ডেস্ক রিপোর্ট : আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার ওপর বিএনপির পরবর্তী করণীয় ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি-নির্ধারণী-পর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, রায়ে খালেদা জিয়া খালাস পেলে সব কিছুই স্বাভাবিকভাবে চলবে। আর যদি সাজা হয়, তাহলে আইনগত ও রাজনৈতিক—উভয় পথেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে দলটি। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার সাজা একবছরের কম হলে সংশ্লিষ্ট আদালতেই জামিনের আবেদন করার সুযোগ থাকবে বলে জানান বিএনপির আইনজীবীরা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা নেত্রীর খালাসই প্রত্যাশা করছি। তবে রায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হলে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো।’ বিষয়টির ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সাজা একবছরের কম হলে এই কোর্টেই জামিন আবেদন করা হবে।’
তবে মামলার রায় একবছরের বেশি হলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর আমরা পুরোটা পড়বো। খতিয়ে দেখবো। এরপর উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’ একই ভাষ্য খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারেরও। তিনি বলেন, ‘রায় হলে সে দিনই সুযোগ না থাকলে আরও দুই-একদিন অপেক্ষা করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার রায় হলে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির কারণে কোর্ট বন্ধ থাকবে। ফলে রবিবারের আগে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। এই প্রসঙ্গে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে আসলে আপিল করবো আমরা। সেক্ষেত্রে তিন-চার দিন সময় লাগতে পারে।’
খালেদা জিয়া বুধবার তার সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে ন্যূনতম আইনের শাসন থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে, এই মামলা থেকে আমি বেকসুর খালাস পাবো।
এদিকে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় গেলে তা রাজনৈতিকভাবেও মোকাবিলা করবে বিএনপি। খালেদা জিয়া নিজেই এই বিষয়ে দিক-নির্দেশেনা দিয়েছেন বুধবার।
এদিনই সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান রেখেছেন।
এছাড়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় ও ৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। উভয় স্থানে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশন দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দীন মিলন বলেন, ‘সিলেটে খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের কোনও ধরনের উসকানির ফাঁদে না পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ’
এ প্রসঙ্গে বুধবার বিকেলেও খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আগামীতে অনেক ফাঁদ পাতা হবে। অনেক ষড়যন্ত্র হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন।’
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ‘খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে কর্মসূচি দেবে বিএনপি। দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি দেবেন। এ ব্যাপারে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘এ ব্যাপারে দলের মহাসচিবকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
বুধবার সংবাদ সম্মেলনের পর দলের করণীয় ও কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আবারও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের মহাসচিব। পাশাপাশি বুধবার থেকে নেতারা কে কোথায় অবস্থান নেবেন, কিভাবে আদালতে যাবেন, এ নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে মহাসচিব আটক হলে গণমাধ্যমে কথা বলবেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আর নেতৃত্বের সমন্বয় করবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।বাংলাট্রিবিউন।
আপনার মতামত লিখুন :