শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৫১ সকাল
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৫১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

থমথমে পরিস্থিতি, পথে পথে তল্লাশি, ধরপাকড়

ডেস্ক রিপোর্ট : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সারা দেশে। ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় করা হচ্ছে। পথে পথে যানবাহনে চালানো হচ্ছে কড়া তল্লাশি। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বকশীবাজারে অবস্থিত আদালত ও নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নাশকতা ঠেকাতে গতকাল থেকে সারা দেশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় সন্ধ্যা থেকে নামানো হয়েছে বিজিবি।

বাস, লঞ্চ ও ট্রেন যাত্রীদের ওপর ব্যাপক নজরদারি বাড়ানোয় গতকাল স্টেশন-টার্মিনাল ছিল অনেকটা ফাঁকা। আন্তঃজেলা যানবাহনে যাত্রী সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। বিকাল থেকে রাজধানীতেও যান চলাচল কমে যায়। সন্ধ্যায় টহলে নামে বিজিবি। এদিকে আজ ভোর থেকে রাজধানীতে যেকোনো ধরনের জমায়েত ও মিছিলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। গতকাল পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, রায় ঘিরে বিশৃঙ্খলা হলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এদিকে রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। গতকাল অন্তত সাড়ে আটশ’ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন রায় নিয়ে বিএনপি অপরাজনীতি করছে।

রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা: রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ মাঠে নামে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি’র সদস্যরা। তারা গাড়ি নিয়ে টহল শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানী ঢাকায় নামানো হয় ২০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। এর আগে-পরে বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েনের খবর আসে। বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোহসিন রেজা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, উদ্ভূত উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যেই বিজিবি সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। ইতিপূর্বে এ সংক্রান্ত আদেশে স্বাক্ষর করেছেন বিজিবি প্রধান। বিজিবি সদস্যরা রাজধানীজুড়ে টহল দেবে। অন্যান্য জেলায়ও নামছে বিজিবি সদস্যরা। এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে থাকে। সন্ধ্যার দিকে মানুষের মধ্যে ঘরমুখো প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। রাস্তায় কমতে থাকে যানবাহনের সংখ্যাও। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা দ্রুত কমে আসে। অনেকের মধ্যে আতঙ্কের ছাপ দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় সন্ধ্যার পর পর বন্ধ হয়ে গেছে দোকানপাট। শুধু রাজধানীতে নয়। গতকাল দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন জেলায় মোতায়েন হতে থাকে বিজিবি। নিজেদের টহল ভ্যান নিয়ে বিভাগীয় ও জেলা শহরের রাস্তায় নামে বিজিবি জওয়ানরা। গতকাল চট্টগ্রামে নামে ৮, রাজশাহীতে ৪ এবং নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে ৩ প্লাটুন করে বিজিবি নামানো হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েনের খবর পাওয়া যায়। এদিকে বিজিবি মাঠে নামার পর থেকে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে বাস, ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটের কাঁচপুর ব্রিজের কাছে ঢাকামুখী যানবাহনে চলে তল্লাশি। এছাড়া ঢাকামুখী ট্রেনেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। রায়কে ঘিরে মাঠে নেমেছে র‌্যাবও। তারাও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের গাড়িতে বাড়তি টহল শুরু করেছে। চালানো হচ্ছে তল্লাশি। রাজধানীর প্রায় সবক’টি প্রবেশ পথে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

বিএনপি কার্যালয়ে নীরবতা: বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ। এতে একেবারেই নেতাকর্মীশূন্য হয়ে পড়ে কার্যালয়টি। গতকাল বুধবার ওই কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলামসহ সাত অফিস কর্মকর্তা ও অফিস কর্মী। পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বিএনপির কার্যালয় এবং অন্যান্য তলায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল ও জাসাস-এর অফিস রয়েছে। সেগুলোও বন্ধ ছিল। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চারপাশে ব্যাপক সংখ্যক সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে। পোশাকি পুলিশ ছিল পাশের ভিক্টোরিয়া হোটেলের সামনে। কিছুক্ষণ পর পর কার্যালয়ের সামনে টহল দিতে দেখা গেছে তাদের। গত ৩/৪ দিন ধরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি একরকম অবরুদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের উপস্থিতির কারণে নেতাকর্মীরা আসছে না। কেউ প্রবেশ করতে গেলে সাদা পোশাকের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ভবনের প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেইটও বন্ধ করে রাখা হয় ভেতর থেকে। রাস্তার অপর পাশে ঢাকা মহানগরের যে কার্যালয়টি রয়েছে তাও বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। গেটেও তালা ঝুলছিল।

