শিরোনাম
◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি

প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৩৭ দুপুর
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:৩৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা

ডেস্ক রিপোর্ট : নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার তরেটকীল গ্রামের মো. আলমগীরের পুত্র মো. মাসুম মিয়া। বয়স বড়জোর ১২ ছুঁই ছুঁই। চোখেমুখে বিষণ্নতার ছাপ। যে বয়সে বই খাতা নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে রাজধানীর ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এলাকার একটি ওয়ার্কশপে চশমা ছাড়াই ওয়েল্ডিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে এ শিশু। চোখগুলো এমনভাবে লাল হয়েছে, যেন তাকানোই কষ্টকর। ওয়েল্ডিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করায় মুখমণ্ডলের চামড়া উঠে গেছে। চোখের কর্নিয়ায়ও ঘা হওয়ার মতো অবস্থা। শুধু মাসুম নয়, তার মতো বহু শিশু-কিশোর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ওয়ার্কশপ ও গাড়ির গ্যারেজসহ বিভিন্ন কারখানায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অল্প বয়সে বার্ধক্যসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আরো নজরদারি বাড়াতে হবে। নিয়মিত অভিযান চালালে ও জরিমানা করলে কেউ আর শিশুদের চাকরি দিবে না। ফলে অনেকটা কমে আসবে শিশুশ্রম।

সংশ্লিষ্ট তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের শিশু আইনে ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ২০০৬ সালের শিশু সনদে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্রম নিষিদ্ধ ও শিশুশ্রম আইনে কারখানায় ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গভর্নমেন্ট ন্যাশনাল চাইল্ড সার্ভে (২০০৩) অনুযায়ী ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৩২ লাখ শিশু বাংলাদেশে কাজ করে। কারখানা আইনে ১৬ বছরের নিচে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রাজধানীর ফার্মগেট, বিজয়নগর, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপে লোহার গেট ও স্টিলের আলমিরা তৈরিসহ নানা ধরনের ভারী কাজে চশমা ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে শিশুরা। আইন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তবে তা প্রয়োগ নেই। শিশুশ্রম বন্ধে অভিযান না থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের বিচরণ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও নামমাত্র টাকায় শিশুদের চাকরি দিচ্ছে। আবার কেউ বেতন ছাড়াই শুধু থাকা-খাওয়ার সুবাদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে এসব কারখানায়। ওয়ার্কশপের ভয়াবহ শব্দদূষণে অনেক শিশু শ্রবণশক্তিও হারাতে বসেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, শুধু ওয়ার্কশপেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান কেউ অভাবের তাড়নায়, আবার কেউ স্কুলে যেতে অনীহার কারণে এসব কাজে যুক্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের অত্যধিক মাত্রার কারণে অধিকাংশ শ্রমিক কানে কম শোনে। চশমা ছাড়া ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করায় চোখের নানা রোগে আক্রান্ত এসব শিশু। চোখের কর্নিয়ায় অনেক শিশুর ঘা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজের কারণে অধিকাংশ শিশু জন্ডিসে আক্রান্ত। ক্ষতিকর রশ্মির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় চোখের। আক্রান্ত শিশু ও অন্য শ্রমিকরা এমন তথ্য জানিয়েছে।

ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি ওয়ার্কশপে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে চাঁদপুরের শাহরস্তি উপজেলার আয়নতালী গ্রামের আব্দুল মালেকের পুত্র মো. ইব্রাহিম খলিল (১৫), নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার গাছলাবাদ গ্রামের আব্দুল লতিফের পুত্র পিয়াস (১৪), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভাউ গ্রামের আব্দুল মতিনের পুত্র সাকিব (১৪), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার উত্তর হানুবাইল গ্রামের মো. শাহাদাত হোসেনের পুত্র মো. জসিম উদ্দিন (১২)। তারা জানায়, দেড় দুই বছর ধরে তারা কাজ করলেও এখনো কোনো বেতন পায় না। পায় কেবল থাকা-খাওয়ার সুয়োগ।

তারা জানায়, ওয়েল্ডিং, স্টিল কারখানা ও গাড়ি মেরামতের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার কারণে চোখ জ্বালাপোড়া করে। প্রায় সময় চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

একই সমস্যার কথা জানায় বিজয়নগর এলাকার একটি গাড়ি মেরামতের কারখানায় কর্মরত কুমিল্লার মনোহরদী উপজেলার জাহাঙ্গীরের পুত্র সুমন (১৬), লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ গ্রামের মিন্টু দেওয়ানের পুত্র সাকিব (১৩) ও নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার ওয়াশেকপুর গ্রামের শহীদুল্লাহর পুত্র মো. শামীম (১৪)। ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়