শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৩:২৭ রাত
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৩:২৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যেকারণে মালদ্বীপে সেনা পাঠানোর কথা ভাবছে না ভারত

আবু সাইদ: ভারত মহাসাগরের দেশ মালদ্বীপে সামরিক হস্তক্ষেপ করার জন্য সে দেশের নির্বাসিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ প্রকাশ্যেই ভারতকে আর্জি জানাচ্ছেন।

কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারত সরকার শুধু বিবৃতির মধ্যে সংযত রয়েছে। এক বিবৃতিতে ভারত সরকার বলেছে প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের জরুরি অবস্থা জারির ঘটনায় ভারত 'বিচলিত' । এর আগেও তারা পরিস্থিতির ওপর 'সতর্ক নজর' রাখার কথা বলেছিল।

বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে এই মুহুর্তে মালদ্বীপে ভারতের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা খুবই কম।

তারা বলছেন, তিরিশ বছর আগে ভারত মালদ্বীপে তখনকার প্রেসিডেন্ট গায়ুমের সরকারকে বাঁচাতে সেনা পাঠালেও এখনকার পরিস্থিতি যে সম্পূর্ণ আলাদা।

তা ছাড়া মালদ্বীপে যে দেশটির প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে, সেই চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমেও মালদ্বীপে সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ভারতকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

গত চার বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সার্কভুক্ত একটি দেশেই শুধু পা রাখেননি - আর সেটি মালদ্বীপ। একদা ভারতের ঘনিষ্ঠ হলেও এই দ্বীপপুঞ্জ যে ক্রমশ ভারতের প্রভাব বলয়ের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, সেটা তারই এক ছোট প্রমাণ।

প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সরকারের সঙ্গে একদিকে বেজিংয়ের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে - অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট নাশিদের মতো নেতারা ভারতকে মালদ্বীপে সেনা পাঠানোর আবেদন জানালেও তাতে সাড়া দেওয়া ভারতের জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ভারতের সাবেক সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও কূটনীতিক লীলা পুনাপ্পার মতে, "মালদ্বীপে ঘটনা এখনও মোড় নিচ্ছে আর সেখানে বরাবরই ভারতের চেষ্টা ছিল সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখার। প্রতিবেশী নানা দেশের নেতারাই ক্ষমতায় আসা-যাওয়ার ফাঁকে ভারতের সমর্থন চেয়ে এসেছেন, মালদ্বীপও তার ব্যতিক্রম নয় - এখনও আমরা ঠিক সেটাই দেখছি।"

তবে ঠিক তিরিশ বছর আগে ভিন্নতর পটভূমিতে মালদ্বীপে কিন্তু সত্যিই সেনা পাঠিয়েছিলেন তথনকার প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী।

সে সময় রাজধানী মালে-তে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন অরুণ কুমার ব্যানার্জি।

মি ব্যানার্জি বলছিলেন, "১৯৮৮তে মালদ্বীপে যে ক্যু-টা হয়, তখন ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি গাইয়ুম নিজেই আমাদের সাহায্য চেয়েছিলেন। তামিল বিদ্রোহীদের একটা গোষ্ঠী বাইরে থেকে আক্রমণ করেছিল, তিনি তখন ভারতের কাছে জরুরি সাহায্য চাইলেন। আক্রমণটা বাইরে থেকে, প্রেসিডেন্ট নিজে সাহায্যপ্রার্থী আর তার নিজের তা ঠেকানোর ক্ষমতা নেই - এই তিনটে ফ্যাক্টর বিবেচনা করে ভারতও খুব দ্রুত সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।"

"সকাল ছটা নাগাদ বোধহয় দিল্লিতে প্রেসিডেন্টের ফোন এসেছিল, আর রাত নটার মধ্যেই মালদ্বীপে আমাদের সেনা পৌঁছে যায়। মাত্র ১৫ ঘন্টার মধ্যে এত দ্রুত সেনা পাঠানো কিন্তু অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয় - কিন্তু ভারত সেটা করে দেখিয়েছিল।"

তবে এখন মালদ্বীপে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে - কিন্তু ভারত কি সেখানে আদৌ সেনা পাঠানোর কথা ভাবতে পারছে?

জবাবে সাবেক রাষ্ট্রদূত মি ব্যানার্জি বিবিসিকে বলছিলেন, "এখন যে পরিস্থিতি তাতে আমার মনে হয় না এটা সম্ভব বলে। পৃথিবীতে সবাই নজর রাখছে, এই প্রচারের আলোর মধ্যে সেখানে ভারত দুম করে সেনা পাঠিয়ে দেবে সে প্রশ্নই নেই।"

"তা ছাড়া সে দেশে এখনও রাজনীতি বা গণতন্ত্র চালু আছে - যেটা হচ্ছে সেটা হল সরকারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সংঘাত। এই পরিস্থিতিতে সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট, নাশিদ, যিনি আবার দেশের বাইরে থাকেন - তিনি বলছেন ভারতকে হস্তক্ষেপ করতে। ফলে ১৯৮৮র তুলনায় পরিস্থিতি তো সম্পূর্ণ আলাদা, তাই না?"

"যুগটাও এখন অন্যরকম। বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। ১৯৮৮তে তখনকার প্রেসিডেন্ট গায়ুম ভারত ছাড়াও আশেপাশের নানা দেশের সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা কেউই এগিয়ে আসেনি, অনেকে হয়তো উত্তরও দেয়নি। আমরা কিন্তু আমেরিকাকে পর্যন্ত জানিয়ে রেখেছিলাম, 'ভাই আমরা কিন্তু যাচ্ছি!' ওরা বলল, ঠিক আছে তোমরা যাও, আমরাও আছি কাছে। কিন্তু এখন তো সম্পূর্ণ অন্যরকম খেলা!", বলছিলেন প্রাক্তন ওই কূটনীতিক।

চীনের সাথে মালদ্বীপের ঘনিষ্ঠতা

এদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের আর একটা বড় ভরসার জায়গা চীনের সমর্থন - মাত্র বছরছয়েক আগেও মালদ্বীপে যাদের দূতাবাস পর্যন্ত ছিল না।

স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স বিশেষজ্ঞ কমোডোর উদয় ভাস্করের বলছেন, "চীনা কার্ড খেলেই কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন এতটা বেপরোয়া পদক্ষেপ নিতে পারছেন।"

"চীন যেভাবে মালদ্বীপে টাকাপয়সা ছড়াচ্ছে, সেটা ভারতীয় মডেলের চেয়ে একেবারে আলাদা - এবং ভারত এটাও বুঝতে পারছে মালদ্বীপের মতো দেশে গণতন্ত্রের চর্চা কতটা কঠিন", বলছিলেন তিনি।

চীনের সরকারি মিডিয়া গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তেও এদিন ভারতকে মালদ্বীপে সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে।

তবে এর পরেও ভারতীয় সেনা মালদ্বীপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে - তবে সেটা সেদেশে থাকা কয়েক লক্ষ ভারতীয়কে উদ্ধার করার দরকার পড়লে, তবেই। - বিবিসি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়