্টিকের কারনে মানুষের কাছে তেমন চাহিদা পচ্ছে না কুটির শিল্প।

জেলার জুড়ী উপজেলার ৪০ ছুঁই ছুঁই বয়স শফিনা বেগম জানান, ‘আমরা টুকরি-ডালা বানাই। স্বামী বাঁশ এনে দেন। কিন্তু এখন আগর লাখান কেই নেইন না’।

বড়লেখা কাঁঠালকান্দি গ্রামের মিনা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কিন্তু টাকাপয়সা দিয়া কুলাই উঠতে পারছি না। অভাবে দিন যায় আমরার। বাচ্চাকাচ্চারেও পড়ালেখা করাইতাম পারি না। বছরের পর বছর ধরি আমরার অও (এই) একই রকম দিন যায়।’

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, এ শিল্প আমাদের গ্রাম বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য বহন করে। কুটির শিল্প সম্পূর্ণরুপে একটি পরিবেশবান্ধব শিল্প। তাই এই শিল্পকে বাঁচানো আমাদের সবার দায়িত্ব।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান, সরকার এ শিল্পের বিপরীতে ঋণ দিচ্ছে। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা সহ এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়