স্টেশন-টার্মিনালে ভিড় কম: রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভিন্ন রূপ ছিল রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশনে। গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে আগের মতো ভিড়, ব্যস্ততা ছিল না। কমেছে যাত্রীর সংখ্যা। এমনকি ঢাকামুখো লঞ্চের সংখ্যা কমেছে সদরঘাটে। যাত্রীরা জানান, পুলিশের কড়াকড়ির কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঢাকামুখো হচ্ছেন না। ভোর থেকেই সদরঘাট, কমলাপুরে শুরু হয় পুলিশের কড়াকড়ি। প্রায় যাত্রীকেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যাপক তল্লাশির। এমনকি অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ভোর থেকেই সদরঘাটে অর্ধশত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। লঞ্চ থেকে নেমে ঘাট থেকে বের হওয়ার পথে যাত্রীদের তল্লাশি করা হয়। সন্দেহ হলেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গত তিন দিন ধরেই চলছে পুলিশের এরকম কড়াকড়ি তল্লাশি। বরিশাল-ঢাকা রুটের পারাবত লঞ্চটি গতকাল সদরঘাটে পৌঁছায় ভোর ৫টায়। সাধারণত ওই লঞ্চে পাঁচ শতাধিক যাত্রী পরিবহন করা হয়। কিন্তু গত তিন দিন থেকে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যা কমছে। লঞ্চে কর্মরত মোহাম্মদ বিকু জানান, গতকাল এই লঞ্চে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছেন ৩৫০ যাত্রী। যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বুঝেন তো ৮ই ফেব্রুয়ারি সামনে। সদরঘাটে প্রতিদিন প্রায় ৬০টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করলেও গতকাল তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮টিতে। বরিশাল থেকে মঙ্গলবার আটটি লঞ্চ ঢাকায় এলেও গতকাল এসেছে ছয়টি। গতকাল সদরঘাট এলাকা থেকে অন্তত ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বেলা ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানার সামনে ছিল মানুষের ভিড়। তাদের স্বজনকে আটক করে থানায় রেখেছে পুলিশ। খবর পেয়ে স্বজনকে দেখতে এসেছিলেন তারা। তাদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ ইদ্রিছ। ইদ্রিছ জানান, তার ভগ্নিপতি শাহীনকে আটক করেছে পুলিশ। শাহীন ফেরি করে বাবুবাজার এলাকায় ফল বিক্রি করেন। মঙ্গলবার রাতে ফল বিক্রি করে বাসায় ফেরার পথে বাবুবাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, নাশকতা এড়াতে সদরঘাট এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ জনকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান তিনি। একইভাবে কমলাপুর রেলস্টেশনে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকামুখো যাত্রীদের তল্লাশি করছে পুলিশ। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক জানান, এখন পর্যন্ত নাশকতা সৃষ্টিকারী কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নিয়মিত অভিযানে গতকালও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে পুলিশের কড়াকড়ির কারণে দূরপাল্লার বাস একে একে রাজধানীর টার্মিনালগুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো আর ফিরে আসছে না টার্মিনালে। এতে করে টার্মিনালে গণপরিবহন শূন্যতার পাশাপাশি কমে গেছে যাত্রীর সংখ্যা। এদিকে যথাসময়ে কাঙ্ক্ষিত বাসের টিকিট কাটতে না পেরে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে অনেক যাত্রীকে। ফাঁকা বাস টার্মিনালের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মোতায়েন রয়েছে অসংখ্য পুলিশ। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নাশকতার ভয়ে টার্মিনালগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেছে। গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যস্ততম এই টার্মিনালগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে। স্বল্পসংখ্যক দূরপাল্লার বাস সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। আর টার্মিনালের বেঞ্চগুলোতেও নেই তেমন যাত্রী। হাতেগোনা কয়েকজন যাত্রী দাঁড়িয়ে চেহারায় বিরক্তি নিয়ে এলোপাতাড়ি ঘুরাফেরা করছে। এমনি একজন খুলনাগামী আজিজুল হক। সকাল থেকে সায়েদাবাদে বসে থেকেও সুন্দরবন এক্সপ্রেস নামের গাড়ির টিকিট কাটতে না পেরে বিরক্তির সঙ্গে এই যাত্রী বলেন, এই সময়ে টার্মিনালে অনেক গাড়ি থাকার কথা। অথচ এখন কোনো গাড়ি নাই। যেসব গাড়ি আছে তা রাতের দিকে ঢাকা ছেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।

টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের টিকিট কাউন্টার মাস্টাররা যাত্রী না পেয়ে অবসর সময় কাটাচ্ছে। আর যেসব যাত্রী টার্মিনালে আছেন তারা তীর্থের কাকের মতো গাড়ির অপেক্ষায় বেঞ্চে বসে আছে। টার্মিনাল এমন ফাঁকা কেন জানতে চাইলে সোনালী এক্সপ্রেস কাউন্টারের টিকিট মাস্টার বলেন, কালকে একটা মামলার রায় হবে। রায়ের পর কী হবে জানি না। যাত্রীসহ আমরা সবাই ভয়ে আছি। যদি কিছু ঘটে যায়। এই আশঙ্কায় যাত্রী একটু কম বলে জানান তিনি। এদিকে সায়েদাবাদ টার্মিনালের পাশের দোকানদার আলম বলেন, প্রতিদিন এ সময় যাত্রীর ভিড়ে টার্মিনালে পা রাখার জায়গা থাকে না। আজকে তার চার ভাগের একভাগ যাত্রী নাই। যেসব গাড়ি টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে তা আর ফিরে আসছে না বলে জানান এই প্রত্যক্ষদর্শী। সায়েদাবাদ টার্মিনালে হানিফ, রয়েল ও রকসিসহ একাধিক দূরপাল্লার বাসের চালক ও হেলপাররা বলেন, আমরা আতঙ্কে আছি। তারপরও কিছু গাড়ি ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু টার্মিনালে যথেষ্ট যাত্রী নেই। গুলিস্তান বাস টার্মিনালেরও একই অবস্থা। রাজধানীর ভেতরের কয়েকটি বাস ছাড়া চোখে পড়েনি কোনো দূরপাল্লার বাস। বাস না থাকার কারণে অনেক যাত্রীকে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। মালঞ্চ পরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সূত্রাপুরের যাত্রী আকরাম বলেন, অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো গাড়ি দেখছি না। নাশকতার ভয়েই রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে মেঘলা পরিবহনের টিকিট মাস্টার আকবর আলী বলেন, সরকারের থেকে গাড়ি বন্ধ রাখার নির্দেশ আছে। গাড়ি চালালে দলীয় লোকেরা চাবি কেড়ে নিয়ে যায়। বাধ্য হয়ে গাড়ি বন্ধ রাখতে হয়। তাই গাড়ির সংখ্যা কম বলে জানান আকবর। একই অভিযোগ নিয়ে একাত্তর পরিবহনের চালক আলম সিকদার বলেন, ঢাকা শহরে সরকারের পক্ষ থেকে হরতাল চলছে। তারাই সব গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। আগামীকাল রাস্তায় কোনো গাড়ি থাকবে না বলে মনে করেন তিনি। রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান এলাকার রিকশা, লেগুনা ও বাসচালকেরা জানান, সকাল থেকেই যানবাহনের সংখ্যা কমতে থাকে। গণপরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর উপস্থিতিও কম। আজকে রাস্তায় যে পরিমাণ গাড়ি আছে তা অন্যান্য দিনের চেয়ে চার ভাগের একভাগ গণপরিবহন সড়কে চলাচল করছে বলে জানান তারা। গতকাল সকাল থেকে গাবতলীর আমিনবাজার সেতু পার হতে পুলিশ চেকপোস্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে সব ধরনের যানবাহনের। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ির যাত্রীদের দেহ তল্লাশির পাশাপাশি তাদের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন লাগেজ ও ব্যাগ তল্লাশি করেন। তবে বড় গাড়ির তুলনায় ছোট যানবাহনগুলোই (প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল) বেশি তল্লাশি করতে দেখা যায়। তল্লাশির সময় ঢাকার বাইরে থেকে আসা অনেক যাত্রী হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

