রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধা: একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন গাইবান্ধার সাদুলাপুর উপজেলার ইসবপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মফছার আলী (৭৭)। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। দেশ রক্ষা বিভাগের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রের এমন প্রমাণ রয়েছে। ওই প্রমাণ পত্রে স্বাক্ষর রয়েছে তৎকালীন স্বশস্ত্র বাহিনীর মহানায়ক মহাম্মুদ আতাউল গণি ওসমানীর। মফছার আলী ১১নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের অবদানের উল্লেখ আছে।
তিনি ১৭/০৮/১৯৪৫ইং তারিখে জন্ম গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ২০ আগষ্ট তিনি প্রথম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে তিনি কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ৩০৩ রাইফেল চালনা ও গেরিলা যুদ্ধের কলা কৌশল প্রশিক্ষণে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে করাকালীন সময়ে কুড়িগ্রাম, চিলমারী ও নাগেশ্বরী এলাকায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
মফছার আলী জানান, যুদ্ধকালীন সময়ে তার অধিনায়ক ছিলেন উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান সেকসন/কোম্পানী/প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন যথাক্রমে হাবিলদার কাওছার, আবুল কাশেম ও আব্দুল মান্নান। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি গাইবান্ধার ৩০৩ রাইফেল মেলিশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র সমর্পন করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তীকালে অনেক সরকারের পরিবর্তন ঘটে। নতুন সরকারের আগমন ঘটে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই ও তালিক প্রণয়নের আদেশ-নির্দেশ পাওয়া যায়। কিন্তু তা দলীয় প্রভাব মুক্ত ছিল না। এতে যাচাই-বাছাই কমিটিতে স্বজনপ্রীতি, অন্যায় সুবিধা অর্জন, উৎকোচ বাণিজ্য, প্রতিহিংসা ইত্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটে। অসংখ্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ পড়ে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান পায় অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম। এতে যাচাই-বাছাই কমিটির প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের ভাগ্যের চাকাও বদলে যায়। অমুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি সুযোগ সুবিধা অব্যাহত থাকে। আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বঞ্চনার শিকার হয়। তাদের নাম তালিকাভূক্ত হয়নি। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এরা এখনো উপেক্ষিত। এমন পরিস্থিতির শিকার মফছার আলী (৭৭) বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নির্দেশিকার বিধান মতে যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে অনেক আবেদন নিবেদন করেও উপকৃত হয়নি। হতাশাগ্রস্থ এই মুক্তিযোদ্ধা এখন ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে। ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে জীবন সংসার চালাচ্ছে। পথে পথে ঘুরছে ভিক্ষার থালা হাতে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পৈত্রিক সূত্রে মাত্র তিন বিঘা আবদি জমি থাকলেও তিনি বিভিন্ন সময়ে এই তিনি বিঘা জমিও বিক্রি করে বর্তমানে ভূমিহীন। অনাহার অর্ধাহারে তার পরিবারের জীবন কাটাতে হচ্ছে। স্ত্রী গোলাপী বিনা চিকিৎসায় ২৫ বছর আগে মারা গেছে। দুই ছেলে শরিফুল (২৪) ও শফিকুল (২৭ কর্মহীন বেকার। এরা রাজধানী ঢাকায় রিকসা-ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিবাহিতা দুই কন্যা যথাক্রমে মুক্তি ও জ্যোস্না পরের বাড়িতে গতর খাটে। তাদের স্বামীও কর্মহীন বেকার। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র প্রদর্শন করে বৃদ্ধ মফছার ভিক্ষার হাত পাতিয়ে চলতে হচ্ছে। বয়স্ক ভাতা, ভিডিডি কর্মসূচীর তালিকায় নাম নেইসহ সরকারি অন্যান্য সুযোগও নাগালের বাইরে। ঢাকায় অবস্থানরত পুত্রের গোয়াল ঘরে বসবাস করছেন মফছার আলী। নিজ বাড়ি ঘর নেই। স্বাধীনতা অর্জনের যার অবদান আছে। প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিও আছে।
তার ভাগ্যে এমন দুর্দশার প্রতি কেউ নজর দিচ্ছে না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা মফছার আলী বলেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিহিংসাকে দায়ী করে তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল চেয়ারম্যান বরাবরে একটি আপীর আবেদন পাঠালেও তা এখনো অকার্যকর। দেখার কেউ নেই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আপনার মতামত লিখুন :