নিজস্ব প্রতিবেদক : ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য ঠেকাতে দলের তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব সাংগঠনিক জেলা-উপজেলায় তিন দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার থেকে ডাকযোগে সাংগঠনিক জেলা-উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এসব নির্দেশনা উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর রয়েছে ওই চিঠিতে।
চিঠিতে উল্লেখিত চার দফা নির্দেশনার প্রথমটিতে বলা হয়েছে; সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে তৃণমূলকে সতর্ক করা হলেও বিষয়টি চিঠিতে সরাসরি লেখা হয়নি।
একই চিঠিতে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, সে পরামর্শও রয়েছে। বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য কমিটি গঠন করতে হবে। নির্বাচনের পোলিং এজেন্টদের বাছাই করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া চলমান সদস্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার করতে বলা হয়েছে।
এসব নির্দেশনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি যে বিপুল মানুষ নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে, তা করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি আছে। আওয়ামী লীগও রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করতে চায়। বিশেষ করে ঢাকাসহ বড় মহানগরগুলোতে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনের পাশাপাশি তাঁরাও দলীয়ভাবে সতর্ক অবস্থান নেবেন। কেউ নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্যই তাঁদের এই সতর্ক অবস্থান। এ জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতি সভা ডাকা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হবেÑএটা ধরেই সবকিছু এগোচ্ছে। সর্বশেষ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় দেওয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যে সেই মানসিক প্রস্তুতির সুর আছে। আবার তাঁর মূল ভাবনায় যে আগামী নির্বাচন, সেটিও বোঝা গেছে। এ জন্যই তিনি ছয় শর্ত দিয়েছেন। রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি কিছু একটা করে ফেলবেÑএমন দুশ্চিন্তা সরকারের নেই। তবে অহিংস বা সহিংসÑযেকোনো পরিস্থিতিতেই বিএনপিকে মাঠে নামতে দেবে না সরকার। কারণ, এটা হলে তারা মানুষের সহানুভূতি পাবে। নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙা হয়ে যাবে। তাই দুর্বল বিএনপিকে চাঙা করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, শুধু খালেদা জিয়ার মামলার রায় এবং বিএনপিকে ঠেকানোতে ব্যস্ত থাকলে নির্বাচন প্রস্তুতিতে ভাটা পড়ে যাবে। দলীয় প্রধান ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ১৫টি দল সারা দেশে যেভাবে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন, এটার সুফল পেতে হলে তৃণমূল পর্যায়েও প্রস্তুতি দরকার। এ জন্য নির্বাচনসংক্রান্ত বাকি তিনটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আগামী নির্বাচনের জন্য প্রতিটি কেন্দ্র কমিটি গঠন করার নির্দেশনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এই কমিটির মূল কাজ হবে নিজ নিজ কেন্দ্র পাহারা দেওয়া এবং ভোটের দিন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। ইতিমধ্যে কোনো কোনো এলাকায় সাংসদেরা নিজেদের মতো করে কমিটি গঠন করা শুরু করেছেন। এতে করে কিছুটা কোন্দল-দ্বন্দ্বের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, বর্তমান সাংসদদের সবাই যে আগামীতে মনোনয়ন পাবেন, এর নিশ্চয়তা নেই। ফলে দলীয়ভাবে কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে এই নির্দেশনা।
এর আগে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবারও তৃণমূল বাছাই করে দিলে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সদস্য সংগ্রহের বিষয়টি সব সময় দলীয় নেতারা গতানুগতিক কাজ হিসেবে বিবেচনা করে। এ জন্য কখনোই লক্ষ্য পূরণ হয় না। এবার নির্বাচন সামনে রেখে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে এর মাধ্যমে দলে গতিশীলতা আসে। সারা দেশে সাংগঠনিক সফরের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের যে দল গঠন করা হয়েছে, তাদেরও অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে সদস্য সংগ্রহ জোরদার করা। গত বছরের মে মাসে গণভবন থেকে পুরোনো সদস্যদের পদ নবায়ন এবং নতুনদের সদস্য করার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেভাবে পুলিশকে পিটিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন, তাতে সতর্ক থাকা ছাড়া তো উপায় নেই। সারা দেশে এভাবে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে।
আপনার মতামত লিখুন :