আবাসিক হোটেলে কড়াকড়ি: নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে রাজধানীর আবাসিক হোটেলে অতিথি কমেছে। গত দুদিন ধরে নতুন করে কোনো আবাসিক হোটেলেই অতিথি রাখা হয়নি। এমনকি পূর্বের অতিথিরাও হোটেল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ঘুরে এমনটাই দেখা যায়। তবে ঘোষণা অনুযায়ী আবাসিক হোটেল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও তেমন কোনো হোটেল বন্ধ রাখা হয়নি। বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঝামেলা এড়ানোর জন্য ও পুলিশের নির্দেশ মেনেই তারা নতুন অতিথিদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। অনেক অতিথি জরুরি কাজে ঢাকার বাইরে থেকে এসে হোটেলে থাকেন। কিন্তু গত দুদিন ধরে এমনিতেই অতিথিদের আনাগোনা কমেছে। আর যারা আসছেন তাদেরকে রাখা হচ্ছে না। সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা ওয়ারেস মিয়া। জরুরি কাজে এসেছেন রাজধানীতে। ঢাকায় কোনো আত্মীয়স্বজন না থাকার কারণে তিনি হোটেলেই উঠেন। কিন্তু গতকাল ফকিরাপুলের কয়েকটি হোটেলে গেলে অতিথি রাখা হবে না বলে তাকে জানানো হয়। ওয়ারেস মিয়া বলেন, এসেছি অনেক দূর থেকে। ভেবেছিলাম দুই একদিন ঢাকায় থেকে জরুরি কাজ শেষ করবো। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে ঝামেলা যাতে না হয় সেজন্য অতিথি রাখা হবে না। তাই একদিনেই কাজ সেরে আবার চলে যাচ্ছি। ঝামেলা শেষ হলে আবার আসবো। শুধু ওয়ারেস মিয়া নন, ঢাকার বাইরে থেকে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ প্রবেশে কড়াকড়ি চলছে। এই কড়াকড়ির মধ্যে যে ক’জন ঢাকায় প্রবেশ করছেন তাদের অনেকেই আবাসিক হোটেলে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না। সরজমিন রাজধানীর ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, মতিঝিল, ফার্মগেট, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুরসহ আরো একাধিক এলাকার আবাসিক হোটেল ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ হোটেলেই অতিথি কমেছে। ফকিরাপুলের সাউথ প্যাসিফিক হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, হোটেলটির অধিকাংশ কক্ষতে কোনো অতিথি নাই। প্রেস ক্লাবের সামনে কমিউনিটি ক্লিনিকের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলনকারী কয়েকজন এই হোটেলে ছিলেন। কিন্তু ধরপাকড় আর অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে তারাও হোটেল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সাউথ প্যাসিফিক হোটেলের ব্যবস্থাপক আলম বলেন, এমনিতে কয়েকদিন ধরে অতিথি কম। কিন্তু খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে কড়াকড়ি চলছে। তাই অতিথিরাও আসছে না। যারা আসছে তাদের আমরা রাখছি না। ফকিরাপুলের হোটেল আল-ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার বলেন, আমাদের হোটেলের অনেক অতিথিই চলে গেছে। এছাড়া নতুন কোনো অতিথি আসছে না। মহাখালীর আল মদিনা আবাসিক হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, দুইদিন ধরে তারা নতুন অতিথি রাখছে না। পুরাতন যে ক’জন ছিল তারাই হোটেলে অবস্থান করছে। একই অবস্থা ফার্মগেট, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ রাজধানীর অন্যান্য আবাসিক হোটেলে বিরাজ করছে। মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়