কাকন রেজা : “ফিলিপাইনে পর্যটক আকৃষ্ট করতে ‘৪২ জন কুমারী’ অর্পণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে।” একটি জাতীয় দৈনিকের খবরের শুরু হয়েছে এভাবে। ফিলিপিনী এই প্রেসিডেন্ট নারীদের নিয়ে এর আগেও অনেক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। এবারের উল্লেখিত মন্তব্যটি করেছেন একেবারে আমাদের কানের পাশে, ভারতের নয়াদিল্লিতে ভারতীয় আরফিলিপিনো ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক সভায়। এর আগেও মুসলিম অধ্যুষিত দ্বীপ মিন্দানাওতে অভিযানে দুতের্তেতার সেনাদের অনুমতি দিয়েছিলেন জনপ্রতি তিনজন নারীকে ধর্ষণ করার।
প্রকাশ্যে এমন ঘোষণা, তাও আবার ধর্ষণের! তারপরেও কিন্তু খুব একটা কথা হয়নি এনিয়ে। কোনও নারী বা নারীবাদী সংগঠন বা ব্যক্তি পর্যায়ের কেউ এ বিষয়ে উঁচু গলায় কিছু বলেছেন এমনটা জানানেই।
কেন জানি দুতের্তে’র এমন কথায় নারীরা খুব কিছু মনে করেননা, করলে এসব কথার ভয়াবহ ধরণের প্রতিবাদ হতো। অবশ্য প্রতিবাদ যে হয়নি তা বলা যাবেনা, হয়েছে। দুতের্তে যখন দাভাও দ্বীপের মেয়র ছিলেন। তখন কারাগারে সংঘটিত এক দাঙ্গায় একজন খ্রিস্টান মিশনারি খুন হয়ে ছিলেন। হাজতিরা গ্যাংরেপের মাধ্যমে খুন করে তাকে।
এ সময় তিনি বলে ছিলেন, ‘দ্বীপের মেয়র হিসাবে হাজতিদের সারির প্রথমে আমার থাকা উচিত ছিল’। সে সময় তার প্রতিবাদ হয়েছিল, তিনিও ক্ষমা চেয়ে ছিলেন। কিন্তু প্রতিবাদটি ছিল সেই ‘রেপড’ নারী ‘খ্রিস্টান মিশনারি’ বলে, ‘নারী’ বলে নয়। অবশ্য ’৪২ জনকুমারী’ অর্পনের প্রত্যাশাজনিত বক্তব্যে ফিলিপিনো একটি নারী সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাও শুধু মর্যাদার প্রশ্নে! মজার বিষয় খোদ ভারতের নারীবাদীদের এ নিয়ে কোন বক্তব্য চোখে পড়েনি। এমনকী কলকাতার ‘ভয়াবহ’ রকমের নারীবাদীরা টুশব্দটি এখন পর্যন্ত করেননি, ভারতের আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশের তসলিমা নাসরিনও চুপ।
আমাদের দেশের অনেক নারীবাদীরা বিভিন্ন সময়ে নিজ ও অন্য দেশের নানা উক্তির ‘ভয়াবহ’ রকমের প্রতিবাদ জানান। তাদের চোখে কী ‘দুতের্তে’ পড়েননি! নাকী তারা ‘সংরক্ষিত’ রাখছেন, সময় সুযোগে প্রকাশিত হবেন বলে। অবশ্য মিন্দা নাওতে সেনাদের প্রতি ধর্ষণ আজ্ঞার প্রতিবাদ না করলেও আমাদের দেশের সেনাদের বিরুদ্ধে কিন্তু প্রতিবাদে সরব অনেক নারীবাদীরা। সম্প্রতি পার্বত্য অঞ্চলে দুই পাহাড়ি তরুণীর ধর্ষণকান্ড নিয়েতো রীতিমত হুলুস্থুল কারবার। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যম রীতিমত অস্থির করে তোলা হয়েছে। অবশ্য এ চেষ্টা নতুন নয়, পার্বত্য অঞ্চলে নানা সময়েই পাহাড়ি ও বাংলাভাষী প্রশ্নে সেনাবাহিনীকে যোগ করে বিতর্কের প্রয়াস আগেও লক্ষ্য করা গেছে। অথচ এ অংশটির কাছে ভালো কিছু করে ধন্যবাদ পায়নি কোন কালেও। এমনকী পাহাড় ধ্বসের প্রক্রিয়ায় জীবন ত্যাগ করেও সেনাবাহিনীর কপালে জোটেনি প্রশংসার ছিটে ফোঁটা।
যাহোক, ‘তিতা’ সত্য থাক, যা বলতে চেয়েছিলাম তাতে আসি। কেন জানি মনে হচ্ছে পৃথিবীর সময় কাল বোধ হয় শেষের দিকে। প্রতিটি ধর্মেই এমন ‘শেষে’র কথা বলা আছে। ইসলামে সেই শেষকে বলা হয়েছে ‘কেয়ামত’। ইসলাম কেয়ামতের কিছু লক্ষণের কথাও বলেছে। সে বর্ণনায় রয়েছে শেষ জামানার শাসকদের প্রকৃতিও। চারিদিকে তাকালে এখন সেই বর্ণনার পূর্বাভাসই পরিস্ফুটন্মুখ বলে মনে হয়। ‘সোনার টয়লেট’, ‘৪২ জনকুমারী’ ধরণের বিষয়গুলো এমন পূর্বাভাসের শংকাকে আরো জাগিয়ে তোলে; চারিদিকে জনগণকে উপেক্ষা করার অসম্ভবের প্রয়াস ক্রমান্বয়ে আতংকিত করে তোলে।
ফুটনোট : মানুষকে যারা অবজ্ঞা করেন, তাদের মানসিক সুস্থতা প্রশ্নের সম্মুখিন। ‘মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব’, ‘মানুষ অমৃতের সন্তান’, সে নারীই হোক কিংবা পুরুষ।
পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : গাজী খায়রুল আলম
আপনার মতামত লিখুন :