শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৯:২১ সকাল
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৯:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জরুরি অবস্থা চলমান রাখতেই মালদ্বীপের আইনে সংশোধনী?

ডেস্ক রিপোর্ট : নির্বাহী ক্ষমতার বলে জারি করা জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত আইনকে আরও কঠোর করেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য সান জানিয়েছে, এজন্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। আনীত সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরি অবস্থা চলাকালীন গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকার সীমিত করা হয়েছে।  গ্রেফতারের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা প্রয়োগের পথ। রুদ্ধ করা হয়েছে জামিন পাওয়ার অধিকার। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বিরোধী দলীয় রাজনীতিকদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গ্রেফতার কিংবা আটক অবস্থায় রেখে বিরোধী-শূন্য সংসদে এই অনুমোদন নিশ্চিত করতেই এমন সংশোধনী এনেছেন প্রেসিডেন্ট। দ্য হিন্দুর এক খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের তৎপরতায় এরইমধ্যে বিরোধীদের মনে ব্যাপক শঙ্কা ও ভীতি তৈরি হয়েছে। এমন বাস্তবতায়, জরুরি অবস্থার স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া একটি ঐতিহাসিক আদেশকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম মুয়াজ আলি  জানান, সংবিধানের ২৫৩ অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে সোমবার থেকে আগামী ১৫ দিনের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট। রাষ্ট্রপ্রধানের ভাষ্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নির্বাহী ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা ছিল। প্রেসিডেন্টের দাবি, সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়িত হলে মালদ্বীপের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্বের আশঙ্কা ছিল। ব্যহত হতে পারত  জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ। জরুরি অবস্থা জারির পর মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আইনে কঠোরতা আনা হয়।

সংশোধিত জরুরি আইন অনুযায়ী গ্রেফতারকৃতদের তাৎক্ষণিকভাবে আটকের কারণ জানানোর আইনি বাধ্যবাধকতা থাকছে না। গ্রেফতারকৃতকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটকের কারণ সম্বলিত চিঠি দেওয়ারও দরকার পড়বে না আর। উঠে যাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে  আটকের কারণ ব্যাখ্যার বাধ্যবাধকতা । শর্তহীন ও শর্তযুক্ত জামিন অথবা মুক্তি দেওয়ার  বিচারিক কর্তৃত্বও খর্ব করা হয়েছে এতে। এখন থেকে বিচারক আর এই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এমন কঠোর আইনের নেপথ্যে  বিরোধী দমনের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা চলমান রাখার উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছে বিরোধীরা।

মালদ্বীপের সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী জরুরি আইন জারির  ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা পার্লামেন্টে অনুমোদিত হওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংসদের অনুমোদন না পেলে স্বাভাবিক নিয়েমেই জরুরি অবস্থা বাতিল হয়ে যায়। সমালোচকরা বলছেন, জরুরি অবস্থায় পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতেই বিরোধী দমনের প্রচেষ্টায় আইনে কঠোরতা আনা হয়েছে। নিউ ইয়কর্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিরোধী দলীয় সাংসদরা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১২ বিরোধী সদস্য পুনর্বহাল হয়েছেন। বিরোধীরাই এখন মালদ্বীপের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই তাদের নির্যাতন ও বন্দি করে রাখার প্রচেষ্টা নিয়েছে সরকার। দ্য হিন্দুকে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসনু সৌদ বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্টের ডিক্রির মধ্য দিয়ে জারি করা জরুরি অবস্থা সংসদের অনুমোদন না পেলে জরুরি বিধি আপনাআপনিই প্রত্যাহার হয়ে যাবে। এ কারণেই আজ বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের গ্রেফতার করতে পারেন তিনি’।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বিরোধী দলের ১২ সাংসদ পুর্নবহাল হওয়ায় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর শঙ্কায় পড়েছে আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সরকার। বাতিল হয়েছে সোমবারের প্রথম অধিবেশন।  পুনর্বহালের নির্দেশপ্রাপ্ত ১২ আইন প্রণেতার দুই জনকে গতকাল আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে সংসদে জরুরি অবস্থার বৈধতা নিতে গ্রেফতার-আটকের বাড়াবাড়ি শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মালে থেকে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য ও আইনজীবী আলী হুসেন হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, বিরোধী দলের সাংসদদের যেকোনও সময়ে গ্রেফতার করা হতে পারে। সামরিক বাহিনীর পার্লামেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্ট ভবন ঘিরে ফেলামার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে প্রেসিডেন্টের যেকোনও আদেশ মানতে প্রস্তুত রয়েছে তারা।

গত ০১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বিরোধী ৯ নেতার বিরুদ্ধে আনা সরকারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। এছাড়া গত বছর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বরখাস্ত হওয়া বিরোধীদলের ১২ সংসদ সদস্যকেও পুনর্বহাল করার আদেশ দেওয়া হয়। এসব আদেশ বাস্তবায়ন হলে প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন অভিশংসিত হতে পারেন বলে গুঞ্জনের মুখে রবিবার বাতিল করা হয় সোমবারের ঘোষিত পার্লামেন্ট অধিবেশন। সংসদে বিরোধীদের অনাস্থার এক পর্যায়ে পার্লামেন্ট ভবনকে নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্টের পক্ষে অবস্থান নেয় তারা। এক পর্যায়ে একইদিনে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা আসে। মঙ্গলবার সেই আইনে কঠোরতা আনা হয়।

১৫ দিনের জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়বে কিনা তা নিয়ে এরইমধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছে  যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা যেন স্থায়ী রুপ না নেয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এক বিবৃতিতে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক দিনুশিকা দিসানায়েক বলেন, ‘মালদ্বীপের কর্তৃপক্ষ এর আগেও বাকস্বাধীনতা উপর আঘাত এনেছে। বিগত কয়েকবছরে প্রতিপক্ষকে চুপ রাখতে বেশ কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তারা।' এবার জারিকৃত জরুরি অবস্থাকে যেন নিপীড়নের লাইসেন্স না বানানো হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন তিনি। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়